ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ ১৫ হাজার কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি বছরের শুরুর দিকে সরকার ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছিল, তার চেয়ে বেশি পরিশোধ করেছিল। তবে হঠাৎ ব্যাংকিং সেক্টর থেকে ঋণ নেয়া বাড়িয়েছে সরকার। গত এক মাসে ব্যাংকিং সেক্টর থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ১৩ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে সরকারের ব্যাংক থেকে নিট ঋণ ১২ হাজার ৫২৬ কোটি বেড়ে স্থিতি দাঁড়ায় ২ লাখ ৮২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। এক মাস আগে আগস্ট শেষে এ ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাস সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ১৩ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।
তবে সরকারের ঋণ এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকমুখী। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণের চাহিদা বাড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরের তিন মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১৬ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। একই সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকে সরকারের ঋণ কমেছে ৪ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। ফলে সরকারের নিট ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা।
ঋণ বাড়ার বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকারের খরচ বেড়েছে। ব্যয়ের চেয়ে আয় কম হওয়ায় বাড়তি অর্থের চাহিদা মেটাতে এখন ব্যাংক থেকে ঋণ করছে। তবে সরকার তিন মাসে যে পরিমাণ ব্যাংক ঋণ নিয়েছে তা তাদের লক্ষ্যের চেয়ে বেশি নয়। তাই এ ঋণ নিয়ে তেমন শঙ্কারও কারণ নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ না নিয়ে উল্টো পরিশোধ করেছিল সরকার। গত আগস্ট পর্যন্ত দুই মাসে ব্যাংক থেকে সরকারের নিট ঋণ ৯৫৫ কোটি টাকা কমে ২ লাখ ৬৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকায় নেমেছে। যদিও জুন শেষে স্থিতি ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংক ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নেবে বলে লক্ষ্য ঠিক করছে সরকার। এ অঙ্ক চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা বেশি। আগের অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ছিল। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস (জুলাই-আগস্ট) ১৪ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র জমা বা বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ১৪ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্রের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের পর এ খাতে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪০১ কোটি টাকা।
এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের মধ্যেও ডলার বিক্রি বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে ৯৭ টাকায়। গত বৃহস্পতিবার কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ১৩ কোটি ডলার বিক্রি করে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০০ কোটি ডলারে। এর বিপরীতে বাজার থেকে ৩৮ হাজার কোটি টাকার মতো উঠে এসেছে। গত অর্থবছর ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়। এভাবে ডলার বিক্রির ফলে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে ওঠা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে।
জানা যায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে খাদ্য ও জ্বালানি বাজারের অস্থিরতাসহ নানা কারণে শুরুতে সরকার ব্যয় সংকোচনের দিকে বেশি মনোযোগী হয়। এছাড়া অর্থবছরের প্রথম মাসে রাজস্ব আয়েও ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং বিদেশি অনুদান এবং ঋণ বেড়েছে। এ দুয়ের প্রভাবে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ কম নিয়েছে। তবে এখন কিছু প্রকল্প চালু হয়েছে। আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব বাজারে খাদ্য ও জ্বালানির দাম বেড়েছে। ফলে সরকারের খাদ্য ও জ্বালানি আমদানিতে আগের চেয়ে বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। তবে যে হারে অর্থ খরচ বেড়েছে, সে হারে আয় না বাড়ায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। তাই ব্যাংক ঋণে ঝুঁকছে সরকার।