শেয়ার বাজার পর্যালাচনা
এক সপ্তাহে মূলধন উধাও সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা
শাহ আলম নূর : অর্থনৈতিক অস্থিরতা, বৈশ্বিক সংকটসহ নানা কারণে অস্থির দেশের শেয়ারবাজার। প্রতিদিনই বাজারে পতন হচ্ছে। এই পতনের ধারাবাহিকতায় গত এক সপ্তাহে শেয়ারবাজার থেকে বাজার মূলধন হারিয়েছে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। শুধু তাই নয়; আলোচ্য সময়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সবধরনের সূচকেরই পতন হয়েছে।
বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ঈদুল আজহার ছুটির পর গত সাত কার্যদিবসে একটানা দরপতন হয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২২৮ পয়েন্ট কমেছে। এতে ডিএসইএক্স সূচকটি নেমে এসেছে ৬ হাজার ১৩৯ পয়েন্টে। আর ছয় কার্যদিবসের ব্যবধানে লেনদেন ১২৪ কোটি টাকা কমে নেমে এসেছে ৬৬৫ কোটি টাকায়।
সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য অনুযায়ী, ঈদের ছুটির পর টানা পতনের মধ্যে প্রায় ছয় হাজার বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স বা বিও হিসাব খালি করেছেন।
এদিকে গত ১ জুন থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত শেয়ারবাজারে ৩৩ দিন লেনদেন হয়েছে। এই ৩৩ দিনের মধ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২০ দিনই কমেছে। বেড়েছে ১৩ দিন।
বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত সপ্তাহে দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের প্রতি কার্যদিবসেই দরপতন হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি কমেছে মূল্যসূচকও। এতে এক সপ্তাহেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমে গেছে। বাজার মূলধন কমার পাশাপাশি গেলো সপ্তাহে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ তিন হাজার ১১৯ কোটি টাকা, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল পাঁচ লাখ ১৫ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১২ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে দুই হাজার ৮১২ কোটি টাকা। এতে দুই সপ্তাহের টানা পতনে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১৫ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা।
বাজার মূলধন বাড়া বা কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে বা কমেছে। অর্থাৎ বাজার মূলধন বাড়লে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। একইভাবে বাজার মূলধন কমলে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ কমে যায়।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া মাত্র ৪৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বেড়েছে। দাম কমেছে ৩৩১টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১১টির কোম্পানির দাম।
এর ফলে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৯৭ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ৪২ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট । ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ৭৩ দশমিক শূন্য ২ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ১৯ দশমিক ৯২ পয়েন্ট। শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচকও কমেছে। গত সপ্তাহে এই সূচকটি কমেছে ৩২ দশমিক ২৭ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১০ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট।
গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫৫৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৬৫৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১০০ কোটি এক লাখ টাকা।
এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৭৭০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় এক হাজার ৯৬২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। সেই হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে ৮০৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। মোট লেনদেন বাড়ার কারণ গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে দুই কার্যদিবস কম লেনদেন হয়েছিল।
আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অংকে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি বা বেক্সিমকোর শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৪৫ কোটি ৫৮ লাখ ৯৭ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ।
দ্বিতীয় স্থানে থাকা সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলসের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯৮ কোটি ১৯ লাখ ৪১ হাজার টাকা।
৭৫ কোটি ৪৯ লাখ ২৯ হাজার টাকা লেনদেন করে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।
লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশল, কেডিএস এক্সেসরিজ, ওরিয়ন ইনফিউশন, তিতাস গ্যাস, ফরচুন সুজ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশ এবং শাইনপুকুর সেরামিকস লিমিটেড।
/এসএ