আজ: বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০১ জানুয়ারী ২০২৩, রবিবার |

kidarkar

নতুন বছরে শেয়ারবাজার নিয়ে প্রত্যাশা

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের শেয়ারবাজারে ২০২২ সালের শুরুটা দুর্দান্ত পার করলেও শেষের দিক ভালো যায়নি বিনিয়োগকারীদের জন্য। এই সালের প্রথম সপ্তাহ থেকে বেশ চাঙা ছিল শেয়ারবাজার। কিন্তু শেষ দিকে এসে অনেকটা টানা পতনের মধ্য দিয়ে পার করেছে। ফলে বছরের প্রথমার্ধ ভালোভাবে পার করলেও শেষদিকে হতাশার মধ্যেই কেটেছে বিনিয়োগকারীদের। হতাশা থেকে বিনিয়োগকারীদের বের করে আনতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিভিন্ন কাজ করে চলছে।
বেশ কিছু সিদ্ধান্তও নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কিন্তু বাজারের স্থিতিশীলতা রাখতে অনেক সিদ্ধান্ত তুলেও নিতে হয়েছে।বছর শেষে দেখা গেল কোন সিদ্ধান্তই যেন কাজে আসছে না। সবশেষ ফ্লোর প্রাইস দিয়েও ঠেকাতে পারেনি পতন। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার সময় যে লেনদেন ছিল সেখানেই নেমেছে বর্তমান লেনদেনের গতি। তবে নতুন বছরে নতুন আশা জাগবে সেই প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২০২২ সালের পুরো সময়টা বিনিয়োগকারীদের জন্য দুর্বিষহ যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে কেটেছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে নিস্ব হয়েছে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য নিরলস ভাবে কাজ করেছেন তবে বাজারের স্থিতিশীলতা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। এর অন্যতম কারণ ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ, ডলার সংকট, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি সমস্যার কারণে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। কিন্তু ২০২৩ সাল পুঁজিবাজারের জন্য সুদিন বয়ে আনবে।
নতুন বছরে আমরা একটি স্থিতিশীল, আস্থাশীল,বিনিয়োগবান্ধব পুজিবাজার দেখতে পাবো সেই প্রত্যাশা করছি। আশা করছি ডলার সংকট , বিশ্ব বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সহ বড় বড় সমস্যা গুলো কেটে গেলেই পুঁজিবাজারে আরো গতিশীল হবে । তাই নতুন বছরে পুজিবাজার আরো আস্হাশীল ও গতিশীল হবে এবং বিনিয়োগকারীরা তাদের হারানো পুঁজি আস্তে আস্তে ফিরে পাবে।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. সাজেদুল ইসলাম বলেন, ২০২২ সালে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এখন যেটা দেখতে পাচ্ছি হয়তো বাজার কিছুটা খারাপ তবে এর অন্যতম কারণও সবাই জানি। বিশেষ করে বিশ্ব অর্থনীতি মন্দা, ডলার সংকট, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধসহ বেশ কিছু সমস্যা একি সময় হওয়ায় পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় ব্যাঘাত ঘটেছে।তবে এটা হয়তো দীর্ঘায়িত হবে না। কমিশনের নেওয়া পদক্ষেপগুলো এখন সুফল পাচ্ছে না ঠিক, তবে একটু সময় দিলে আশা করা যায় সবগুলো সিদ্ধান্তই কার্যকরী হয়ে উঠবে। কারণ যেকোন সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিক না হলেও সময়সাপেক্ষে হলেও তা ফলপ্রসূ হয়ে থাকে।তাই আমরা আশা করছি ২০২৩ সালের শুরু থেকেই যে সমস্যাগুলো বাজারে বিদ্ধমান আছে সেগুলো কেটে যাবে, এবং আমরা একটি সুন্দর ও ভালো পুঁজিবাজার দেখতে পাবো।
এছাড়াও বর্তমানে ডিসেম্বর মাস কোম্পানিগুলোর ক্লোজিংয়ের একটা বিষয় থাকে। সব মিলিয়ে নতুন বছরে পুঁজিবাজার আগের মত সমৃদ্ধ হবে প্রত্যাশা রাখছি। কারন পুঁজিবাজারে যেহেতু উত্থান পতন বিষয়টি থাকে সেক্ষেত্রে বলাই যায় এই পতনের পরেই উত্থান অপেক্ষার করছে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মো. সায়েদুর রহমান বলেন, আমাদের দেশের একটা বড় সংকট তৈরি হয়েছে যেমন ডলার সংকট, ইমপোর্ট কমে যাওয়াসহ একটা অর্থনৈতিক ধাক্কা বলা যায়। তবে এসব সমস্যা ইতোমধ্যে সমাধান হতে শুরু করেছে তাই বলা যায় নতুন বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। আমরা