কয়েকজনের অনিয়মে পুঁজিবাজার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে: বিএসইসি কমিশনার
নিজস্ব প্রতিবেদক: একজন বা কয়েকজন লোকের অনিয়মের কারণে পুঁজিবাজার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মন্তব্য করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার মোঃ আব্দুল হালিম বলেছেন, আমাদের এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
সোমবার (৪ জুলাই) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃক আয়োজিত ডিএসই’র ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও কমপ্লায়েন্স অফিসারদের জন্য “Effective Compliance of Securities Related Laws” শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
বিএসইসি কমিশনার বলেন, ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সুনাম হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনারা বিনিয়োগকারীদের ভালো সেবা দিতে পারেন তবে পুঁজিবাজার বড় হবে। আপনাদের সহযোগিতা করার জন্য কমিশন সবসময় প্রস্তুত। আর আপনাদের সব সময় কমপ্লায়েন্স পালন করতে হবে। আর ব্রোকারেজ হাউজের কমপ্লায়েন্স পরিপালন করার হার অনুযায়ী রেটিং করতে চাই। এতে স্টক এক্সচেঞ্জ আমাদের সহযোগিতা করতে পারে। যাতে বিনিয়োগকারীগন একটি সঠিক দিক নির্দেশনা পায়।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের কনসেপ্ট এর মূল কথা হলো পরিসেবাগুলো দ্রুত প্রদান। শুধু বিএসইসি নয় সরকারের সব সংস্থাকে দ্রুত সেবা দিতে হবে। ডিজিটাল বুথ ও ব্রাঞ্চ খোলার ক্ষেত্রে যে আইন এটি অতি সম্প্রতি করা হয়েছে। সেই আলোকে এগুলো অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুমোদন না দেয়া হয় তবে আপনারা অভিযোগ করতে পারেন। আমরা চাই আপনারা সবাই পুঁজিবাজার সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় আইন সম্পর্কে অবগত থাকেন। এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে সকল আইন সঠিকভাবে পরিপালনের জন্য আপনাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার চাই।
ডিএসই টাওয়ার এর মাল্টিপারপাস হলে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় ডিএসই’র চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুসুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম।
কর্মশালায় এছাড়াও বক্তব্য প্রদান করেন বিএসইসি’র এসআরআই ডিপার্টমেন্টের পরিচালক মোঃ মনসুর রহমান, ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও ও ডিএসই’র প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ। উক্ত কর্মশালার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিএসই’র মনিটরিং অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স ডিপার্টমেন্টের উপ-মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভূইয়া, এসিএস।
বিশেষ অতিথি বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে হলে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। যদি আপনারা বিনিয়োগকারীদের প্রতি যত্ন নেন তবে আপনাদের ব্যবসা বৃদ্ধি পাবে। আপনাদের মতামত কমিশনের কাছে লিখিত দিবেন। যদি আপনাদের মতামতে যথেষ্ট যুক্তি থাকে তবে কমিশন বিবেচনা করবে। আপনাদের ব্যবসা বৃদ্ধি করার জন্য কমপ্লায়েন্স মেনে চলেন। আর এটি করা হলে বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা ফিরে আসবে। আর এতে আপনাদের ব্যবসা বৃদ্ধি পাবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূইয়া বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ও পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বহুমুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং করছে। পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আজকের এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করেছে। বর্তমানে পুঁজিবাজারের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কমপ্লায়েন্স। কমপ্লায়েন্সের বিষয়গুলো পরিবর্তনশীল। তাই এ বিষয়ের নিয়মকানুন ও পরিবর্তন সম্পর্কে সব সময় লক্ষ্য রাখা জরুরী। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষনের জন্যই এসকল কর্মকান্ড পরিচালিত হয়।
