করোনাকালে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ লাখ ৮১ হাজার
নিজস্ব প্রতিবেদক:করোনা মহামারির মধ্যে দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মাধ্যমিকে চার লাখ ৮১ হাজার ৫৫ জন শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। এর মধ্যে শুধু বাল্যবিবাহ হয়েছে ৪৭ হাজার ৪১৪ জনের। শিশুশ্রমে যুক্ত হয়েছে ৭৭ হাজার ৭০৬ জন। বাকি তিন লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ জন অন্যান্যভাবে ঝরে গেছে।
সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনের জন্য দেশের ১১ হাজার ৬৭৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে সরকারি–বেসরকারি মিলিয়ে মোট মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ২০ হাজার ২৯৪টি।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২০ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তি হওয়া মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৬৫ লাখ ৫৬ হাজার ৫৩৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র সংখ্যা ২৯ লাখ ৬২ হাজার ৪৫ জন ও ছাত্রী ৩৫ লাখ ৯৪ হাজার ৪৯১ জন। ২০২১ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে ৬৬ লাখ ৪৯ হাজার ৫৩৮ হয়। এর মধ্যে ছাত্রী সংখ্যা বেড়ে যায়।
করোনা অতিমারির মধ্যেও শিক্ষার্থী ভর্তি বেশি ৯৩ হাজার দুজন। এর মধ্যে মাধ্যমিকের বিভিন্নস্তরের বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নেয় ৬১ লাখ ৬৮ হাজার ৪৮৩ জন। ২৮ লাখ ৫ হাজার ৭৯১ জন ছাত্র ও ৩৩ লাখ ৬২ হাজার ৬৯২ জন ছাত্রী রয়েছে। সে হিসাবে ওই বছরে মোট চার লাখ ৮১ হাজার ৫৫ জন ঝরে গেছে। ঝরে পড়ার হার ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। এর মধ্যে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ বাল্যবিবাহ, ১৬ দশমিক ১৫ শতাংশ শিশুশ্রমে ও অন্যান্য কারণে ৭৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ ঝড়ে গেছে।
মাউশির পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন শাখার পরিচালক অধ্যাপক মো. আমির হোসেন বলেন, সারাদেশের সাড়ে ১১ হাজারের অধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীর তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থী ভর্তি ও পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সংখ্যা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পরীক্ষায় অনুপস্থিত সবাই ঝরে গেছে তা বলা যাবে না। অনেকেই দেশের বাহিরে চলে গেছে। কেউ আবার ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে। তবে ঝরে পড়ার হার যে পরিমাণে ধারণা করা হয়েছিল তা হয়নি। স্কুলে অ্যাসাইনমেন্ট কাজ অনেক সুফল এনেছে। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনতে কয়েকটি সুপারিশ করা হচ্ছে।
দেশে মাউশির নয়টি আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে। মাউশির প্রতিবেদন বলছে, বার্ষিক পরীক্ষায় ময়মনসিংহ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির হার (৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ) বেশি, বরিশাল অঞ্চলে অনুপস্থিতির হার সবচেয়ে কম (৬ দশমিক ৬২ শতাংশ)। বাল্যবিবাহের কারণে অনুপস্থিতির হার সবচেয়ে বেশি রাজশাহী অঞ্চলে (১৫ দশমিক ৮২ শতাংশ), সবচেয়ে কম সিলেট অঞ্চলে (৪ দশমিক ৩০ শতাংশ)। সিলেটের জৈন্তাপুরের শাড়িঘাট হাইস্কুলে ২০২০ সালে ৭৪৬ শিক্ষার্থী ছিল। ২০২১ সালে শিক্ষার্থী কমে দাঁড়ায় ৬৮৪ জনে। বিদ্যালয়টির ১৪ ছাত্রীর বাল্যবিবাহ হয়ে গেছে।
শিশুশ্রমে যুক্ত শিক্ষার্থীও রাজশাহী অঞ্চলে বেশি। এ কারণে এই অঞ্চলে প্রায় ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী বার্ষিক পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল। কম চট্টগ্রাম অঞ্চলে (প্রায় ১৩ শতাংশ)।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনতে কয়েক দফায় সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, করোনায় যেসব ছাত্রীদের বাল্যবিবাহ হয়েছে তাদের উপবৃত্তির মাধ্যমে বিশেষ সুবিধা দিয়ে ফিরিয়ে আনতে হবে। উপবৃত্তির অর্থ ও পরিমাণ বাড়িয়ে শিশুশ্রমে যুক্ত হওয়া ছাত্রদের এর আওতায় আনতে হবে। ক্লাসে ফিরিয়ে আনতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে নতুন করে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। সরকারের সঙ্গে স্ব স্ব এলাকার জনপ্রতিনিধি ও সচ্ছল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসারও সুপারিশ করা হয়েছে।
শেয়ারবাজার নিউজ/খা.হা.