রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্য ১৯ সেপ্টেম্বর
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে পুরো দেশেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে দেওয়া এক ঘোষণায় জানানো হয়েছে, তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর। সেদিন ব্রিটেনে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। খবর বিবিসির।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ছিলেন ব্রিটেনের ইতিহাসে দীর্ঘতম সময় সিংহাসনে আসীন রাজশাসক।স্কটল্যান্ডের ব্যালমোরাল প্রাসাদে তার পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে রানি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তার মরদেহ এখন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শায়িত রাখা হবে এবং আগামীতে রাষ্ট্রীয় সম্মানে তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে। রানির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন দেশের জনগণ। রানির কফিন ব্যালমোরাল প্রাসাদ থেকে যাত্রা শুরু করবে আগামীকাল (১২ সেপ্টেম্বর)।
প্রাসাদ থেকে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার এডিনবরা বিমানবন্দর থেকে রয়্যাল এয়ার ফোর্সের বিমানে কফিন এসে পৌঁছাবে লন্ডনে এবং বুধবার বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে সেটি নিয়ে যাওয়া হবে ওয়েস্টমিনস্টার হলে।
সোমবার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবার আগে চারদিন তার মরদেহ সেখানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শায়িত থাকবে যেন সাধারণ মানুষ রানিকে তাদের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারেন।
ব্রিটিশ সরকারের প্রাণকেন্দ্র ওয়েস্টমিনস্টার প্যালেসের সবচেয়ে পুরোনো অংশে অবস্থিত বিশাল হলঘর ওয়েস্টমিনস্টার হল।
রাজপরিবারের শেষ যে সদস্যের মরদেহ ২০০২ সালে এই হলঘরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রাখা হয়েছিল তিনি হলেন রানির মা কুইন মাদার। সেসময় দুই লাখ মানুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
রানির কফিন রাখা হবে কিছুটা উঁচু এক প্ল্যাটফর্মের উপর, যাকে বলা হয় ক্যাটাফাল্ক। ঘরের মাথার ওপর একাদশ শতাব্দীর মধ্যযুগীয় কাঠের ছাদ। কফিনের প্রতিটি কোনায় পাহারায় থাকবেন রাজকীয় বাহিনী রয়্যাল হাউসহোল্ডের ইউনিটে কর্মরত সৈন্যরা।
বাকিংহাম রাজপ্রাসাদ থেকে সামরিক কুচকাওয়াজ সহযোগে ধীরগতিতে শোভাযাত্রা করে রানির কফিন নিয়ে আসা হবে ওয়েস্টমিনস্টার হলে। কফিনের সঙ্গে শোভাযাত্রায় অংশ নেবেন রাজপরিবারের সদস্যরা।
রাস্তা দিয়ে যাওয়া এই শোভাযাত্রা দেখতে পাবেন সাধারণ মানুষ। লন্ডনের রাজকীয় উদ্যানগুলোয় এই শোভাযাত্রা দেখার জন্য বসানো হবে বিশাল বিশাল পর্দা যেখানে সম্প্রচারিত হবে পুরো শোক মিছিল।
রানির কফিন আচ্ছাদিত থাকবে রাজকীয় পতাকা রয়্যাল স্ট্যান্ডার্ডে এবং কফিন ওয়েস্টমিনস্টার হলে আনার পর তার ওপর বসানো হবে রাজ মুকুট ইম্পিরিয়াল স্টেট ক্রাউন, রাজকীয় গোলক এবং রাজদণ্ড।
ওয়েস্টমিনস্টার হলে কফিন রাখার পর একটি প্রার্থনা অনুষ্ঠান হবে। তারপর সাধারণ মানুষকে সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রানির শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে গির্জায় এবং দুসপ্তাহের মধ্যেই এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে। নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হবে বাকিংহাম প্রাসাদ থেকে।
ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে একটি ঐতিহাসকি গির্জা যেখানে ব্রিটেনের রাজা ও রানিদের মাথায় রাজমুকুট পরানোর অনুষ্ঠান হয়েছে। এখানেই রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অভিষেক অনুষ্ঠান হয়েছে ১৯৫৩ সালে এবং এখানেই ১৯৪৭ সালে প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে।
তবে অষ্টাদশ শতাব্দীর পর থেকে এই গির্জায় কোনো রাজা বা রানির শেষকৃত্যানুষ্ঠান হয়নি। ২০০২ সালে এই গির্জায় রানির মায়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
এই শেষ বিদায় অনুষ্ঠানে রাজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগ দিতে পৃথিবীর নানা দেশ থেকে রাষ্ট্রপ্রধানরা আসবেন। রানির জীবন ও কর্মজীবনকে স্মরণ করা হবে ওই বিশেষ শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন ব্রিটেনের শীর্ষ রাজনীতিকরা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীরাও।
দিনের শুরুতে রাজকীয় নৌবাহিনীর রাষ্ট্রীয় কামানবাহী শকটে করে রানির কফিন নিয়ে যাওয়া হবে ওয়েস্টমিনস্টার হল থেকে ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবে গির্জায়।
কামানবাহী এই রাষ্ট্রীয় শকট শেষ দেখা গিয়েছিল ১৯৭৯ সালে, যখন প্রিন্স ফিলিপের কাকা লর্ড মাউন্টব্যাটেনের শেষকৃত্যে তা টেনে নিয়ে যায় রয়্যাল নেভির ১৪২ জন নাবিক।
এই শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে নতুন রাজা তৃতীয় চার্লস এবং রাজ পরিবারের ঊর্ধ্বতন সদস্যদের।
এখনও পর্যন্ত মনে করা হচ্ছে ওয়েস্টমিনস্টার গির্জার ডিন বা প্রধান ডেভিড হয়েল এই অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন। তার সঙ্গে থাকবেন ক্যান্টারবেরি গির্জার আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবি, যিনি ধর্মকথা বলবেন। প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসকে হয়ত কিছু পাঠ করতে বলা হবে।
শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের পর রানির কফিন পদযাত্রা করে অ্যাবে থেকে নিয়ে যাওয়া হবে লন্ডনের কেন্দ্রে হাইড পার্ক কর্নারে ওয়েলিংটন আর্চ নামে এক ঐতিহাসিক খিলান স্তম্ভে। সেখান থেকে তার কফিনবাহী শকট রওয়ানা হবে উইন্ডসর রাজপ্রাসাদের উদ্দেশে।
শেষকৃত্য অনুষ্ঠান যেদিন হবে, সেদিন বিকালেই রানির কফিন অন্তিম যাত্রা করবে তার চূড়ান্ত গন্তব্য উইন্ডসর কাসেলের সেন্ট জর্জেস চ্যাপেল অভিমুখে।
কফিন সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলে সমাহিত করার প্রার্থনা অনুষ্ঠানের আগে উইন্ডসর কাসেলের চৌকনো চত্বরে শোভাযাত্রায় অংশ নেবার কথা রয়েছে রাজা তৃতীয় চার্লস এবং রাজ পরিবারের সদস্যদের।
রাজপরিবারের সদস্যরা সচরাচর সেন্ট জর্জেস চ্যাপেল নামে উইন্ডসরের এই গির্জাটি বেছে নেন বিয়ের অনুষ্ঠান, সদ্যোজাতের জন্য ঈশ্বরের আর্শীবাদ প্রার্থনা অনুষ্ঠান এবং শেষকৃত্যানুষ্ঠানের জন্য।
এই গির্জাতেই ডিউক ও ডাচেস অফ সাসেক্স, প্রিন্স হ্যারি ও মেগান বিয়ে করেছেন এবং এই গির্জাতেই সম্পন্ন হয়েছে রানির প্রয়াত স্বামী প্রিন্স ফিলিপের শেষকৃত্যানুষ্ঠান। রানির কফিন এখানে নামানো হবে রাজ পরিবারের এক প্রকোষ্ঠ রয়্যাল ভল্টে।
এরপর সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলের অভ্যন্তরে রাজা ষষ্ঠ জর্জের স্মৃতিসৌধ কিং জর্জ সিক্সথ মেমোরিয়াল চ্যাপেলের ভেতর রানির মরদেহ সমাহিত করা হবে।