মুক্তিযুদ্ধের সময় আগরতলার মমত্ববোধ ও সহর্মিতা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল: মোস্তফা জব্বার
নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিপুরা রাজ্যের মানুষ বাংলাদেশের প্রতি যে মমত্ববোধ, ভালোবাসা ও সহর্মিতা দেখিয়েছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। আগরতলা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অতি স্মরণীয় একটি জায়গা। আমার স্ত্রী আগরতলায় ১৯ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছে। সেখান থেকে ট্রেনিং নিয়ে দেশে ফিরে যুদ্ধ করেছে। আগরতলায় শুধু বকুল মোস্তফা নয়, অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং সেন্টার হিসেবে কাজ করেছে। সে সময় তারা শুধু ট্রেনিং নয়, সব ক্ষেত্রে যে অবদান রেখেছিল তা অসামান্য।
শুধু তাই নয়, মুজিব বাহিনী গঠনসহ অন্যান্য কাজে অসাধারণ ভূমিকা ছিল। আগরতলাবাসি নিজেরা না খাইয়ে খাইয়েছে। না ঘুমিয়ে ঘুমানোর জায়গা দিয়েছে । সেখানে ১ কোটি শরণার্থীর পাশাপাশি আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম তাদের যে সহায়তাটুকু পেয়ে আসছি তা অসাধারণ। এই অসাধারণ স্মৃতি যেন বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ মনে রাখে।
শুক্রবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমীতে বঙ্গবন্ধু শত বর্ষ ও বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের লক্ষ্যে ভারতের আগরতলা থেকে বৃহৎ কলেবরে প্রকাশিত ‘আন্তর্জাতিক স্মারক গ্রন্থ’ মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, সারা বিশ্বে এখন বাংলা ভাষাভাষী সংখ্যা প্রায় ৩৫ কোটি।
মন্ত্রী বলেছেন, বাংলা ভাষা নিয়ে কিন্তু আসামে আন্দোলন হয়েছে। পৃথিবীর বহু প্রান্তে বাংলা ভাষার আন্দোলন এখনো চলমান আছে। এই হিসাব এখনো অনেকে জানেন না বলে হীনমন্যতায় ভোগেন। সারা পৃথিবীতে বাংলা ভাষাভাষীর সংখ্যা প্রায় ৩৫ কোটি। ৩৫ কোটি মানুষের ভাষাটা পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ভাষা। সকল পন্ডিতরা স্বীকার করেন পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ভাষা হচ্ছে বাংলা। সেই বাংলা ভাষার অধিকারী আমরা এটি একটি গর্বের বিষয়।
পৃথিবীর যে যেই প্রান্তে বাংলাদেশি ও বাঙালিরা রয়েছে তারা সবচেয়ে বেশি বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এটি আমাদের জন্য ও মাটির জন্য গর্বের বিষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমন একজন নেতা ছিলেন যিনি সারা বিশ্বে বাঙালিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যদিও আমরা একটি ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ আছি। তার মধ্যে মৌলিক সীমারেখার মধ্যে থেকে আঞ্চলিক আচরণ করতে হয়। আমরা জনগণের দিক থেকে যাই হই না কেন, বস্তুতপক্ষে এই রাষ্ট্রটা কিন্তু শুধু যে ভূখণ্ড সেই ভূখণ্ডের বাঙালিদের নয়, আমি স্পষ্টভাবে একটি বিষয়ের উপলব্ধি করি যে। পৃথিবীর যে প্রান্তে যেখানে বাংলা ভাষা ও বর্ণমালা আছে এবং বাঙালি আছে সেই প্রান্তে কিন্তু বাংলাদেশ হচ্ছে তাদের পক্ষে একটি প্রকৃত স্বাধীন রাষ্ট্র। আমাদের আমাদের দেশের অনেক মানুষ অনেক রাষ্ট্রে বাস করে। তাদের তো দেশ বাংলাদেশ।
ত্রিপুরাবাসী বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে স্মারকগ্রন্থ বানিয়েছে তার মাধ্যমে তার শুধু বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা নয় সমগ্র বাঙালি জাতিকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বলে আমি মনে করি।
স্মারক গ্রন্থের মরগ মোচন অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে ছিলেন শুদ্ধতার কবি অসীম সাহা। এছাড়াও অনুষ্ঠান প্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমীর সভাপতি কথাসাহিতিক সেলিনা হোসেন।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব কবি আসাদুল্লাহ, আন্তর্জাতিক স্মারকগ্রন্থ ও প্রকাশনা পর্ষদের যুগ্ম আহবায়ক কবি আসলাম সানি, শাহজালাল ফিরোজ, মেহজাবিন রেজা চৌধুরী, সাদিদ রেজা চৌধুরী। অন্যদিকে ভারতের পক্ষে আগরতলা থেকে আন্তর্জাতিক স্মারকগ্রন্থের সম্পাদক ড. দেবব্রত দেব রায়, প্রধান সম্পাদক ড. মুজাহিদ রহমান, সাংবাদিক অমিত ভৌমিক, কবি বরুণ চক্রবর্তী ও আবৃত্তি শিল্পী সেলিম দুরানি বিশ্বাস।