সংকটের মধ্যেই সম্ভাবনা আছে: আজিজ খান
নিজস্ব প্রতিবেদক: সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ খান বলেছেন, এখন বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ বিরাজমান। প্রায় সব দেশই এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলছে। উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে উদ্যোক্তাদের কেউ দমিয়ে রাখতে পারে না, যেমন- যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন। আমাদের উদ্যোক্তারা এরকমই। এই সংকটের মধ্যেই সম্ভাবনা আছে।
বুধবার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর রেডিসন হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘ইন্টারন্যাশনাল উইমেন ইন্টারপ্রেনিয়রস সামিট-২০২২’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। দুই দিনব্যাপী যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিল (বিআইবিসি) ও বাংলাদেশ ইনভেসমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা)। প্রথম দিনে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর একাধিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে মোহাম্মদ আজিজ খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ ও জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীও নারী। এটা আমাদের জন্য বড় পাওয়া। দেশের পোশাক খাত এগিয়ে নিতে নারীদের ব্যাপক অবদান আছে। তবে বাণিজ্য একটি কঠিন বিষয়। এখানে আবেগের কোনো স্থান নেই। পণ্যের গুনগত মান নিশ্চিত করেই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হয়। নারী উদ্যোক্তারা সৃজনশীল ও সৃষ্টিশীল কাজ করে এগিয়ে যাচ্ছেন। পৃথিবীব্যাপী যে বাজার সুযোগ আছে তা কাজে লাগাতে হবে। এসডিজি বাস্তবায়নে নারীদের এগিয়ে নিতে হবে।
বিআইবিসির প্রেসিডেন্ট মানতাসা আহমেদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড.আহমদ কায়কাউস, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, এফবিসিসিআইর সভাপতি জসিম উদ্দিন ও উইমেন’স ইন্ডিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডব্লিউ আইসিসিআই) প্রেসিডেন্ট ড. হারবিন অরোরা রায় ও বিডার নির্বাহী সদস্য মহসিনা ইয়াসমিন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দেশের পোশাক খাত নারীদের ক্ষমতায়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। এরপরই রয়েছে এসএমই খাতের ভূমিকা। গ্রামীণ উন্নয়নে এসএমই খাতর ভূমিকা অনেক। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের নারী উদ্যোক্তারা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। সরকার নানা সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করেছে। ভবিষ্যৎ উত্তরণে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ আরও বেশি ভূমিকা রাখবে। এরকম সামিটের আয়োজন বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়।
ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে নারী নেতৃত্বে খুব ভালো ভূমিকা রাখছে। তেমনি অর্থনৈতিকসহ সব ক্ষেত্রেই নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। যেমন পরিবারে নারীদের প্রধান ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। প্রাকৃতিক ও সামাজিকভাবেই পরিবারে নারীরা ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষেত্রে পেছন থেকে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন বঙ্গমাতা। ঐতিহাসিকভাবেই নারীরা সবসময় পুরুষদের এগিয়ে যেতে সহায়ক ছিলেন।
তিনি বলেন, অর্থনীতি, উন্নয়ন ও দেশকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখছেন নারীরা। আমার জীবনে আমার মায়ের ভূমিকা ছিল প্রধান। স্ত্রীর সহায়তা পাচ্ছি সবসময়। এছাড়া আমার আইডল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
জসিম উদ্দিন বলেন, এ দেশের নারী উদ্যোক্তারা অনেক এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে ই-কমার্স বাণিজ্য তাদের অংশগ্রহণ ব্যাপক। এলডিসি উত্তরণের পর ২০৪১ সালে উন্নত দেশে যেতে নারী উদ্যোক্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এসএমই নীতিমালা ও জাতীয় বাজেটে নারী উদ্যোক্তাদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
লোকমান হোসেন বলেন, বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশই তরুণ। এই তরুণ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে কাজ করা হচ্ছে। নারী উদ্যোক্তাসহ সব বিনিয়োগকারীদের জন্য বিডার ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার কাজ করছে। নারীদের জন্য ব্যাংকঋণ সহজ করা হয়েছে। এসব সুবিধা গ্রহণ করে নারী উদ্যোক্তারা এগিয়ে যেতে পারেন।
হারবিন আরোরা রায় বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত একসঙ্গে এগিয়ে যেতে চায়। আমরা শুধু বাংলাদেশ-ভারত বলি না। আমরা বলি বাংলাদেশ ও ভারতের নারী, বাংলাদেশ ও ভারতের যুব সমাজ। আমরা নারী সমাজকে এগিয়ে নিতে যৌথভাবে কাজ করছি। আমি গর্ব করি বাংলাদেশে নারীদের নেতৃত্বে মানতাসার মতো নারী রয়েছেন। সার্ক বিজনেস কাউন্সিলের নেতৃত্বে আসছেন মানতাসা। এটা গর্বের বিষয়।
তিনি বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে সরকার, বেসরকারি, এনজিও, এসএমই ও জনগণ সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। আমরা নারী উদ্যোক্তাদের পরিবর্তনের জন্য কাজ করছি।
মানতাসা আহমেদ বলেন, নারীদের শক্তিশালী করতে কাজ করবে এ সামিট। অনেক নারীর উদ্যোক্তাই এখানে আসতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আমরা জায়গা স্বল্পতার কারণে তাদের সুযোগ দিতে পারিনি। এ দেশের নারী উদ্যোক্তারা নানা সমস্যার মধ্যেও এগিয়ে যাচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিলের মেন্টর চেয়ার জেরিন মাহমুদ হোসেইন বলেন, এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে আমরা নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিতে চাই। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমার সঙ্গে কাজ করে নিজেদের তৈরি করার সুযোগ পাচ্ছেন।
নারী উদ্যোক্তা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, আমি অনেক সংগ্রাম করে আজকের অবস্থানে এসেছি। আমি জামদানি শাড়ি, বাচ্চাদের শাড়িসহ বিভিন্ন শাড়ি, পাঞ্জাবি তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করে থাকি।