দক্ষ মানব সম্পদের অভাবে দেশ
শেয়ারবাজারেও রয়েছে অপার সম্ভাবনা- শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম
শাহ আলম নূর : অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম; পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান। এর আগে তিনি সাধারণ বীমা করপোরেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একাধিকবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সিনেট সদস্য এবং কোষাধ্যক্ষ ছিলেন, পাশাপাশি বাণিজ্য অনুষদের ডিন হিসেবেও তিনি চারবার দায়িত্ব পালন করেছেন।
আমাদের দেশের শেয়ারবাজারে কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে। এখান থেকে অর্থ নিয়ে রয়েছে ব্যবসা সম্প্রসারনের সুযোগ। দেশের রয়েছে অনেক সম্ভাবনা। আমাদের রয়েছে উর্বর ভুমি ও প্রাকৃতিক সম্পদ। তবে এসব সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রধান সমস্যা দক্ষ মানব সম্পদের অভাব। দক্ষ মানব সম্পদের অভাবে নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। দেশের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন বিএসইসি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
প্রশ্ন: বিএসইসিতে দায়িত্ব পালনে আপনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে যদি বলতেন।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন’র (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে প্রায় আড়াই বছর যাবৎ দায়িত্ব পালন করছি। এখানে এখানে আসার আগে বাজার সম্পর্কে যে ধারনা ছিল তার অনেকটুকুই পাল্টে গেছে। এখানে আসার পর দেখলার সবাই সেকেন্ডারি মার্কেট নিয়ে ব্যস্ত। সবাই শুধু সুচক ওঠা নামার দিকে তাকিয়ে থাকে। কোন শেয়ারের দাম করছে আর বাড়ছে সবাই তার দিকে তাকিয়ে থাকছে। এখানে আসার পর আমার প্রাথমিক উপলব্ধি হচ্ছে সময়ের সাথে আসলে ক্যাপিটাল মার্কেটের তেমন উন্নয়ন হয়নি। দেশের অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা হলেই শেয়ারবাজারের সাথে জিডিপির তুলনা করা হয়। বাজারে নতুন প্রোডাক্ট নেই এসব নিয়েও বিভিন্ন কথা হয়। তবে এসবের মুল কারন শেয়ার বাজার সম্পর্কে সুষ্পস্ট ধারনা না থাকা।
আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি বিশ্বের অন্যান্য দেশে ক্যাপিটাল মার্কেট যেভাবে পরিচালনা করা হয় আমাদের এখানে সেভাবে হচ্ছেনা। আপনি ইউরোপ আমেরিকায় দেখবেন এখানে ক্যাপিটাল মার্কেট দেশের অর্থনীতিকে পরিচালনা করে থাকে। এসব দেশে ব্যাংকগুলো ডেবিট, কেডিট কার্ড বিতরন করে থাকে। একই সাথে গাড়ির জন্য ঋণ বিতরন, এলসি খোলা সহ কিছু কাজ করে থাকে। আর আমাদের দেশের ব্যবসা করার জন্য দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ দেয়া সহ ব্যবসা সম্প্রসারনের কাজ করা হয়ে থাকে ব্যাংকের মাধ্যমে। আমরা ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল। এখানে শেয়ারবাজারের ভূমিকা সম্পর্কেই আমরা অবগত নই ।
