ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজ তদন্ত: তথ্য চেয়েছে গঠিত কমিটি
নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে এসএমই প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজের আর্থিক প্রতিবেদনে অসঙ্গতি ও অন্যান্য অনিয়ম খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার অংশ হিসবে কোম্পানিটির কাছে বেশ কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে। এছাড়া দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কাছেও ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজের বিভিন্ন অসঙ্গতির তথ্য চেয়েছে বিএসইসির গঠিত তদন্ত কমিটি।
মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজ ও ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পৃথকভাবে তথ্য চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
কোম্পানিটির কাছে বিএসইসি যেসব তথ্য চেয়েছে সেগুলো হলো- কোম্পানির মেশিনারিজের বর্তমান অবস্থা এবং স্থিতি, কোম্পানিটির বর্তমান উৎপাদন অবস্থা, ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ও অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন, কোম্পানিটির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের সম্মিলিত ও এককভাবে শেয়ারধারণের তথ্য, ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোম্পানিটির কৌশলগত পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় নিথপত্র, কোম্পানিটির সকল মুলতুবি রাখা বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) নিয়মিত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের নথিপত্র এবং প্রাসঙ্গিক অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য। আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে এসব তথ্য কোম্পানিটিকে প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।
এছাড়া এসএমই প্ল্যাটফর্মে লেনদেন চালুর পর থেকে ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হলে, সে সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে ডিএসইকে প্রদান করতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত ২৪ জুলাই বিএসইসি ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজের বিরুদ্ধে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন— বিএসইসির উপ-পরিচালক মোহাম্মদ রতন মিয়া (তদন্ত কমিটির প্রধান), সহকারী পরিচালক মো. রায়হান উদ্দিন ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সিনিয়র ম্যানেজার সৈয়দ ফয়সাল আব্দুল্লাহ।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অর্ডিন্যান্স নং xvii) এর ২১ ধারা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ (১৯৯৩ সালের ১৫নং আইন) এর ১৭ক ধারা অনুযায়ী কোম্পানিটির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিতে বিএসইসি ও ডিএসইর কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হলো। তদন্ত কর্মকর্তারা এ আদেশ জারির ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিএসইসতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিএসইসির মতে, ওটিসি মার্কেট থেকে এসএমই প্ল্যাটফর্মে ফিরে আসার পরেও ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজের ব্যবসায়িক কার্যক্রম ভালোভাবে চলছে না। তাই কোম্পানিটির প্রকৃত আর্থিক অবস্থা জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি।
ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজ ১৯৯০ দশকের গোড়ার দিকে রপ্তানিমুখী প্লাস্টিক পণ্যের প্রস্তুতকারক হিসাবে যাত্রা শুরু করে। তার কয়েক বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে মূল মার্কেটে তালিকাভুক্ত হয়। পরবর্তীতে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কোম্পানিটিকে ওটিসি মার্কেটে স্থানান্তর করা হয়। ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বিএসইসি ওটিসি মার্কেট বিলুপ্ত ঘোষণা করে। ফলে ওটিসি মার্কেটের আওতাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক সক্ষমতা ও ভবিষ্যত সম্ভাবনার ভিত্তিতে এসএমই প্ল্যাটফর্ম ও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে ওটিসি মার্কেট থেকে ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজকে এসএমই প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তর করে বিএসইসি। মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজের শেয়ার সর্বশেষ ৪৭.১০ টাকায় লেনদেন হয়েছে।