আজ: শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৯ অক্টোবর ২০২২, শনিবার |

kidarkar

ভবিষ্যতে পিপিপি ছাড়া আমাদের উপায় নেই: সালমান

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান বলেছেন, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টারশিপ (পিপিপি) ছাড়া আমাদের উপায় নেই।

শনিবার (২৯ অক্টোবর ) এফবিসিসিআই মিলনায়তনে ‘দ্য রোল অব পিপিপি ইন এচিভিং ভিশন ২০৪১’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। সভায় মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) সভাপতি ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সিইই নাসের এজাজ। প্যানেল আলোচনা করেন পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ, পিপিপির উপদেষ্টা মোহাম্মদ হাসান হায়দার, এফবিসিসিআই প্যানেল উপদেষ্টা ড. শামসুল হক এবং এফবিসিসিআই পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী।

সালমান এফ রহমান বলেন, পিপিপি অথরিটি করার পর যেসব প্রজেক্ট হয়েছে, আপনারা (ব্যবসায়ী) সেগুলোর কথা বলেছেন, এটা অনেক আগে থেকেও হয়েছে। স্বাধীনতার সময় আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল জিরো রিজার্ভ ছিল। আমরা জিটুজি প্রক্রিয়ায় আমদানি করতাম। ঠিক সে সময় বঙ্গবন্ধুর সাথে আমি দেখা করেছিলাম এবং বলেছিলাম যেহেতু আমাদের সমস্যা, আমরা বেসরকারি খাতে মুভ করছি না কেনো। উনি বলেছিলেন তোমরা এটা করতে পারো, কিন্তু ৬০ পার্সেন্ট ট্র‍্যাডিশনাল এবং নন-ট্র‍্যাডিশনাল ৪০% রপ্তানি করতে হবে। উনি এটা বিশ্বাস করেছিলেন, দেশকে এগিয়ে যেতে হলে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে নিতে হবে।

তিনি বলেন, ঠিক একই ধারবাহিকতায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যখন ক্ষমতায় আসলেন, তিনি ৯৬ সালে বেসরকারি এয়ারলাইন্সকে লাইসেন্স দেন। আমি যেটা বলতে চাই, আজকে যে ডেভেলপমেন্ট হয়েছে, এর মূল কারণ অনেকগুলি। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কারন আমাদের বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের পরই আমরা আমাদের অর্থনৈতিক গ্রোথটা করতে পেরেছি।

সালমান বলেন, আজকে আমাদের যে পাওয়ার জেনারেশন ক্যাপাসিটি আছে, তার ৫৪ শতাংশ বেসরকারি খাতের। বেসরকারি খাতকে আনতে চাইলে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বিদ্যুৎ খাতে যেভাবে কাজ হয়েছে আমি মনে করি, পিপিপি অথরিটিতেও এভাবে কাজ করার সুযোগ আছে।

তিনি বলেন, দু’টো সমস্যা আছে৷ একটা হল, পিপিপি অথরিটির কাজ হল প্রজেক্ট খোঁজা। প্রস্তাব আসার পর পিপিপির কাজ হল সে অনুযায়ী কাজ করা। বিশেষ করে যতগুলো পিপিপি আসতেছে, যারা প্রস্তাব দিচ্ছে, তার বলছে আমি যদি পাই এটা আমি করব। যখন, তারা কাজ পায়, তখন তারা ফাইনান্সিং খুঁজে বেড়াচ্ছে, ইনিভেস্টর খুঁজে বেড়াচ্ছে। এটা একটা সমস্যা।

আমাদের একটা ফাস্ট ট্র‍্যাক করে নিতে হবে। যে প্রস্তাব দিবে, তার কাছে এভিডেন্স দিতে হবে। যে ইক্যুইটিও আমার কাছে আছে, লোনও আমার কাছে। তাহলে আর সমস্যা হবে না। বাস্তবিক অর্থেই পিপিপির অনেক সুযোগ আছে। এখন যখন আমাদের রিজার্ভ কমে আসছে, যে ইকোনমিক কন্ডিশন গ্লোবালি এ অবস্থায় আমাদের পিপিপির প্রজেক্টের দিকে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে।

দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে টেকনোলজি। আমরা দেখেছি কাগজে কলমে দেখা যায় তাদের স্বক্ষমতা আছে। কন্ট্রাক্ট দিয়ে দেয়ার পর দেখা যায়, তাদের স্বক্ষমতা নেই। প্রুভেন টেকনোলজি দেখাতে হবে এবং যেটা বললাম ফাইনান্সিং তোমার কাছে আছে।

তিনি বলেন, একটা বড় সমস্যা হচ্ছে ঋণখেলাপী। কিন্তু, এই সমস্যাটা আছে। অন্যান্য দেশে সমাধান আছে। কেউ যদি খেলাপী করে, তাকে একটা এক্সিট দিতে হবে। কোম্পানিকে টেকওভার করে রি-স্ট্রাকচার করেন। যে শাস্তি পাবে, তাকে শাস্তি দেন। কিন্তু, কোম্পানিটাকে রি-স্ট্রাকচার্ড করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যে খেলাপি করে তাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। খেলাপি দুই ধরনের। এক ইচ্ছাকৃত খেলাপি হয়। আরেকটা হল আসলেই সে খেলাপি। এ জন্য আমরা ব্যাংকিং আইন পরিবর্তনের চেষ্টা করছি।

