বৈদেশিক ঋণ কমছে বেসরকারি খাতে
শাহ আলম নূর : বৈদেশিক ঋণের প্রতি আগ্রহ
কমছে দেশের বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানের।
২০২০ সালের ডিসেম্বরের পর এই প্রথমবারের মত বৈদেশিক ঋণ গ্রহনের পরিমান কমছে। বৈদেশিক ঋণের প্রতি দেশিও উদ্যোক্তাদের আগ্রহ কমে যাওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
দেশের বিসরকারি খাতে ঋণ গ্রহনের পরিমান গত জুন মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বর মাসে কমেছে ২১ শতাংশ। গত জুন মাসে দেশীয় উদ্যোক্তারা বৈদেশিক ঋণ গ্রহন করেছে ২৫.৯৫ বিলিয়ন ডলার। তবে সেপ্টেম্বর মাসে বৈদেশিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছে ২৫.৪ বিলিয়ন ডলার। একই সাথে সরকারি খাতেও বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখায় ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে বেসরকারী খাতের বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছিল ২৯ শতাংশ। অর্থাৎ এসময় বৈদেশিক ঋণ গ্রহনের পরিমান ছিল ১৯.৬৮ বিলিয়ন ডলার।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন টাকার অবমূল্যায়নের কারনে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
তিনি বলেন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে অনেক ঋণগ্রহীতা বেশি দামে মার্কিন ডলার ক্রয় করে বিদেশী ঋণ পরিশোধ করছেন। এতে এসব উদ্যোক্তারা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক অর্থনীতিবিদ মনসুর আরো বলেন বৈদেশিক ঋণের গ্রহনের পরিমান কমতে থাকলেও ঋণ পরিশোধের চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
এদিকে বাংলাদেশের বাইরে অন্যদেশে বৈদেশিক বৈদেশিক ঋণের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন দেশের ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন।
দেশের বেসরকারী খাতগুলোর বৈদেশিক ঋণ গ্রহনের আগ্রহ বাড়তে থাকে ২০২০ সাল থেকে। এমন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত ছিল ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় মাথাব্যথা তৈরি করেছে। কারন ইতোমধ্যে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন বৈদেশিক ঋণ গ্রহনের প্রবনতা দেশের বেসরকারি খাতে যেমন হ্রাস পাচ্ছে তেমনি বৈদেশিক উৎস্য থেকে সরকারের ঋণ গ্রহন কমেছে। অর্থাৎ বৈদেশিক উৎস্য থেকে ঋণ গ্রহনের প্রবণতা সামগ্রিকভাবে হ্রাস পাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণ তিন মাস আগে ছিল ৯৫.২৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বৈদেশিক ঋণের পরিমান দাঁড়িয়েছে ৩ শতাংশ কমে ৯২.৬৯ বিলিয়ন ডলার।
মনসুর বলেন, সরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণের প্রবাহ কমে যাওয়া ভালো লক্ষণ নয়। বাজেট সহায়তা এবং বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে চাপ কমাতে সরকারের জন্য বৈদেশিক ঋণ প্রয়োজন।
তিনি বলেন অর্থনীতিতে এর প্রভাব রয়েছে। সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে, যা মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। এটি অর্থনীতির জন্য একটি অস্থিতিশীল কারণ হতে পারে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বেসরকারি খাতের সামগ্রিক বৈদেশিক ঋণের অবস্থান খুব বেশি পরিবর্তিত হয়নি।
ডলারের বাজারে ঋণ পরিশোধের প্রভাবের দিকে নজর রাখার সুপারিশ করে তিনি বলেন, ঋণ গ্রহনের প্রবলতা হ্রাস পেলেও
পরিশোধের চাপ কমবে না।
তিনি আরো বলেন বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় করে যে ঋণের অর্থপ্রদানের প্রয়োজন হয় তা শ্রেণীবদ্ধ করা প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেণ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে। শর্ত না বুঝে ও নানা ধরনের ত্রুটিসহ বৈদেশিক ঋণের চুক্তি স্বাক্ষর, প্রকল্প তৈরি, অনুমোদন এবং তদারকির ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি, উন্নয়ন সহযোগীদের আমলাতান্ত্রিকতাসহ নানা কারণে বৈদেশিক অর্থছাড় কম। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এখন রিজার্ভ আছে ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এদিকে উন্নয়ন ব্যয় নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। ব্যয়ের রাশ টেনে ধরা না গেলে প্রকল্পগুলো বোঝায় পরিণত হতে পারে।
২০২০-২১ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৬০ দশমিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরে ৫১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার ছিল। এক বছরে বৈদেশিক ঋণ বেড়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। অনুমান করা হচ্ছে যে ২০২৩ সালের শেষে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়ে ১১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়াবে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৪ সালের শেষে বাংলাদেশের ঘাড়ে ১৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণের বোঝা তৈরি হবে।