দেশের অধিকাংশ মানুষ শেয়ারবাজারকে অনেক কঠিন একটি বিষয় বলে মনে করেন। তাছাড়া আমাদের দেশের মানুষেরা শেয়ারবাজার সম্পর্কে লেখাপড়া করতে চায় না, শিখতে চায় না, তদুপরি বুঝতেও চায় না। শেয়ারবাজার সম্পর্কে বুঝে না বলে এটিকে সবাই একটু দূরে রাখতে চায়। গত ৫০ বছরে যাবৎ এভাবেই চলছে আমাদের দেশের শেয়ারবাজার। শেয়ারবাজারে আরো কত রকমের বিকল্প আর্থিক ব্যবস্থা রয়েছে তা আমরা অনেকেই বুঝতে চাই না। আবার বুঝতে চেষ্টাও করি না। এখানে যে অনেক সুযোগ রয়েছে তা নিয়ে অনেকে কাজই করতে চায়না।
আমাদের দেশে শেয়ারবাজার নিয়ে কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু যোগ্য লোকবলের ব্যাপক ঘাটতি থাকায় তেমন কিছুই করা সম্ভব হয়নি। উদাহরনস্বরূপÑ আমি যদি বলি অপশন ফরোওয়ার্ড কি? এ ব্যাপারে অনেকেরই কোন ধারনা নেই। আমি যদি এখন অপশোন ফরওয়ার্ড নিয়ে কাজ করি এ ব্যাপারে অনেকেই বুঝবেন না। তবে সারা পৃথিবিতে অপশন ফরওয়ার্ড নিয়ে কাজ হচ্ছে শুধু আমাদের দেশে হচ্ছে না। আমাদের শেয়ারবাজার বলতে একমাত্র সুচক ওঠা নামাকে বুঝে থাকি। আসলে এর বাইরেও অনেক বিষয় রয়েছে যা শেয়ার মার্কেটে আমরা করতে পারি।
প্রশ্ন: শেয়ার বাজার নিয়ে নতুন কোন পদক্ষেপ সম্পর্কে যদি বলতেন।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: আমাদের দেশের শেয়ার বাজারে কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর বাজার সম্প্রসারনের জন্য অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন আরো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে নতুন যে কোন উদ্যোগ নিলে তা বাস্তবায়নে দক্ষ লোকবল খঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দক্ষ মানব সম্পদের অভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমস্যা হচ্ছে। আমাদের দেশের মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো দক্ষ সিইও খুঁজে পাচ্ছে না। এদিকে ব্রোকারেজ হাউজগুলো পরিচালনা করতে দক্ষ লোক নেই। অর্থাৎ যে দিকে তাকাই দক্ষ লোকের সংকট দেখা যাচ্ছে।
শেয়ারবাজার একটি টেকনিক্যাল বিষয়। এখানে দক্ষ লোকবল তৈরি করতে লেখাপড়া জানা লোক দরকার। আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রচুর পরিমানে লেখাপড়া জানা লোক বের হয়ে আসছে। কিন্তু দক্ষ তৈরি হচ্ছে না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে মিসম্যাচিং এডুকেশন। পাঠ্য বিষয়ের সাথে বাস্তবে চাকরির কোন মিল নেই। আমাদের বিশ^বিদ্যালয় থেকে শুরু করে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে সব শিক্ষার্থীরা লেখা পড়া শেষ করে বের হচ্ছে তারা দক্ষতার অভাবে বেকার থাকছে। দক্ষ লোকের ঘাটতি পূরন করার জন্য আমাদের দেশের বাহির থেকে বিদেশিদের নিয়ে আসতে হচ্ছে। এখানে একটি বিরাট একটি ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়েছে।
আমাদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কারনে আইটি সেক্টরে যে সব লোকের দরকার হচ্ছে তার চাহিদা পূরন করতে বিদেশিদের নিয়োগ দিতে হচ্ছে। দক্ষতার অভাবে আমাদের দেশের ছেলেরা বেকার থাকছে। অপর দিকে দক্ষতার কারনে বিদেশিরা আমাদের এখানে প্রুচর পরিমানে চাকুরী পাচ্ছে। আমাদের পাশ^বর্তী দেশ ভারতে এবং শ্রীলংকায় বিপুল সংখ্যক ছাত্র ছাত্রী আইটি বিষয়ে লেখা পড়া করে বেকার বসে আছে। তারা আমাদের এখানে এ সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে। অথচ দক্ষতার অভাবে আমাদের দেশের ছেলেদের আমরা নিয়োগ দিতে পারছি না। আমাদের দেশের একটি ছেলেকে যেখানে বেতন দিতে হয় ১.৫ লাখ টাকা সেখানে বিদেশিরা ১ লাখ টাকায় তা লুফে নিচ্ছে।
