আজ: বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৮ অক্টোবর ২০২২, শুক্রবার |

kidarkar

আইএমএফের পরামর্শে রিজার্ভ হিসাবায়ন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেদের নিয়মে হিসাব করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেশি দেখাচ্ছে এমন অভিযোগ তুলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। ফলে রিজার্ভ কত? এ নিয়ে শুরু হয় নানা বিতর্ক। এর অবসান হচ্ছে। আগামীতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি অনুসরণ করেই দেশের রিজার্ভ হিসাবায়ন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। তবে বর্তমানে প্রেক্ষাপটে রিজার্ভ ইস্যুটি খুবই স্পর্শকাতর হওয়ায় কবে নাগাদ এই পদ্ধতি শুরু হবে তার সুনির্দিষ্ট সময় বলা হয়নি।

বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফের প্রতিনিধিদের বৈঠক এমন সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। প্রতিনিধি দল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত  বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ৬ সেশনে বৈঠক করে। প্রথম পর্বে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিনটি সেশন হয়। প্রথম প‌র্বের বৈঠ‌কে বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণসহ আর্থিক খাতের সংস্কার, নীতি ও ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা নিয়ে আলোচনা হ‌য়। বিকেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ এবং অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের সঙ্গে বৈঠকে বসে প্রতিনিধি দল। এসময় রিজার্ভসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

বিকেলের সেশন সম্পর্কে বৈঠকে থাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে রিজার্ভ হিসাবায়ন পদ্ধতি নিয়ে জানতে চাওয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আমরা নীতিগতভাবে একমত। আগামীতে আন্তর্জাতিক হিসাব পদ্ধতি অনুসরণ করেই রিজার্ভ হিসেবে হিসাবায়ন করব। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক এখন যে পদ্ধতিতে হিসাব করে সেটাও প্রকাশ করবে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে রিজার্ভের বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় কবে নাগাদ এই পদ্ধতি শুরু হবে জানাতে পারেনি।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে হিসেবের পরামর্শ দিচ্ছে আইএমএফ। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেদের মতো করেই হিসাব করছে। সেই হিসাবে বর্তমানে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ ৩৫ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। তবে আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি অনুসরণ করলে যা কমে দাঁড়াবে ২৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন ডলার হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারবে বাংলাদেশ।

বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসেব হয় আইএমএফের ব্যাল্যান্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন (বিপিএম ৬) ম্যানুয়াল অনুযায়ী।

তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের নিট ও মোট হিসাব করে বাংলাদেশ। নিট হিসাব থেকে ইডিএফ সহ বিভিন্ন তহবিলে জোগান দেওয়া অর্থ বাদ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের গ্রস বা মোট হিসাবটাই প্রকাশ করে আসছে।

সেই হিসাবে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) এর সরবরাহ করা সাত বিলিয়ন ও শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া ২০ কোটি ডলার রিজার্ভে দেখাচ্ছে। এছাড়া গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ) ২০ কোটি, লং টার্ম ফিন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি (এলটিএফএফ) তহবিলে ৩ কোটি ৮৫ লাখ, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমানকে ৪ কোটি ৮০ লাখ এবং ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইটিএফসি) এর আমানত রিজার্ভে দেখাচ্ছে। সবমিলিয়ে বর্তমানে রিজার্ভে যে অর্থ দেখানো হচ্ছে, সেখান থেকে ৮ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার বাদ যাবে বলে মনে করে আইএমএফ।

এর আগে প্রথম পর্বে আইএমএফ ঋণ বৈঠকে বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ জানান, আইএমএফ ঋণ পাবে কি-না সে বিষয়ে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত হবে। তিনি জানান, আইএমএফের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আজ মিটিং করেছে। আগামী ৩০ ও ৩১ অক্টোবর এবং ২ ও ৮ নভেম্বর আবার বৈঠক হবে।

বৈঠকে থাকা কর্মকর্তা জানান, প্রথম প‌র্বের বৈঠ‌কে বাংলাদেশকে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয়ে আইএমএফ-এর দিক থেকে যে আশ্বাস র‌য়েছে, সেটি নিয়ে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হ‌য়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স‌ঙ্গে আলোচনায় ঋণ দেওয়ার বিষ‌য়ে আইএমএফ কো‌নো শর্ত দেয়নি। ত‌বে আর্থিক খাতের সংস্কার, নীতি ও ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা নিয়ে আলোচনা হ‌য়ে‌ছে। ডলা‌রের বি‌নিময় হার প্রস‌ঙ্গে কথা হয়েছে। বৈঠকে প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলারের ভিন্ন ভিন্ন রেট সম্পর্কে জানতে চায়। জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, তা‌দের রেট ৯৭ টাকা আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগু‌লোর রেট বাজা‌রের ওপর ছে‌ড়ে দেওয়া হ‌য়ে‌ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আগামীতে অনুষ্ঠেয় বৈঠকগু‌লো‌তে রিসেন্ট মনিটরিং ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড আউটলুক, ইন্টারেস্ট রেট ডেভেলপমেন্ট, সরকারি বন্ড, মনিটারি এক্সচেঞ্জ রেট, রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট, ব্যাংকিং ইস্যুস, ব্যালেন্স অব পেমেন্ট, এক্সটার্নাল লোন ডিসবার্সমেন্ট আইএমএফ টিএ রিপোর্টস, রিসেন্ট ট্রেড পারফর্মেন্স, রিসেন্ট এক্সচেঞ্জ পারফর্মেন্স, রিস্ক বেসড সুপারভিশন এবং টেকনিক্যাল মিটিং অন এএমএলের বিষয়ে আলোচনা হবে।

এছাড়া ফাইন্যান্সিয়াল ডেটা, অন্যান্য বড় চ্যালেঞ্জ, বপ রেটেড ম্যাটার্স, মনিটারি পলিসি স্ট্র্যাটেজি, এক্সচেঞ্জ রেট প্রেসার, ইনস্টিটিউশনাল অটোনমি অ্যান্ড গভর্নেন্স, কমার্শিয়াল ব্যাংক পারফরমেন্স এবং এফএসএপি আপডেটের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশের জন্য আগামী ঋণ কর্মসূচি ছাড়াও আর্থিক খাতের সংস্কার, নীতি ও ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা নিয়ে আলোচনা করতে আইএমএফ’র প্রতিনিধি দলটি ১৫ দিনের সফরে এসেছে। ঢাকায় অবস্থানের সময় অর্থ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, পরিকল্পনা কমিশনসহ আরও কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করবে। এসময় বাংলাদেশের জন্য আগামী ঋণ কর্মসূচি ছাড়াও আর্থিক খাতের সংস্কার, নীতি ও ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা নিয়ে আলোচনা করবে।

 

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.