সালমান বলেন, আমরা পিপিপি অথরিটির সঙ্গে বসব। দেখি এই আইনে সবকিছু করা যায় কি না। না হলে এই আইনও সংশোধন করব।

শত চেষ্টা করেও আমরা টেক্স নেটটা বড় করতে পারছিনা। যারা একবার ট্যাক্স নেটে ঢুকে গেছে তাদের উপরই আমরা বাড়াচ্ছি। নতুন কাউকে ইনক্লুড করতে পারছিনা। যদি কোম্পানি ছোট হয়, কম ট্যাক্স দেবে, বড় হলে বেশি দিতে হবে। কিন্তু, ট্যাক্স সবাইকেই দিতে হবে।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, সরকারের সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মেলবন্ধন ঘটে বঙ্গবন্ধুর আমলে। তখন, পিপিপি বলা হত না। বারডেম হাসপাতাল, মেঘনা পাওয়ারপ্ল্যান্ট, হরিপুর পাওয়ারপ্ল্যান্টসহ না প্রকল্পের উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, প্রাইভেট খাতকে আমরা ড্রাইভিং সিটে বসাবো। বৎসর অনুযায়ী কোন বছর কত বিনিয়োগ হবে৷ ২০০৯-১০ সালের দিকে প্রথম পিপিপি বাজেট আসে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সময় ছিল সরকারি বিনিয়োগ ৮৫ শতাংশ আর বেসরকারি বিনিয়োগ ১৫ শতাংশ। পরে আমরা ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে দেখি সরকারি বিনিয়োগ ১৫ শতাংশ, আর বেসরকারি বিনিয়োগ ৮৫ শতাংশ।

শামসুল বলেন, পিপিপিতে পাইপলাইনে থাকা ৭৭টা কোম্পানির আকার ৩৬ বিলিয়ন ডলার। এসডিজি এ্যাকশন প্লান করার সময় প্রাইভেট সেক্টর ৪২ শতাংশ, পাবলিক সেক্টর ৩৫ শতাংশ এবং পিপিতে রাখা হয়েছে ৫.৯ শতাংশ। পিপিপিকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে ১৭টা মন্ত্রণালয়, ২৬ টা এজেন্সি। আমরা পিপিপিতে খুব ভালোভাবেই যাব।

তিনি বলেন, পিপিপি বাস্তবায়নে আমাদের মতো দেশের লাগে ২৪ মাস আর উন্নত দেশে লাগে ১৪ মাস। আমাদের প্রাইভেট সেক্টরকে আরও কীভাবে গুরুত্ব দেয়া যায় সেটা দেব।

তিনি আরও বলেন, এফবিসিসিআই সভাপতি বলেছেন তাদের প্রতি নাকি আমাদের বিশ্বাস কমেছে তাই একত্রে কাজ করা যাচ্ছে না। আমি বলব হাই পারফরমিং বেসরকারি ব্যাংকগুলো কীভাবে লোন নেয় এবং পরবর্তীতে তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে সেটার দিকে আপনারা নজর দিন।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঝিলমিল প্রকল্প, পূর্বাচলে পানির সংযোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার ওরিয়ন গ্রুপ করছে। এটাকে আমরা আরোও বাড়াবো। ১.৫ শতাংশ মোট জিডিপির পিপিতে আসুক, এটা আমরা প্রস্তাব রেখেছি। বাংলাদেশের সবচেয়ে গৌরবের বিষয় হল, আমরা সড়ক ইনফ্র‍্যাস্ট্রাকচারের আওতায় এনেছি সমস্ত এলাকায়। আমরা পিপিপিতে যাব, কারন সরকারের পক্ষে একা বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়। কাজেই সব চেয়ে বেশী দেখতে হবে কিভাবে প্রাইভেট সেক্টরকে আরোও বেশী সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।

এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ইমোশনাল ডিসিশন থেকে আমাদের বের হতে হবে। পিপিপির জন্ম থেকে এই পর্যন্ত এখনো সাকসেস হয় নাই। তবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হলে কিছুটা উন্নয়ন মিলবে।

তিনি বলেন, পিপিপিতে বিশ্বাস করতে হবে। আমাদের মতের সঙ্গে আপনাদের (সরকার) কাট পেস্ট করতে হবে। কোনক দ্বিমত থাকা যাবে না। পিপিপি করেছি যেন আমরা একসঙ্গে সামনে এগিয়ে যেতে পারি। আমি আশা করি আজ একটা স্মারক (মেমোরেন্ডা) হবে।

পিপিপি অথরিটির সিইও মোহাম্মদ ইবরাহীম বলেন, পিপিপি প্রজেক্ট করতে গেলে সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে আস্থাহীনতা। সরকার বিশ্বাস করছে না প্রাইভেট সেক্টরকে। প্রাইভেট সেক্টর বিশ্বাস করছে না সরকারকে। আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, পিপিপির যে পার্টনার তাকে আমরা পার্টনার হিসেবে বিবেচনা করি না, তাকে আমরা কন্ট্রাক্টর হিসেবে দেখতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের চলমান যে প্রজেক্ট আছে, এগুলোর সুফল যখন পেতে শুরু করব, তখন সবার আস্থা ফিরবে।
এছাড়া, ওয়াটার সাপ্লাই, স্যানিটেশন এবং মিউনিসিপ্যাল ওয়াস্টেজে আগামী দিনে পিপিপি ভূমিকা রাখতে পারবে।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.