এবার বাংলাদেশে গাড়ি তৈরি করবে কোরিয়ার বিখ্যাত অটোমোবাইল ব্র্যান্ড ‘হুন্দাই’। তারা গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে কারখানা নির্মাণ করছে। বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে ছয় একর জমিতে ওই কারখানা নির্মাণ করা হবে। নির্মাণকাজ শেষ করে খুব শীগ্রই প্রথম ধাপে গাড়ি সংযোজন এবং পরবর্তী সময়ে উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। বর্তমানে ফেয়ার গ্রুপ দেশে স্যামসাং স্মার্টফোন এবং কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস পণ্য উৎপাদন করছে। এবার প্রতিষ্ঠানটি হুন্দাইয়ের সঙ্গে গাড়ির ব্যবসায় নেমেছে। তবে তারা দক্ষ লোকবল খঁজে পাচ্ছে না। আমাদের দেশে যে কয়জন দক্ষ লোক পেয়েছে তাদের সবাইকে তারা নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু গাড়ি বানাবে কে? তারা গাড়ি বানানোর জন্য ভারত, শ্রীলংকা এবং ভিয়েতনাম থেকে লোকবল নিয়ে আসছে। বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে আসন বাড়ানো হচ্ছে। তবে টেকনিক্যাল সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিট বাড়ানো হচ্ছে না। আমি মনে করি হাতে কলমে শিক্ষা দেয়ার জন্য ব্যাপক ভাবে উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে। আমরা বিদেশি লোকবলদের বেতন ভাতা দিতে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করছি। অদূর ভবিষ্যতে এখরচ আরো বাড়বে। কারন দক্ষ লোকের সংকট প্রতিদিন বাড়ছে। বাংলাদেশ থেকে প্রচুর অর্থ বাহিওে চলে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: বিশ^ মন্দার প্রভাব দেশের শেয়ার বাজারে কতটুকু লেগেছে?
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: ইউক্রেন- রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সারা বিশে^ই এখন টালমাটাল অবস্থা বিরাজমান। ফলে কিছুটা প্রভাব আমাদের দেশের শেয়ারবাজারেও লেগেছে। তবে কতদিন এর প্রভাব অব্যাহত থাকবে তা বলা মুশকিল। দুটি দেশের মধ্যে যুদ্ধের কারনে সরবরাহ ব্যবস্থা বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। এতে অনেকক্ষেত্রে প্রভাব পড়েছে। বিশে^র এই অস্থিরতা কত দিন চলবে। আর কিভাবে এর প্রভাব থেকে বের হয়ে আসতে পারি তা কিন্তু আমাদের হাতে নেই। তবে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতে হয়। তিনি আগেই খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। জ¦ালানি সংকট মোকাবেলা করতে ভারত থেকে পাইপ লাইনে তেল আসার মতো একটি ভাল উদ্যোগও নিয়েছেন। এদিকে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারনে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খরচও সাশ্রয় হয়েছে।
প্রশ্ন: বাজারের সাইজ অনুসারে সুচক আরো বৃদ্ধিতে বাধা কোথায় বলে আপনি মনে করেন?
