১৪ বছরে দেশে রিজার্ভ বেড়েছে ২৩ গুন
শাহ আলম নূর : বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখনো ভালো আছে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার। বর্তমান সরকারের মেয়াদে দেশের রিজার্ভ’র পরিমান ৪০০০ কোটি ডলার। অর্থাৎ বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রিজার্ভ বেড়েছে ২৩ গুন।
স্বাধিনতার পর দেশে ৪০০০ কোটি ডলারের রিজার্ভ আগে কখনো ছিল না। বর্তমান সরকারের তিন মাসের মাথায় রিজার্ভ ৭০০ কোটি থেকে ১ হাজার কোটি ডলারে ওঠে। সেখান থেকে বছরে বছরে বেড়ে হলো ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করার কিছু নেই বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিশিষ্ট ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞ লুৎফুর রহমান বলেন এই মুহূর্তে আমাদের রিজার্ভের পরিমাণ ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা কিছুদিন আগে আরো বেশি ছিল। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যে কোন দেশের তুলনায় শক্ত অবস্থানে রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
বিএনপি-জামাত ইদানীং বাংলাদেশের ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ ‘খুব কমে গেছে’ বলে সরকারের দেদার সমালোচনা করছে। তাদের মতে সরকারের ব্যর্থতার কারণে দেশ নাকি অচিরেই শ্রীলংকার মতো দেউলিয়া হয়ে যাবে।
যদি আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী আমাদের রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলার হয়েও থাকে তবুও আমাদের প্রায় ৫ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য তা যথেষ্ট। একটা দেশের রিজার্ভে যদি আগামী ৩ থেকে ৪ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর ক্ষমতা থাকে তবে কোনো ভয় নেই বলে আমাদের অর্থনীতিবিদরা তো বটেই, এমনকি বিশ্বব্যাংক-আইএমএফরাও বলে থাকে।
তথ্যে দেখা যায় ২০০৭ সালে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার বিজার্ভ চিল সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। ২০০১ সালে তারা ক্ষমতায় আসার পর প্রথম বছর শেষে তাদের রিজার্ভ ছিল মাত্র পৌণে ২ বিলিয়ন ডলার। তখন যদি দেশ দেউলিয়া বা শ্রীলংকা না হয়ে থাকে তাহলে এখন তা হবে কেন। এখনতো বাংলাদেশের হাতে আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী ২০০২ সালের তুলনায় ১৯ গুণ বেশি এবং ২০০৭ সালের তুলনায় ৯ গুণ বেশি রিজার্ভ রয়েছে।
আর যদি বাংলাদেশ সরকারের হিসাব ধরি তাহলে বর্তমানে বাংলাদেশের হাতে আছে ২০০২ সালের তুলনায় ২৩ গুণ বেশি এবং ২০০৭ সালের তুলনায় ১১ গুণ বেশি রিজার্ভ।
প্রবাসীরা যেভাবে রেমিটেন্স বাড়াতে অবদান রেখে চলেছে তাতে প্রতি মাসে দেশের রিজার্ভ বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সামষ্টিক অর্থনীতিতে বিস্ময়কর সব রূপান্তর ঘটছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের ক্যাটাগরিতে উত্তরণের তিনটি পূর্বশর্ত পূরণ করেছে। ২০২৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ঘোষণা করবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার পথচলা শুরু হয়েছিল শূন্য থেকে। বৈদেশিক সাহায্য ও অনুদান দিয়ে সে সময় গড়ে ওঠে রিজার্ভ। শূন্য থেকে সেই মুদ্রার রিজার্ভ সর্বোচ্চ দাঁড়ায় ৩৩ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, রিজার্ভ ২০০৯ সালের তুলনায় এখন ছয় গুন বেড়েছে। গত ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৩ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার (তিন হাজার ৩৬৯ কোটি ডলার)। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার (তিন হাজার ১৩৫ কোটি ডলার)।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চলে এই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দিয়ে। স্বর্ণ, বৈদেশিক মুদ্রা ও ডলার— এই তিন ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রাখা হয় দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে। এই অর্থ বিভিন্ন দেশের বন্ড ও বিলে বিনিয়োগ করা হয়।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখনো ভালো আছে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার। এখন নাই নাই করেও রিজার্ভ চার হাজার কোটি ডলার।
/এসএ