রিটার্ন জমা দিলে ২৭ খাতে মিলবে কর অব্যাহতি
নিজস্ব প্রতিবেদক : আইন অনুযায়ী আয়কর বিবরণী জমা দেওয়ার সময় যথাযথভাবে হিসাব-নিকাশ করেই করদাতা কর পরিশোধ করে থাকেন। তবে সরকার ঘোষিত ২৭ ধরনের খাত রয়েছে, যেখান থেকে অর্জিত আয়ে কর অব্যাহতি পাওয়া যাবে।
অর্থাৎ ওই খাতগুলো থেকে আয় করলেও করদাতাকে কোনো কর দিতে হবে না। তবে শর্ত হলো করদাতার করমুক্ত এবং কর অব্যাহতি প্রাপ্ত আয় থাকলে তা রিটার্নে উল্লেখ করতে হবে।
এনবিআর ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের আয়কর নির্দেশিকা অনুসারে করমুক্ত বা কর অব্যাহতি প্রাপ্ত আয়ের খাতগুলো হচ্ছে-
• সরকারি চাকরিজীবী করদাতা যদি চাকরির দায়িত্ব পালনের জন্য কোনো বিশেষ ভাতা, সুবিধা বা আনুতোষিক পান।
• সরকারি বা অনুমোদিত পেনশন থেকে আয় করমুক্ত।
• অংশীদারি ফার্ম থেকে পাওয়া মূলধনী মুনাফার অংশ করের আওতার বাইরে থাকবে।
• ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত সরকারি বা অনুমোদিত গ্র্যাচুইটি কর অব্যাহতি সুবিধা পাবে।
• প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাক্ট ১৯২৫ অনুযায়ী উক্ত ফান্ড থেকে প্রাপ্ত অর্থ করমুক্ত।
• স্বীকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে পাওয়া অর্থ।
• স্বীকৃত সুপার অ্যানুয়েশন ফান্ড থেকে পাওয়া অর্থ।
• ২০০৬ বাংলাদেশ শ্রম আইনের আওতায় প্রতিষ্ঠিত ওয়ার্কার্স পার্টিসিপেশন ফান্ড থেকে কোনো ব্যক্তির ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া অর্থে কর সুবিধা পাবেন।
• মিউচ্যুয়াল ফান্ড অথবা ইউনিট ফান্ড থেকে পাওয়া ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়। যেমন- সুদ, মুনাফা বা ডিভিডেন্ড।
• স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি থেকে পাওয়া নগদ লভ্যাংশের খাতের আয় ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত কর অব্যাহতি সুবিধা ভোগ করবে।
• সরকারি নিরাপত্তা জামানতের সুদ যা সরকার করমুক্ত বলে ঘোষণা করেছে।
• রাঙামাটি, বান্দরবন ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার আদিবাসী পাহাড়িদের নিয়ে জেলাগুলোতে পরিচালিত আর্থিক কর্মকাণ্ড থেকে পাওয়া আয়।
• আয়কর অধ্যাদেশের আওতায় জারি করা কোনো প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কর অব্যাহতি বা হ্রাসকৃত কর হারের সুবিধা গ্রহণকারী করদাতা ব্যতীত অন্যান্য করদাতার রফতানি ব্যবসা থেকে পাওয়া আয়ের ৫০ শতাংশ কর অব্যাহতি সুবিধা পাবে।
• আয়ের একমাত্র উৎস ‘কৃষি খাত’ হলে সেখান থেকে আয়ের ২ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত।
• সফটওয়্যার তৈরিসহ তথ্য-প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট কয়েকটি খাতের ব্যবসার আয়।
• হাঁস-মুরগির খামার থেকে অর্জিত আয়ের ক্ষেত্রে প্রথম ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে করমুক্ত সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে পরবর্তী ১০ লাখ টাকা আয়ের ওপর ৫ শতাংশ হারে এবং অবশিষ্ট আয়ের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর প্রদেয় হবে।
• চিংড়ি ও মাছের হ্যাচারি এবং মৎস্য চাষ থেকে অর্জিত আয়ের ক্ষেত্রে প্রথম ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত কর অব্যাহতি পাবে। তবে এর পরবর্তী ১০ লাখ টাকা আয়ের ওপর ৫ শতাংশ হারে, পরবর্তী ১০ লাখ টাকা আয়ের ওপর ১০ শতাংশ হারে এবং অবশিষ্ট আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদেয় হবে।
• কিছু ক্ষেত্র ছাড়া ব্যক্তি-করদাতা কর্তৃক স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার বিক্রয় থেকে অর্জিত মূলধনী মুনাফা।
• হস্ত শিল্পজাত দ্রব্যাদি রফতানি থেকে উদ্ভূত আয়।
• জিরো কুপন বন্ড থেকে উদ্ভূত আয়।
• ওয়েজ ওনার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড , পাউন্ড স্টার্লিং প্রিমিয়াম বন্ড, পাউন্ড স্টার্লিং ইনভেস্টমেন্ট বন্ড, ইউরো প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউরো ইনভেস্টমেন্ট বন্ড থেকে পাওয়া সুদ।
• পেনশনের সঞ্চয়পত্র থেকে পাওয়া সুদ। কোনো আয় বছরে করদাতার পেনশনের সঞ্চয়পত্রে পুঞ্জীভূত বিনিয়োগের পরিমাণ ৫ লাখ টাকা অতিক্রম না করলে কর অব্যাহতি সুবিধা পাবেন।
• পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের আয়। নারী উদ্যোক্তা ছাড়া অন্যদের জন্য বার্ষিক টার্নওভার ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত এবং নারী উদ্যোক্তার জন্য বার্ষিক টার্নওভার ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত।
• বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে পাওয়া সম্মানী বা ভাতা কিংবা সরকারের দেওয়া কল্যাণ ভাতা।
• সরকারের কাছ থেকে পাওয়া কোনো পদক ও পুরস্কার।
• প্রবীণ হোম কেয়ার পরিচালনা থেকে অর্জিত আয়।
• বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের দেশের বাইরে উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশে আনলে তা করমুক্ত সুবিধা ভোগ করবে।
প্রসঙ্গত, করমুক্ত আয়গুলো করদাতার মোট আয়ে অন্তর্ভুক্ত হবে না। তবে শর্ত থাকে এটি রিটার্নে করমুক্ত আয়ের কলামে প্রদর্শন করতে হবে।