রিং সাইনকে অধিগ্রহণ করতে চায় ওয়াইজ স্টার
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের অন্যতম বাণিজ্যিক শিল্পগোষ্ঠী ইউনিয়ন গ্রুপ শেয়ারবাজারের বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি রিং সাইন টেক্সটাইলকে অধিগ্রহণ করার প্রক্রিয়া থেকে সরে আসায়, ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইল মিলস এ কাজে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অধিগ্রহণ করতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানটি কুইন সাউথ টেক্সটাইল মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওয়াং জেমির ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান।তবে কোম্পানিটিকে অধিগ্রহণ করার ক্ষেত্রে বিএসইসির কাছে কিছু সহায়তা চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইমসলামের কাছে এ সংক্রান্ত বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন কুইন সাউথ টেক্সটাইল মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াং জেমি।
সূত্রে জানা গেছে, বিএসইসির অধিগ্রহণের অনুমতি ও সহায়তা পেলে প্রথম ৬ মাসের মধ্যে রিংসাইন টেক্সটাইলের সকল মেশিন রিমডেলিং এবং মেরামত করা হবে। আগামী ২০২৩ সালের মার্চ/এপ্রিলের মধ্যে প্রতি মাসে ৬ থেকে ৮ মিলিয়ন (৬০-৮০ লাখ টাকা) ব্যবসায় থেকে আয় করা সম্ভব হবে। এতে কোম্পানিটির প্রতি হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করে ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইল মিলস।
অধিগ্রহণ বিষয়ে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউনিয়ন গ্রুপ রিং সাইন টেক্সটাইলকে অধিগ্রহণের প্রস্তাব প্রত্যাহার করেছে। কোম্পানিটিকে অধিগ্রহণের বিষয়ে আমাদের ইতিবাচক মনোভাব ও উদ্দেশ্য রয়েছে। এ বিষয়টি বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক শেখ শামসুদ্দিন আহমেদকে অবহিত করা হয়েছে। কোম্পানিটিকে অধিগ্রহণের বিষয়ে গত মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) আমরা সকল ব্যাংকারদের সঙ্গে কথা বলেছি। সপ্তাহখানের মধ্যে তাদের কাছে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হবে।
স্পন্সর মালিকদের শেয়ারধারণের পরিস্থিতি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাটি বোঝার জন্য বিএসইসির কাছে পৃথক চিঠি পাঠানো হবে। এছাড়া যেসব শেয়ার ব্লক অবস্থায় রয়েছে সেগুলো বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে আমরা অধিগ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করতে কোম্পানিটির স্পন্সর মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তবে এটা স্পষ্ট যে, রিং সাইন টেক্সটাইলের অনেকগুলো সমস্যা রয়েছে, যা অধিগ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আগে সমাধান করতে হবে। বিএসইসির পরামর্শ অনুযায়ী অবিলম্বে রিং সাইন টেক্সটাইলকে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করা হবে। এ জন্য আমাদের আইনি ও অ্যাকাউন্ট টিম শুরু করতে প্রস্তুত রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোম্পানিটির ওপর হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি যেসব সুবিধা চেয়েছে সেগুলো হলো- রিং সাইনকে সর্বশেষ ব্যালেন্স শিট প্রকাশ করতে হবে এবং বিগত ৩ বছরের অনুষ্ঠিত না হওয়া বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) সম্পন্ন করতে হবে। ইউটিলিটি, জমি ভাড়া, সুদ এবং জরিমানা বাবদ বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) থেকে সর্বমোট ৭০ কোটি টাকা মওকুফ করতে হবে। বন্ড, কাস্টমস এবং আয়কর রিটার্ন অফিস পরিচালনার সহায়তা। বন্ড, শুল্ক, এবং আয়কর রিটার্ন পরিচালনার ক্ষেত্রে সহায়তা প্রয়োজন। স্থানীয় সরবরাহকারী বা বিক্রেতাদের পাওনা প্ররিশোধ করতে হবে। শ্রমিকের দায় রয়েছে প্রায় ৬০ কোটি টাকা, যা পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া শ্রমিকদের দায় মুক্তি এবং মেশিন মেরামত ও রিমডেলিংয়ের জন্য প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) অবিশিষ্ট তহবিল ব্যবহারের অনুমোদন দিতে হবে।
এর আগে গত ১৭ মে ইউনিয়ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিং সাইন টেক্সটাইলকে অধিগ্রহণে আগ্রহী বলে বিএসইসির চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি পাঠায়। তবে সম্প্রতি ইউনিয়ন গ্রুপ কোম্পানিটির অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে সরে আসে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে কুইন সাউথ টেক্সটাইল মিলসের কোম্পানি সচিব মাসুম রানা বলেন, ‘জেমি ওয়াং কুইন সাউথ টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আর ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইল মিলস হলো জেমি ওয়াংয়ের ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি কোম্পানি। সেই হিসেবে কুইন সাউথ টেক্সটাইলে ও ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইল মিলস রিলেটেড পার্টি কোম্পানি। তবে কুইন সাউথ টেক্সটাইল এ কাজের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নয়। রিং সাইন টেক্সটাইলকে অধিগ্রহণ করতে আগ্রহ জানিয়ে ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইল মিলস থেকে বিএসইসিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১২ মার্চ বিএসইসি রিং সাইন টেক্সটাইলসকে আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে টাকা তোলার অনুমোদন দেওয়া হয়। কোম্পানিটি যন্ত্রপাতি ও কলকব্জা ক্রয়, ঋণ পরিশোধ এবং আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করতে শেয়ারবাজারে ১৫ কোটি সাধারণ শেয়ার ছেড়ে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। কোম্পানিটি ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। তবে লোকসানের কারণে এক বছরের মধ্যে ২০২০ সালের শেষদিকে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে কোম্পানিকে উৎপাদনে ফেরাতে কয়েক দফায় পদক্ষেপ নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। প্রথম দফায় কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করে।
দ্বিতীয় দফায় আইপিওর ফান্ড ব্যবহারে অনুমোদন এবং ভুয়া প্লেসমেন্ট শেয়ার বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া রিং সাইনের উৎপাদন শুরু করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে বেপজা। দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ থাকার পর রিং সাইন টেক্সটাইলস মিলস গত বছরের ১৩ জুন থেকে ২৫ শতাংশ উৎপাদনে ফিরে। বর্তমানে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি ৩১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। সে হিসেবে কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৫০ কোটি ৩ লাখ ১৩ হাজার ৪৩টি। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকের হাতে ২১.৩২ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১২.০৭ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ১০.২৩ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫৬.৩৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৯.৯০ টাকায়।