ডলার সংকট মোকাবিলায়
বৈদেশিক লেনদেনে বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারের উদ্যোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক:তীব্র সংকটের কারণে ডলারের দাম বেড়েই চলেছে। ফলে কমছে টাকার মানও। ডলারের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ায় আমদানি ব্যয়ও বাড়ছে। বাড়তি দামে পণ্য আমদানি করায় বেড়ে যাচ্ছে উৎপাদন খরচ। সঙ্গে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির চাপ। সামগ্রিকভাবে যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মানুষের জীবনযাত্রায়।
এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সরকার ডলারের বিকল্প হিসাবে বৈদেশিক লেনদেনে অন্য মুদ্রা ব্যবহারের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সংক্রান্ত পরীক্ষা করে দেখছে। ইতোমধ্যে বিকল্প মুদ্রা হিসাবে ইউরোর ব্যবহার শুরু হয়েছে। এ তালিকায় আরও রয়েছে ভারতীয় মুদ্রা রুপি, চীনের মুদ্রা আরএমবি এবং রাশিয়ার মুদ্রা রুবল।
প্রসঙ্গত, গত এক বছরের ব্যবধানে দেশে ডলারের দাম বেড়েছে ১২ শতাংশ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মুদ্রার বিপরীতেও ডলারের দাম বেড়েছে। ফলে ডলারে এলসি করে পণ্য আমদানি করলে দাম বেশি পড়ছে। তবে ডলারের পরিবর্তে অন্য মুদ্রায় পণ্য আমদানি করলে ব্যয় কম হবে। এতে বৈদেশিক লেনদেনে সাশ্রয় হবে। এ কারণে ডলারের পরিবর্তে অন্য মুদ্রায় লেনদেনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
ভারতের বৈদেশিক লেনদেনের প্রধান মুদ্রা ডলার। কিন্তু দেশটি জাপানের সঙ্গে দুই দেশের নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেন সম্পন্ন করছে। এতে বছর শেষে যে লেনদেন বকেয়া থাকছে, পরের বছর তা সমন্বয় করা হয়। দক্ষিণ কোরিয়াও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেন করছে। চীন তাদের মুদ্রায় অনেক দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য করছে। বাংলাদেশের সঙ্গেও নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেন করার কাঠামো তৈরি করেছে ঢাকা-বেইজিং। পাকিস্তানের সঙ্গেও করছে। রাশিয়া তাদের নিজস্ব মুদ্রায় চীন, ভারতসহ অনেক দেশের সঙ্গে লেনদেন করছে। এর মাধ্যমে ডলারের উত্তাপ থেকে তাদের অর্থনীতিকে রক্ষা করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এখন যেহেতু ডলার বিশ্বব্যাপী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, এই অবস্থায় ডলারের বিকল্প হিসাবে অন্য মুদ্রা ব্যবহার করলে ডলারের উত্তাপ থেকে অর্থনীতি কিছুটা হলেও রক্ষা পাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, একক দেশ হিসাবে চীনের সঙ্গেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য রয়েছে। এর পরেই আছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। অঞ্চল হিসাবে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর সঙ্গে। বাংলাদেশের মোট আমদানির ২৬ শতাংশ এবং রপ্তানির ৩ শতাংশ হয় চীনের সঙ্গে। চীনে রপ্তানি কম হওয়ায় আরএমবি আয় হবে কম। অন্যদিকে আমদানি বেশি হওয়ায় আরএমবি ব্যয় হবে বেশি। ফলে চীনা মুদ্রার ঘাটতি দেখা দেবে। এই ঘাটতি মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে আরএমবির জোগান দিতে হবে। এজন্য রিজার্ভে যথেষ্ট পরিমাণে আরএমবি রাখতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, দেশের মোট রপ্তানির ২৬ শতাংশ এবং আমদানির সাড়ে ৩ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। ডলারের দাম বাড়ায় রপ্তানি করে ভালো আয় হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি কম হওয়ায় কিছুটা সাশ্রয় হচ্ছে।
মোট আমদানির সাড়ে ১৪ শতাংশ এবং রপ্তানির ৩ শতাংশ হয় ভারতের সঙ্গে। এসব লেনদেন সম্পন্ন হয় ডলারে। ফলে আমদানি বেশি হয় বলে খরচ বেশি হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্যে টাকা ও রুপি ব্যবহার করলে বেশ সাশ্রয় হবে। কেননা ডলারের বিপরীতে রুপির দরপতন টাকার চেয়ে বেশি হয়েছে। কিন্তু ভারতে রপ্তানি কম বলে রুপির জোগান কম। এক্ষেত্রে টাকা রুপির বিনিময়ে জোর দিতে হবে।
দেশের মোট রপ্তানির ৫৬ শতাংশ এবং আমদানির ৮ শতাংশ হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে। ইউরোর দাম কমায় রপ্তানি আয় কম হবে। আমদানি ব্যয়ও কমবে। কিন্তু ইউরোপ থেকে আমদানি কম। ফলে রপ্তানি করে পাওয়া ইউরো ব্যবহারের ক্ষেত্রে কম।
শেয়ারবাজার নিউজ/খা.হা.