তিনি আরও বলেন, বাজারে শৃঙ্খলা ধরে রাখতে প্রধান নির্বাহীদের ভূমিকা অপরিসীম। আপনাদের অনেকেই দীর্ঘদিন যাবত পুঁজিবাজারের সাথে জড়িত। আপনাদের রয়েছে বহুমুখি অভিজ্ঞতা। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আপনার কর্মক্ষেত্র অর্থাৎ আপনার হাউজকে কিভাবে আরও উন্নত করা যায় তার দায় দায়িত্ব আপনাদের। আপনাদের নিজ নিজ হাউজে যাতে কোন অনিয়ম না দেখা যায় এজন্য আপনাদের সকলকে আরও বেশি সচেতন থাকতে হবে। আপনাদের নিজেদের স্বার্থের উর্দ্ধে উঠে পুঁজিবাজারের স্বার্থে কাজ করতে হবে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ প্রস্তুত, আপনার যেকোন সহযোগীতার জন্য। আসুন আমরা ঐক্যবদ্দভাবে যার যার অবস্থান থেকে দেশ ও জাতিকে একটি পরিচ্ছন্ন পুঁজিবাজার উপহার দেই।
ডিএসই’র সিআরও খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ বলেন, পুঁজিবাজারে দুই ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। একটি সিস্টেমেটিক রিস্ক আর অপরটি হলো আনসিস্টেমেটিক রিস্ক। সিস্টেমেটিক রিস্ক হলো সিকিউরিটিজ আইন বিষয়ক। আমাদের মনিটরিং সিস্টেম সক্রিয় থাকার কারণে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ। আনসিস্টেমেটিক রিস্ক আমাদের খুবই সমস্যা করছে। আমাদের কাছে এমন কোন মাধ্যমে নেই যার মাধ্যমে আনসিস্টেমিক রিস্ক এড়াতে যায়। কিন্তু আমাদের কাছে এমন কোন টুলস নেই আনসিস্টেমিক রিস্ককে প্রতিরোধ করতে পারি। কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজ যে কাজ করেছে যা সম্পূর্ণ আনসিস্টেমেটিক রিস্ক আমরা কোন আইন দিয়ে এটি ধরতে পারছি না। যা নিয়ে আমরা সবাই চিন্তিত।
ডিবিএ এর প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, একটি ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পুঁজিবাজার থেকে সকল কিছু সম্পর্কে জানতে হয়। একই সাথে তাকে পুঁজিবাজার সম্পর্কিত সকল প্রতিষ্ঠান যেমন বিএসইসি, ডিএসই, সিডিবিএল এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে হয়। এ কাজগুলো করতে অনেক দক্ষতার প্রয়োজন। আর এ জন্য আজকে যে ট্রেডিং হয়েছে তা আপনাদের জন্য অত্যন্ত সময়োপযোগী। আশা করি এ ধরনের প্রোগ্রাম আরও অনেক অনুষ্ঠিত হবে।
বিএসইসি’র পরিচালক মনসুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারকে উন্নয়নের জন্য প্রথমেই আমাদের বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য আপনাদের সাথে নিয়ে কমিশন এ কাজটি করার চেষ্টা করছে। বিনিয়োগকারীদের টাকা এবং সিকিউরিটিজের নিরাপত্তা বিধান করা না যায় তাহলে পুঁজিবাজারের প্রতি তাদের আস্থা কখনো ফিরে আসবে না। অবশেষে বিনিয়োগকারীদের টাকা ও সিকিউরিটিজের নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে উনি উনার বক্তব্য শেষ করেন।
ডিএসই’র চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুসুর রহমান বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ও পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আজকের এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। এই কর্মশালার বিষয়বস্তু অত্যন্ত সময়োপযোগী। সিকিউরিটিজ হাউজকে পরিচালনা করতে আইনকানুনগুলো কিভাবে প্রতিপালন করা যায় সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রচুর আইনকানুন রয়েছে। কিন্তু সর্বক্ষেত্রে আইনকানুন পরিপালন কিছুটা শিথিল। আইনকানুন ঠিকমতো পরিপালন না করলে পুঁজিবাজারে সু-শাসন নিশ্চিত হবে না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বয়স ৫০ বছর। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগ পর্যন্ত ৩৯ বছর দেশ পরিচালনার তেমন কোন ভিশন-মিশন ছিলোনা। ২০০৯ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে তখনই বিভিন্ন ভিশন-মিশন তৈরি করেছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন আজ বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশ সামাজিক উন্নয়নে এগিয়ে থাকলেও আর্থিক খাতে অনেক পিছিয়ে আছে। এই খাতের উন্নয়ন করতে না পারলে দেশের টেকসই উন্নয়ন করা কঠিন হয়ে পড়বে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিগত এক বছরে অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছে। আমাদের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন বেড়েছে, যা নিঃসন্দেহে উন্নয়নের নির্দেশক। কিন্তু সার্বিক পুঁজিবাজার নিয়ে গর্ব করার মত উচ্চতায় পৌঁছতে আরও সময় লাগবে। পাকিস্তান সব সূচকেই আমাদের চেয়ে পিছিয়ে। তবে তারা ইমার্জিং মার্কেটে আছে, আর আমরা ফ্রন্টিয়ার মার্কেটে আছি। তাই আমাদের অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে। পুঁজিবাজারের রেগুলেটর ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাদের সহযোগিতায় এবং ডিএসই’র প্রচেষ্টায় অচিরেই বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ফ্রন্টিয়ার থেকে ইমার্জিং মার্কেটের দিকে ধাবিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।