পঞ্চগড়ে নৌকাডুবি: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৯, নিখোঁজ ৫০
নিজস্ব প্রতিবেদক : পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় আজ দুপুর পর্যন্ত আরও ১৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ৩৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হলো।
সোমবার সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দিকে বোদা উপজেলার আওলিয়া ঘাট ঘটনাস্থল থেকে ১৬ কি.মি. দূরে দেবীগঞ্জ ব্রিজ ও শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ধুলাঝারি এলাকার মধ্যে করতোয়া নদী থেকে পনের জনের ভেসে থাকা মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জানান, গতকাল ২৪ জনের এবং আজ আরও ১৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।আজ উদ্ধার করা হয়েছে ব্রজেন্দ্র নাথ (৫৫), ঝর্ণা বালা (৫০), দীপ বাবু (১০), সুচিত্রা রানী (২২), কবিতা রানী (৫০), বেজ্যেবালা (৫০) ও দিপশিখা রানীসহ (১০) ১৫ জনের মরদেহ। এ ঘটনায় গতকাল উদ্ধার করা হয় দীপংকর (৩), প্রিয়ন্ত (২.৫), শ্রেয়সী (৩), তনুশ্রী (৫), প্রিয়ন্তী (৫), উশশী (৩), শ্যামলী (১৪), লক্ষী রানী (২৫), শোভা রানী (২৭), খুকি রানি (৩৫), প্রমিলা রানি (৫৫), তারা রানি (২০), শোনেকা রানী (৬০), ফাল্গুনি রানি (৫৫), প্রমিলা (৭০), ধনোবালা (৪৭), সুমিত্রা রানী (৫৭), সফলতা রানী (৪০), শ্যামলী বালা (৩৬), অমল চন্দ্র (৩৫), বিলাস চন্দ্র (৫০), হাসান আলীর (৭০) মরদেহ। এ ছাড়া, ৪০ ও ৩ বছর বয়সী ২ জনের মরদেহ তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা যায়নি।
উদ্ধার কার্যক্রমের কন্ট্রোল রুমের প্রধান ও পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপঙ্কর রায় বলেন, ‘গতকাল নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের তথ্য অনুযায়ী ৬৫ জনের একটি তালিকা করা হয়েছিল। সেখানে একাধিকবার এসেছে এমন নামও রয়েছে।’ সে হিসাবে আজ ১৫ জনের মরদেহ উদ্ধারের পর নিখোঁজ রয়েছেন আরও অন্তত ৫০ জন।
মর্মান্তিক এই নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজের স্বজনরা সোমবার সকালে সূর্য ওঠার পর থেকেই ঘটনাস্থল করতোয়ার আওলিয়ার ঘাট ও এর আশপাশে নিজ উদ্যোগে তাদের নিখোঁজদের খোঁজ করছেন।
উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনায় রাজশাহী ও রংপুর থেকে ২টি ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে রয়েছে। তারা ঘটনাস্থল থেকে ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
গতকাল বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের বরদেশ্বরী মন্দিরে (নদীর অপরপাড়ে) মহালয়া উপলক্ষে এক ধর্মসভার আয়োজন করা হয়। এই ধর্মসভায় যোগ দিতে জেলার বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন শ্যালো মেশিনচালিত নৌকাযোগে যাচ্ছিল। দুপুরের দিকে নদীর মাঝপথে অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নৌকাটি উল্টে গিয়ে ডুবে যায়। সাঁতার জানা যাত্রীরা তীরে উঠে আসতে পারলেও সাঁতার না জানা নারী ও শিশুরা পানিতে ডুবে যায়। তাদের চিৎকারে এলাকার লোকজন ছুটে এসে অনেককে উদ্ধার করে। পরে জেলা, উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন এবং ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়।
মহালয়া উপলক্ষে এদিন অধিক মানুষের সমাগম ঘটে। চারটি নৌকা পারাপারের জন্য চলাচল করলেও অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে বিপুল সংখ্যক মানুষ নদী পার হতে অপেক্ষায় থাকে। ফলে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নৌকায় উঠলে মাঝ নদীতে নৌকা ডুবে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার সাথে সাথে উপস্থিত জনতা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে উদ্ধার অভিযান চালায়। মৃত ব্যক্তি সৎকারের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যেককে ২০ হাজার এবং আহতদের প্রত্যেককে ১০ হাজার করে টাকা প্রদানের ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক।