অগ্রণী ব্যাংকের জরিমানা ও প্রণব কুমারের পুনর্বহালের আবেদন নাকচ
নিজস্ব প্রতিবেদক: সিআইবি রিপোর্টে গ্রাহকের খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করেছিল অগ্রণী ব্যাংক। এজন্য ব্যাংকটিকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এই জরিমানা মওকুফের আবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪২৩তম বোর্ড সভায় নাকচ করা হয়েছে। পাশাপাশি ডলি কনস্ট্রাকশনের মাধ্যমিক সংগঠিত অনিয়মের জরিমানা পুনর্বিবেচনার আবেদনও প্রত্যাখ্যান করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সে সাথে নাকচ করা হয়েছে পরিসংখ্যান বিভাগের উপ-পরিচালক প্রণব কুমার বর্মনের চাকরিতে পুনর্বহালের আবেদনও।
সোমবার (১ আগস্ট) অনুষ্ঠিত বোর্ড সভাশেষে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সভাপতেত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালকেরা।
এছাড়া বৈঠক সূত্রে জানা যায়, গম ভুট্টা উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে পুনঃঅর্য়স্কিম গঠনের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অন্যদিকে নাকচ করা হয়েছে পরিসংখ্যান বিভাগের উপ-পরিচালক প্রণব কুমার বর্মনের চাকরিতে পুনর্বহালের আবেদনও।
প্রসঙ্গত, অগ্রণী ব্যাংক থেকে ডলি কনস্ট্রাকশনের অনিয়ম করে নেওয়া ঋণের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নির্দেশনার ১০ মাস পার হলেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এই ব্যাংকটিকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মোট ৩২৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকার দুটি ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে ডলি কনস্ট্রাকশন ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংক থেকে ১৪০ কোটি ১৩ লাখ টাকা তুলেছে। নিয়ম অনুযায়ী, ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে এই পরিমাণ টাকা তুলতে কোম্পানীটির অন্তত ২৮০ কোটি ২৬ লাখ টাকা বা ওয়ার্ক অর্ডারদুটির ৮৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ কাজ শেষ করার কথা। তবে ওই সময় পর্যন্ত বাস্তবে ডলি কনস্ট্রাকশন শেষ করেছিল মাত্র ৩৫ শতাংশ।
অর্থাৎ, কোম্পানীটি ১১৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকার কাজ শেষ করেই অগ্রণী ব্যাংক থেকে ১৪০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, এই পরিমাণ কাজের বিপরীতে ডলি কনস্ট্রাকশন ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ৫৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা তুলতে পারে। সে হিসাবে, কোম্পানীটি অনিয়ম করে ব্যাংক থেকে ৮২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত তুলে নিয়েছে।
এখানেই শেষ নয়। ১১৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকার কাজ শেষ করার বিল ব্যাংকে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা জমা দিয়েছে মাত্র ৫১ কোটি ৬ লাখ টাকার। বাকি ৬৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বিলের বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের কাছে জানতে চাইলেও তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কিছুই জানায়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়ার্ক অর্ডার দুটির মেয়াদ ২০২১ সালের ১৫ এপ্রিল শেষ হয়েছে। সেইসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের বর্ধিত মেয়াদও ফুরিয়েছে ২০২১ সালের ৬ জুন। এসব সময়সীমা শেষ হলেও ব্যাংকটি থেকে নেওয়া ১০৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ এখনো পরিশোধ করেনি ডলি কনস্ট্রাকশন।
এছাড়া, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সীমান্ত নদী তীর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন (২য় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় এক ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে ১০০ কোটি টাকা ওভারড্রাফট সীমা অনুমোদন করেছিল অগ্রণী ব্যাংক। তবে কোম্পানীটি ওই ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে টাকা না তুলে অন্য আরেকটি ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে এই টাকা তুলেছে। নিয়ম অনুযায়ী এটিও গ্রহণযোগ্য নয়।
এসব অনিয়ম তুলে ধরে ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট অগ্রণী ব্যাংককে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়। দীর্ঘদিন এ আদেশ না মানায় চলতি বছরের ২০ এপ্রিল কোম্পানী আইন অনুযায়ী ‘ব্যাংকের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না’ জানতে অগ্রণী ব্যাংককে আরেকটি চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সে চিঠিতে ৭ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।
দুই মাস পার হলেও অগ্রণী ব্যাংক এইসব চিঠির কোনো জবাবই দেয়নি। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ব্যাংকটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২৩ জুন ইস্যু করা জরিমানার এই চিঠিতে ইস্যুর তারিখ থেকে পরবর্তী ১৪ দিনের মধ্যে জরিমানার টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের ‘সাধারণ হিসাব- প্রধান কার্যালয়’ খাতে জমা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত করার জন্য অগ্রণী ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা জমা না করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে খোলা অগ্রণী ব্যাংকের চলতি হিসাব থেকে কেটে নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে ব্যাংকটিকে।