বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম আবার কমল
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম আরও কমেছে। গতকাল সোমবার এই প্রতিবেদন লেখার সময় ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ৯৩ ডলার, যা গত রোববারের চেয়ে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। আর ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ৮৭ দশমিক ১৫ ডলার, যা রোববারের চেয়ে ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ কম। তেলের পাশাপাশি প্রাকৃতিক গ্যাসের দামও কমেছে।
গত কয়েক দিন ধরেই বিশ্ব বাজারে জ্বালানির দাম ধীরে ধীরে কমছে। অথচ গত ৬ আগস্ট থেকে সব ধরনের জ্বালানির মূল্য ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে বাংলাদেশ সরকার। এতে সবকিছুর দাম আরেক দফা বেড়েছে। যদিও রোববার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম যদি আরও কমে, তাহলে দেশে তেলের দাম সমন্বয় করা হবে বলে জানিয়েছেন ।
দ্রুততার সঙ্গে তেলের দাম সমন্বয় করা উচিত। তেলের দাম কমানো হলে পণ্য ও পরিষেবার মূল্যও যেন সমানুপাতিক হারে কমে, তা নিশ্চিত করতে নজরদারি করা প্রয়োজন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ডলারের বিনিময়মূল্য বেড়ে যাওয়ায় অনেক দেশ জ্বালানি আমদানি হ্রাস করেছে। সেই সঙ্গে উন্নত দেশগুলোতে মন্দার আবহ শুরু হয়েছে। কমে গেছে চাহিদা। আবার বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার কারণে তেলের চাহিদাও কমেছে-এ সবকিছুর সম্মিলিত ফলাফল হলো, জ্বালানির দাম কমে যাওয়া।
এদিকে ওপেকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, এ বছর তেলের চাহিদা দৈনিক ৩১ লাখ ব্যারেলে উন্নীত হবে। ওপেকের ভাষ্যে, চাহিদার এই ধারা সুস্থ বাজারের লক্ষণ। যদিও তারা নানা কারণে বছরের দ্বিতীয়ার্ধের পূর্বাভাস হ্রাস করতে বাধ্য হয়েছে-এর মধ্যে আছে বিভিন্ন জায়গায় নতুন করে কোভিড-১৯-এর কারণে বিধিনিষেধ আরোপ এবং চলমান ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। বলা বাহুল্য, এই ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট।
ওপেকের হিসাব অনুসারে, অধিকাংশ ওপেক সদস্যভুক্ত দেশ সক্ষমতার তুলনায় কম তেল উত্তোলন করছে। ওপেক ও রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন ওপেক-বহির্ভূত তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো জুলাই ও আগস্ট মাসে দৈনিক ছয় লাখ ব্যারেল তেল অতিরিক্ত উৎপাদনের অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু জুলাই মাসে তারা সেই অঙ্গীকার রাখতে পারেনি, আগস্ট মাসেও রাখতে পারবে না বলেই বোঝা যাচ্ছে।
এ ছাড়া ওই দুই সংস্থার সর্বশেষ বৈঠকে তারা দিনে মাত্র এক লাখ ব্যারেল তেল অতিরিক্ত উৎপাদনে রাজি হয়েছে। এই খবরে বিশ্ববাজারে বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এটা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গালে চপেটাঘাতের শামিল। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্য সফর করে রিয়াদকে বাজারে অতিরিক্ত তেল ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
সৌদি আরবের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী যুবরাজ পরিষ্কার বলেছেন, বৈশ্বিক তেল সরবরাহব্যবস্থায় মারাত্মক কিছু না ঘটলে তিনি বাজারে অতিরিক্ত তেল ছাড়বেন না। সে কারণে তেলের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে, এমন সম্ভাবনা কম। যতটা কমবে, তা ঘটবে চাহিদা হ্রাসের কারণে।
জ্বালানির দাম শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর সঙ্গে সবকিছুর দাম যুক্ত। উচ্চ জ্বালানির দাম মেটাতে গিয়ে যুক্তরাজ্যের অনেক মানুষ এবারের শীতে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি দেশে জ্বালানি তেলের দাম যে হারে বাড়ানো হয়েছে, তা অস্বাভাবিক বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান। গত রাতে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এত বেশি হারে দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি, কর-শুল্ক হ্রাস করে দাম সমন্বয় করা যেত, আবার আন্তর্জাতিক বাজারের গতিবিধি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত; অর্থাৎ সরকার আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে পারত।
তেলের দাম বৃদ্ধির পর যে নেতিবাচক অভিঘাত পড়েছে, তার প্রতিক্রিয়ায় সরকার দাম সমন্বয়ের যে চিন্তা করছে, তা ইতিবাচক বলে মনে করেন সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, দ্রুততার সঙ্গে তেলের দাম সমন্বয় করা উচিত। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম আরও পড়লে দেশে আবারও সমন্বয় করা উচিত। তেলের দাম কমানো হলে পণ্য ও পরিষেবার মূল্যও যেন সমানুপাতিক হারে কমে, তা নিশ্চিত করতে নজরদারি করা প্রয়োজন।