একটি ভালো শেয়ারবাজার দেখতে পাবো বলে আশা করছি। বিএসইসি ইতোমধ্যে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিছু জিনিস সময় সাপেক্ষে সুফল আনবে। তবে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বাজারটা স্থিতিশীল রাখতে। এক্ষেত্রে কিছু সিদ্ধান্ত ক্ষেত্র বিশেষ সুফল আসবে এটা স্বাভাবিক। তবে বাজারের এখন সংকটের অন্যতম কারণ বড় বিনিয়োগকারীরা বাজার বিমুখ হয়ে গেছে। তাদের উপস্থিতি এবং স্বাভাবিক আস্থা ফিরে আসলে বাজার স্বাভাবিক ধারায় চলে আসবে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. গোলাম ফারুক বলেন, ২০২২ সালের শেষে শেয়ারবাজারে মন্দা থাকলেও ২০২৩ সাল ভালো যাবে আসা করছি। বছরের শুরুতে ঠিক কেমন হবে এখন বলা যাচ্ছে না তবে মাঝামাঝি সময়টায় বাজার ভালো পজিশনে চলে আসবে। তখন কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু হবে। ইতোমধ্যে আমরা প্রোডাক্ট সিলেক্ট করেছি। এছাড়াও নীতিমালা বিএসইসির কাছে জমা দিয়েছি। তার নীতিমালাটা নির্ধারণ করে দিলে আমরা হার্ডওয়্যার সফটওয়্যার প্রস্তুত করে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময় কার্যক্রম শুরু করতে পারবো। এছাড়াও সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি বাংলাদেশ (সিসিবিএল) এর কার্যক্রমটাও শুরু হবে বলে আশা করছি।
তাই বলা যায় নতুন বছরে পুঁজিবাজার ভালো হওয়ার অনেক সম্ভাবনা আছে। বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ডলার সংকট কেটে যাবে। তখন বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আসা শুরু করবে এর মধ্যে দিয়ে বাজারে বড় পরিবর্তন চলে আসবে। ২০২৩ সালে বিদায়ী বছরের মত সূচক এবং লেনদেনের যেই ফ্লো ছিল সেটা আবারো ফিরে আসবো। তখন বিনিয়োগকারীরা তাদের লাভ তুলে নিতে পারবে।
বর্তমানে পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি এবং নতুন বছরের বেশকিছু পরিকল্পনা বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এম. সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে বৈশ্বিক অর্থনীতি টানাপোড়নের মধ্যদিয়ে যাচ্ছিল, এরই ধারাবাহিকতায় বছরের শেষভাগে দেশের পুঁজিবাজার একটা বিয়ারিশ ট্রেন্ড পার করে৷ নতুন বছরে আমাদের বেশ কিছু ক্যাম্পেইন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যার মাধ্যমে বাজারে ভালো কোম্পানিগুলো আনতে প্রচারণা চালানো হবে। এছাড়াও সার্বিকভাবে বাজারের উন্নয়নের জন্য এই ক্যাম্পেইন কাজে আসবে। বিশেষ করে ভালো কোম্পানিগুলো টার্গেট করে মার্কেটে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে মোটিভেট করার পাশাপাশি কিছু বিষয় শিথিল করার টার্গেট নিয়ে কাজ করছি। তবে শুধু ভালোই নয় কিছু বড় কোম্পানি নিয়ে কাজ করছি যেগুলো নতুন বছরে বাজারে আসবে। আশা করি ২০২৩ সালের শুরুতেই এই সংকট কিছুটা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে।
 বাংলাদেশের অর্থনীতি তার বৈশিষ্টগত সহনশীলতার কারণে বিভিন্ন সূচকের অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাছাড়া ২০২০ সালের শুরুতেই ডিএসই’র অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড চালু করণ, মোবাইল অ্যাপস এর ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি, বন্ড মার্কেটের জন্য স্বতন্ত্র অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রতিষ্ঠাসহ বাজারের অধিকতরস্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং গুণগত সম্প্রসারণের জন্য ব্যপক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। আমরা আশাকরি পুঁজিবাজারে এর সুফল বয়ে আনবে৷
এদিকে শেয়ারবাজারে কোন সমস্যা নেই, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাই বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হয়ে ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বাজারের স্থিতিশীলতায় বিএসইসি বদ্ধপরিকর। চলমান সঙ্কট কেটে গেলে নতুন বছরে ভালো কিছুর প্রত্যাশা করছি।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.