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর সুচক বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৩৫০০ পয়েন্ট। আমাদের দেশের শেয়ার বাজারের সাইজ অনুযায়ী সুচক আরো বৃদ্ধি পাওয়া দরকার। তবে এখন পর্যন্ত তা হচ্ছে না। এর মুল কারন মনস্তাত্তিক সমস্যা। আর বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে অধিকাংশ সময় পার করেছে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে। এক মূহর্ত স্বাভাবিক সময় পাওয়া যায়নি। করোনার কারনে মার্কেট বন্ধ ছিল। দায়িত্ব নেয়ার পর ১৫ দিনের মধ্যে মার্কেট খুলতে হয়েছে। যখন দেশের সকল অফিস বন্ধ। কেউ অফিসে যায় না। ঘরে বসে সবাই কাছ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে মার্কেট খোলা রাখতে হয়েছে। প্রায় ২ বছর কেটেছে করোনার মধ্য দিয়ে। এর পর পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। এতে বাজার তার স্বাভাবিক গতি হারায়। একদিকে করোনা অপর দিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সারা বিশে^র মত আমাদের দেশের শেয়ারবাজারেও এর প্রভাব লেগেছে। আর শেয়ারবাজার শুধু নয় সমগ্র অর্থনীতিতেই এলর প্রভাব পড়েছে।
প্রশ্ন: মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকট মোকাবেলায় করনীয় কেমন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: আমাদের দেশের শেডো অর্থনীতির কারনে মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকট বেশি হচ্ছে। তবে এর থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আমি অনেক আগে থেকে বলে আসছি যে আমাদের এই শেডো অর্থনীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আমাদের শেডো অর্থনীতি রয়েছে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার। দেশে প্রতি বছর প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে বাণিজ্যিক আমদানি প্রায় ৪০ থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ২০ থেকে ২২ বিলিয়ন ডলারের আমদানি হয় গার্মেন্টসের কাঁচা মাল সহ বিভিন্ন কিছু। বাকি ২০ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি হয় বাণিজ্যিক ভাবে। এসব পণ্য আমদানি করতে সরকারকে ট্র্যাক্স দিতে হয়। এখানে রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার জন্য আমদানি ও রপ্তানি মূল্য কম দেখানো হয়ে থাকে। ২০ বিলিয়ন ডলারের যে পণ্য আমদানি করা হয় এটির আসলে দাম ৩০ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার। ট্যাক্স কমানোর জন্য ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলারের দাম কম দেখানো হচ্ছে। এই টাকা হুন্ডি সহ বিভিন্ন মাধ্যমে পরিশোধ করা হচ্ছে। এতে ১০০ টাকার ট্যাক্স ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে চলে আসে। এলসির মাধ্যমে যাচ্ছে ২০ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার। বাকি অর্থ যাচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে। এতে আমাদের রেমিট্যান্সের উপর প্রভাব পড়ছে। আমি অনেক আগে থেকেই বলছি যারা হুন্ডির ব্যবসার সাথে জড়িত তাদের নিয়ন্ত্রন করতে হবে। হয়তো আপনি সবাইকে নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন না। তবে তাদের একটু চাপে রাখতে পারবেন। এতে হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন যদি ৫ বিলিয়নও কমানো সম্ভব হয় তবে সেই অর্থ আমাদের মুল অর্থনীতিতে যোগ হবে। তখন ট্যাক্স ঠিক ভাবে আদায় হবে। এতে যে কোন জিনিসের মূল্য সঠিক ভাবে নির্ধারন করা সম্ভব হবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে হুন্ডি ব্যবসায়িদের নিয়ন্ত্রনে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। এই কাজটি যদি আরো আগে করা যেত তবে আমাদের রিজার্ভ আরো বৃদ্ধি পেত।
প্রশ্ন: প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে বাধা কোথায়?
