ম্যারিকোর অপরিশোধিত লভ্যাংশের টাকা ব্যাবসায় খাটানোর অনুমতি
নিজস্ব প্রতিবেদক: ডলার সঙ্কটের কারণে তিন ধাপে ঘোষিত নগদ লভ্যাংশ বিদেশি শোয়াহোল্ডারদের কাছে পাঠাতে পারছে না পুঁজিবাজারে ওষুধ ও রসায়ন খাতে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি ম্যারিকো বাংলাদেশ। ফলে, পরিশোধ না করা ওই লভ্যাংশের টাকা বাংলাদেশে ব্যবসায় খাটাতে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল (কার্যকরী মূলধন) হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি চেয়ে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে আবেদন করেছে কোম্পানিটি। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডলার সঙ্কট শেষ না হওয়া পর্যন্ত ম্যারিকো বাংলাদেশকে বিদেশি শেয়ারহোল্ডারদের পরিশোধ না করা লভ্যাংশের টাকা ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে কমিশন।
এর আগে বিষয়টি জানিয়ে বিএসইসির কাছে আবেদন করে ওই ম্যারিকো। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি অনুমোদন দিয়ে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছে কমিশন।
ডলার সঙ্কটের কারণে কোম্পানিটি তিন ধাপে ঘোষিত ২০২২ সালের সমাপ্ত হিসাব বছরের চূড়ান্ত এবং ২০২৩ সালের সমাপ্ত হিসাব বছরের প্রথম ও দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ কোম্পানিটির বিদেশি শেয়ারহোল্ডাররা (ভারতের ম্যারিকো লিমিটেডসহ অন্যান্য) নিয়ে যেতে পারছে না। তাই, ডলার সঙ্কট শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের লভ্যাংশের টাকা ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। বিএসইসির এ অনুমতির ফলে কোম্পানিটি ওই লভ্যাংশের টাকা ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ব্যবহার করবে।
বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কমিশন ম্যারিকো বাংলাদেশের বিদেশি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশের টাকাকে তাদের ব্যাংক হিসাব থেকে অন্য একটি ব্যাংক হিসাবে হস্তান্তর করার অনুমতি দিয়েছে। ডলার সঙ্কটের কারণে ২০২১-২২ হিসাব বছরের ২২৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকার চূড়ান্ত লভ্যাংশ এবং ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথম ও দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী লভ্যাংশের টাকা ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য বিএসইসির নির্দেশনা অনুসারে নির্ধারিত লভ্যাংশ ব্যাংক হিসাব থেকে কোম্পানির নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করবে। সে বিষয়ে পরবর্তী সময়ে বিএসইসির কাছে তথ্য হালনাগাদ করতে বলা হয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের গত ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ম্যারিকো বাংলাদেশের পরিচালনা পর্ষদের সভায় চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর, ২০২২) ও অর্ধবার্ষিক (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর, ২০২২) নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। আলোচ্য দ্বিতীয় প্রান্তিকের কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ৩০.৮৫ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ২৮.৪৫ টাকা। এছাড়া, দুই প্রান্তিক মিলে বা অর্ধবার্ষিকে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৬৩.৫১ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল ৬২.৭৩ টাকা। গত ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৫৩.৮৮ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির এনএভি ছিল ৭৪.৬৯ টাকা।
এর আগে ২৮ সেপ্টেম্বর ডিএসইর ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়, চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন, ২০২২) জন্য ঘোষিত দ্বিতীয় অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ বিইএফটিএন সিস্টেমসের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছে ম্যারিকো বাংলাদেশ। প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ করেছিল কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। এর আগে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের জন্য প্রথম ৪৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে ম্যারিকো বাংলাদেশ।
এদিকে, সর্বশেষ ৩১ মার্চ সমাপ্ত ২০২২ সালের সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য ২০০ শতাংশ চূড়ান্ত নগদ লভ্যাংশের বাইরে ৬০০ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। সে হিসেবে কোম্পানিটি মোট ৮০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল। সর্বশেষ হিসাব বছরে ম্যারিকো বাংলাদেশের শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ১১২.৮২ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ৯৮.৬৯ টাকা।
প্রসঙ্গত, ম্যারিকো বাংলাদেশ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০৯ সালে। ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটির মোট পরিশোধিত মূলধন ৩১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৩ কোটি ১৫ লাখ। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে ৯০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৬.৫৫ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ১.৯৬ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ১.৪৯ শতাংশ শেয়ার আছে। সোমবার (৭ নভেম্বর) ম্যারিকো বাংলাদেশের শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৪২১.৫০ টাকায়।