আজ: বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪ইং, ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, রবিবার |

kidarkar

আরএকে সিরামিকসের বিরুদ্ধে জমি কেনায় নয়-ছয় করার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক :  পুঁজিবাজারে সিরামিক খাতে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি আরএকে সিরামিকসের পরিচালনা পর্ষদ গাজীপুরের ধানুয়া বাটুলিয়াতে ৩৩.৯১ একর জমি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে কোম্পানিটি উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে গ্রিনফিল্ড প্রকল্পে ৯০২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করবে। তবে, কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত দামে জমি কেনা ও নতুন বিনিয়োগের পরেও উৎপাদন যাওয়া সম্ভব হবে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগকারীদের দাবি, এ ধরনের সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতের মতোই। এতে অর্থপাচারের পথ সুগম হবে। তবে, কোম্পানি কর্তৃপক্ষের দাবি, এ ধরনের বেনামী অভিযোগ ভিত্তিহীন।

বেনামী অভিযোগটি আমলে নিয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর পরিপ্রেক্ষিতে আরএকে সিরামিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদের কাছে এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক নথিপত্রসহ ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি আরএকে সিরামিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালনা পর্ষদের কাছে বিএসইসি এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছে। এর আগে গত ২০ জুলাই একটি বেনামী চিঠিতে আরএকে সিরামিকসের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসিতে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, আরএকে সিরামিকসের পরিচালনা পর্ষদ যে জমি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা খোদ কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এ কে একরামুজ্জামানের। জমিটি বর্তমান মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই জমির মধ্যে স্টার সিরামিকের চেয়ারম্যানের নামেও সম্পত্তি আছে। স্টার সিরামিকের চেয়ারম্যানের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে সরকার, যা পরে নিজের নামে ট্রান্সফার করে নেওয়া হয়েছে। পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলন করা টাকা দিয়ে জমিটি কেনা হবে। ফলে, বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতের মতোই। এরকম সিদ্ধান্ত অর্থপাচারের পথ সুগম করবে বলে মনে করছেন তারা।

কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে গ্রিনফিল্ড প্রকল্পে ৯০২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে, দেশে বর্তমানে তীব্র গ্যাস সংকট আছে। এ কারণ সরকার এখন শুধু ইকোনমিক জোনে গ্যাস সরবরাহ করছে। অন্য কোথাও নতুন গ্যাস সংযোগ দিচ্ছে না। তাই, ওই এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেও সেখানে কোনোদিনও গ্যাস সংযোগ পাবে না। ফলে, নতুন এ জমির ওপর কোম্পানিটি নতুন ফ্যাক্টরি নির্মাণ করলেও প্রোডাকশনে যাওয়া সম্ভব হবে না বলেও মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে অভিযোগপত্রে সুপারিশ করা হয়—আরএকে সিরামিকসের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো একটি সার্কুলার জারি করা যেতে পারে। তাহলে কোনো পরিচালক বা তার আত্মীয়স্বজন কোম্পানিটির সঙ্গে সরাসরি কোনো কার্যক্রমে (ব্যবসায়িক সম্পর্ক/ক্রয়/বিক্রয়) অংশ নিতে পারবে না। আরএকে সিরামিকের বোর্ড অব ডিরেক্টরের জমি কেনার সিদ্ধান্ত বাতিল করে ইকোনোমিক জোনে জমি কেনার জন্য দিকনির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের পক্ষ থেকে একজন পরিচালক নিয়োগ করতে পারলে এই ধরনের অনেক দুর্নীতি কমবে। তাই, এ বিষয়গুলো যথাযথভাবে পর্যালোচনা ও সত্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি। এর মাধ্যমে বিশাল দুর্নীতি থেকে কোম্পানি রক্ষা পাবে।

ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ২০ জুলাই একটি বেনামী চিঠিতে আরএকে সিরামিকসের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আরএকে সিরামিকসকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ধারা ১১(২) এর অধীনে উল্লিখিত অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রাসঙ্গিক নথিপত্রসহ কোম্পানিটির অবস্থান ব্যাখ্যা করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

জানতে চাইলে আরএকে সিরামিকসের কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘বেনামী অভিযোগের আসলে কোনো ভিত্তি থাকে না। তাই, প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম, বিনামী চিঠির উত্তর দেবো না। তারপরও কমিশন যেহেতু আমাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছে, সেহেতু আমরা ব্যাখ্যা দিয়েছি। তবে, কমিশনের উচিত, এ ধরনের বেনামী অভিযোগ গ্রহণ না করা।’

আরএকে সিরামিকস পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১০ সালে। বর্তমানে ‘এ’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৪২৭ কোটি ৯৬ লাখ ৯০ টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৪২ কোটি ৭৯ লাখ ৬৮ হাজার ৭০১টি। এর মধ্যে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকের হাতে ৭২.০৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৫.৯১ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ১২.০১ শতাংশ শেয়ার আছে। বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ ৪৭.৫০ টাকায় লেনদেন হয়েছে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.