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারিরা তাদের বিনিয়োগ আরো বৃদ্ধি করতে চায়। তবে এক্সপোজার লিমিটের কারনে সমস্যা হচ্ছে। কারন এদের মধ্যে অনেকে ব্যাংক ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করে থাকে। আবার অনেকে নিজেরাই ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কারনে কিছু সমস্যা হচ্ছে।
প্রশ্ন: ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারিদের নিরাপত্তার জন্য যেসব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে তা নিয়ে যদি কিছু বলেন।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: আমাদের দেশের শেয়ার বাজারে অধিকাংশই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারি। তারা বিভিন্ন সময় গুজবের পিছনে ছুটে থাকে। আর এই সুযোগে অনেকে বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়িয়ে থাকে। এদের কারনে এসব বিনিয়োগকারি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে। যারা এসব গুজব ছড়িয়ে থাকে তাদের নিয়ন্ত্রন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে । আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্য, র্যাব, পুলিশ, সিআইডি সহ সকলে বেশ তৎপর। যার প্রেক্ষিতে বেশ কয়েকজনকে শাস্তির আওতায় ও ইতোমধ্যে আনা হয়েছে। এতে বাজারে গুজব সৃষ্ঠিকারিরা এখন আতংকের মধ্যে আছে। বাজারে গুজব সৃষ্টির পরিমান অনেকাংশ কমে এসেছে।
প্রশ্ন: আমাদের দেশের সম্ভাবনা নিয়ে যদি কিছু বলতেন।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: আপনি আমাদের দেশের অর্থনীতির যে দিকে তাকাবেন শুধু সম্ভাবনা দেখতে পারবেন। এ সম্ভাবনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আমাদের দেশের মাথা পিছু আয় প্রায় ২৮০০ ডলার। আমাদের দেশে মাটি ও পানির যে সম্ভাবনা রয়েছে তা ১৫০০০ ডলারে নিয়ে যাওয়া মাত্র সময়ের ব্যাপার। আপনি দেখবেন আমাদের দেশে যে কোন স্থানে শুধু মাত্র বীজ ফেলে দিলে ফসল উৎপাদন হচ্ছে। এমন উর্বর ভুমি আপনি বিশে^র অন্য কোন দেশে পাবেন না। এটিই আমাদের সবচেয়ে বড় সম্ভাবনার জায়গা। অর্থাৎ সব জায়গায় সবুজ ভুমি। সব জায়গায় কাজের সুযোগ রয়েছে। আমাদের জনশক্তির সাথে উর্বর ভুমি আছে। বিদ্যুৎ আছে। এমন অবস্থায় দেশের উন্নয়নের জন্য অন্য কোন কিছুর প্রয়োজন হয় না। শুধু দক্ষতা বাড়লেই কর্মসংস্থান বেড়ে যাবে। আর একজন লোকও যদি বেকার না থাকে তবে আর কোন সমস্যা থাকবেনা বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন: নতুন বিনিয়োকারিদের উদ্দেশ্যে আপনার পরামর্শ।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: দেশের শেয়ার বাজারে প্রতিদিন অনেক নতুন বিনিয়োগকারি আসছেন। যদি শেয়ারবাজার না বুঝে থাকেন তবে বলবো তারা তাদের বিনিয়োগের নিরাপত্তার জন্য বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। এখানে ঝুঁকি কম। বছর শেষে বিনিয়োগকারির লাভ নিশ্চিত। আর যদি শেয়ারবাজার সম্পর্কে বুঝে তবে সেকেন্ডোরি বাজারে লেনদেন করতে পারেন।
প্রশ্ন: এসএমই খাতের সম্ভাবনা নিয়ে কি বলবেন?
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম: আমাদের দেশের এসএমই খাতে অবশ্যই বিনিয়োগ করতে হবে। একই সাথে আর্থিক যোগানও নিশ্চিত করতে হবে। কারন মুক্তিযুদ্ধের পর সবাই ফাস্ট জেনারেশন ব্যবসায়ী। পাকিস্তানিরা যখন ছিল তখন তারা আমাদের ব্যবসা করতে দিত না। তারাই ছিল সবকিছুর মালিক। আর আমরা তাদের প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করতাম। ঐ সময় ব্যবসায়ী পরিবার ছিল খুবই কম। এখন যারা ব্যবসা পরিচালনা করছে তারা সেকেন্ড বা থার্ড জেনারেশন। এদের সবাইকে জিরো থেকে শুরু করতে হচ্ছে। তারা তৈরি কিছু পায়নি। এক সময় আমাদের সব কিছু আমদানি করতে হতো। আমরা কিছুই বানাতে পারতাম না। এখন আমাদের দেশে প্রচুর শিল্পায়নের সুযোগ রয়েছে। আমরা ৫০ বিলিয়ন গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি করি। এর কাঁচা মাল হিসেবে ২০ বিলিয়ন আমদানি করতে হয়। এজন্য এসএমই খাতের যত উন্নতি হবে ততই আমদানি নির্ভরতা থেকে বের হয়ে আসা যাবে। আমদানি নির্ভরতা কমাতে পারলে আমাদের আর পিছনে তাকানোর কিছু নেই।