আজ: রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২০ অগাস্ট ২০২২, শনিবার |

kidarkar

কোম্পানিকে নতুন উদ্যমে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করছে ইউসুফ ফ্লাওয়ার মিলস লি.

শাহ আলম নূর: দীর্ঘদিন ওভার দ্যা কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে থাকার পর সদ্য এসএমই প্লাটফর্মে লেনদেন শুরু করেছে ইউসুফ ফ্লাওয়ার মিলস। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটিকে নতুন রুপে ঢেলে সাজানোর পরকিল্পনা হাতে নিয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। এর অংশ হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ফ্লাওয়ার মেশিনারি স্থাপন করবে প্রতিষ্ঠানটি। এতে তাদের পণ্যের উৎপাদন যেমন বাড়বে তেমনি গুনগত মান আরো বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।

ইউসুফ ফ্লাওয়ার মিলসের কোম্পানি সচিব মো. শাহেদুল ইসলাম বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক মেশিন স্থাপনের মাধ্যমে অত্যাধুনিক ফ্লাওয়ার মিল চালু করতে চাচ্ছি। যে কারখানা হবে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়। যেখানে কাঁচামাল থেকে পণ্য উৎপাদন ও গাড়িতে বোঝাই পর্যন্ত কোনো পর্যায়েই লাগবে না হাতের স্পর্শ।

সচিব জানান, অত্যাধুনিক এই কারখানার যাবতীয় যন্ত্রাংশ আনা হবে সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান বুলার থেকে। এখানে গম থেকে পাথর কিংবা লোহাজাতীয় উপাদান আলাদা করা হয় স্বয়ংক্রিয় মেশিনে। গমের চেয়ে বড় কিংবা ছোট দানা বাছাই করতে রয়েছে ভেগা সেপারেটর মেশিন। গমের পুষ্টিগুণ পরিমাপের জন্য থাকবে এনআইআর মেশিন। হাতের স্পর্শ ছাড়া এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরই ক্রাশিংয়ে গম পাঠানো হবে।

তিনি বলেন ‘আমরা সব সময় চাই আমাদের দেশের জনগণের কাছে সবচেয়ে ভালো এবং উন্নত মানের পণ্যটাই পৌঁছাতে। ভালো পণ্য জনগণের হাতে পৌঁছাতে আমরা চেষ্টা করছি এবং চেষ্টা করে যাব।’এছাড়াও কারখানার ভেতরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য থাকবে অটোমেশন হাউজ কিপিং সিস্টেম। মেঝেতে ময়লা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টেনে নেবে এই মেশিন।

সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা যায়, আগামী বছরগুলোয় গমের আটার বৈশ্বিক বাজার সম্প্রসারিত হবে এবং আটার চাহিদা বাড়বে। কোভিড-১৯ মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে বৈশ্বিক প্রধান খাদ্যশস্যে কেমন প্রভাব পড়বে, এ নিয়ে রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেটসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

‘হুইট ফ্লাওয়ার মার্কেট ফোরকাস্ট টু ২০২৭-কভিড ১৯ ইমপ্যাক্ট অ্যান্ড গ্লোভাল অ্যানালাইসিস বাই প্রডাক্ট টাইপ; অ্যাপ্লিকেশন; এন্ড ইউজার; ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল, অ্যান্ড জিওগ্রাফি’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে বৈশ্বিক আটার বাজার ছিল ১৮ হাজার ১৩৭ কোটি ৭৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার। ২০২৭ সালে এ বাজার দাঁড়াবে ২১ হাজার ৯৯৯ কোটি ৫৪ লাখ ২০ হাজার ডলারে। ২০২০-২৭ সালে আটা উৎপাদন ২ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়তে পারে।

খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং দ্রুত ও সহজলভ্য খাবারের চাহিদা বৃদ্ধিতে গত কয়েক বছরে আটার বাজার বেশ সম্প্রসারিত হয়েছে। বেকারি পণ্য, স্ন্যাকস, নুডলস ও পাস্তার মতো পণ্যের জন্যও আটার বাজার সম্প্রসারিত হয়েছে। গমে প্রাকৃতিকভাবেই গ্লাটেন উপাদান সর্বোচ্চ আকারে থাকে, যা বেকড গুডস বানাতে সহায়তা করে।

কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা, মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ, স্থূলতা ঠেকানো এবং রক্তে চিনির মান নিয়ন্ত্রণে আটার ভূমিকা ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। এছাড়া আটায় উচ্চপুষ্টিকর আঁশ রয়েছে, যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেলের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে। বিশেষ করে এতে ভিটামিন বি ও ভিটামিন ই রয়েছে। এস্ট্রোজেনের মেটাবলিক হার চাঙ্গা করার মাধ্যমে আটা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায়। পুষ্টি চাহিদা পূরণ, ত্বকের সুরক্ষা এবং শরীরের সার্বিক কার্যক্রম বজায় রাখতে আটা ভূমিকা রাখে। এছাড়া ডায়বেটিস, ক্যান্সার এবং অন্যান্য রোগের কারণে মানুষের মধ্যে জীবনযাপন নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে আটার বাজার সম্প্রসারিত হয়েছে।

প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং কনভেনিয়েন্স ফুডের চাহিদা বৃদ্ধিতে আটার বাজার আরো সম্প্রসারিত হবে। এছাড়া রিটেইল আউটলেট, সুপারমার্কেটগুলোও কনভেনিয়েন্স ফুড সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়েছে। নগরায়ন বৃদ্ধিতে আধুনিক খাবারদাবারে কনভেনিয়েন্স ফুডের চাহিদা বেড়েছে।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইর এসএমই প্লাটফর্মে সাম্প্রতিক সময়ে লেনদেন শুরু করেছে বিলুপ্ত হওয়া ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেট থেকে ফেরা ইউসুফ ফ্লাওয়ার মিলস লিমিটেড। ওটিসিতে সর্বশেষ লেনদেন হওয়া তারিখের (২০১২ সালের ৩ মে) সমাপনী দরেই (অর্থাৎ ২৩ টাকা ৮০ পয়সা) এসএমই প্লাটফর্মে লেনদেন শুরু হয়েছে ইউসুফ ফ্লাওয়ার মিলসের।

এদিকে সাম্প্রতিক সময় ডিএসইর মাধ্যমে চলতি ২০২১-২২ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কোম্পানিটি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলোচ্য হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ২২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ২৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৩ টাকা ৬৮ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪ টাকা ৭ পয়সা।

তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৯ লাখ ১০ হাজার টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৮ লাখ টাকা। তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৫০ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ৩২ পয়সা। ৩১ মার্চ ২০২২ শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৩৪ টাকা ৫৫ পয়সায়।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.