পুঁজিবাজার থেকে ১০৬ কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত সরকার
নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজার থেকে বিদায়ী বছরে প্রায় ১০৬ কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্টক মার্কেটের মতো বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেও লেনদেনের গতি কমেছে। ফলে সরকার ডিএসই থেকে করবাবদ রাজস্ব কম পেয়েছে বলে মনে করেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, বাজার স্থিতিশীল হলে লেনদেন বাড়বে, তখন সরকার আরও বেশি কর পাবে।
ডিএসই’র তথ্য বলছে, ২০২২ সালে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছিল দুই লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ৯৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার শেয়ার, বন্ড ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট। এর আগের বছর (২০২১ সাল) লেনদেন হয় তিন লাখ ৫৩ হাজার ৯৭৮ কোটি ৬১ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে লেনদেন কমেছে এক লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা।
লেনদেন কমায় ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ১০৫ কোটি ৯০ লাখ টাকার রাজস্ব কম পেয়েছে সরকার।
আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, দুই ধরনের শেয়ার কেনাবেচা থেকে সরকার রাজস্ব আয় করে। প্রথমটি হলো- কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার কেনাবেচা থেকে রাজস্ব আয়। দ্বিতীয়টি হলো- বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনাবেচায় ব্রোকারেজ হাউজের ওপর আরোপিত কর।
ডিএসই’র তথ্য মতে, দুই ধরনের বিনিয়োগকারীর শেয়ার, বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট বিক্রিবাবদ লেনদেনের কর থেকে ২০২১ সালে ৪২৫ কোটি ৮৬ হাজার ৯২০ টাকার রাজস্ব পেয়েছিল সরকার। ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩১৯ কোটি ১০ লাখ ৩১ হাজার ৫৩ টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে সরকার ১০৫ কোটি ৯০ লাখ ৫৫ হাজার ৮৬৭ টাকার কম রাজস্ব পেয়েছে।
দুই ধরনের করের মধ্যে প্রথমটি হলো- ডিএসই’র স্টেক হোল্ডারদের দৈনিক লেনদেনের ওপর দশমিক ০৫ শতাংশ কর। এ খাত থেকে ২০২২ সালে রাজস্ব আয় হয় ২৩৬ কোটি ৪৩ লাখ ৩০ হাজার ৪৫৮ টাকা। অন্যদিকে, বিএসইসি রুলস ৫৩-এম অনুসারে, স্পন্সর শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার কেনাবেচাবাবদ লেনদেন ও শেয়ার হস্তান্তর থেকে ৫ শতাংশ হারে করবাবদ রাজস্ব আয় হয়েছে ৮২ কোটি ৬৭ লাখ দুই হাজার ৫৯৫ টাকা।
সবমিলিয়ে ডিএসই থেকে মোট রাজস্ব আয় হয়েছে ৩১৯ কোটি ১০ লাখ ৩১ হাজার ৫৩ টাকা। ডিএসই এ টাকা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) জমা দিয়েছে। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে জমা দিয়েছিল ৪২৫ কোটি ৮৬ হাজার ৯২০ টাকা। ২০২০ সালে সরকার পুঁজিবাজার থেকে রাজস্ব পায় ১৮৫ কোটি তিন লাখ ২২ হাজার ৫১ টাকা।
এ বিষয়ে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে, বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বৈশ্বিক অর্থনীতি টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বছরের শেষভাগে দেশের পুঁজিবাজার নিম্নমুখী প্রবণতায় পার করেছে।
‘আশা করি ২০২৩ সালের শুরুতে এ সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। কারণ, বাংলাদেশের অর্থনীতি তার বৈশিষ্ট্যগত সহনশীলতার কারণে বিভিন্ন সূচকের অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এছাড়া ২০২৩ সালের শুরুতে ডিএসইর অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড চালু করা, মোবাইল অ্যাপের ক্যাপাসিটি বাড়ানো, বন্ড মার্কেটের জন্য স্বতন্ত্র অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রতিষ্ঠাসহ বাজারের অধিকতর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও গুণগতমান বাড়ানোর জন্য ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। আশা করি, পুঁজিবাজারে এর সুফল বয়ে আনবে; বাড়বে লেনদেন।’
ডিএসই’র পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, পুঁজিবাজার যত ভালো থাকবে লেনদেন তত বাড়বে। লেনদেন বাড়লে সরকার এ খাত থেকে বেশি রাজস্ব পাবে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন পুরোদমে কাজ করছে। সেকেন্ডারি মার্কেটে লেনদেন বাড়ানোর জন্য ব্যক্তি, প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানের বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া এসএমই বোর্ড, সরকারি বন্ডের পর ডিএসইতে অল্টারনেটিভ বোর্ড বা এটিবি চালু করেছে। আশা করছি, এসব উদ্যোগের ফলে ডিএসইতে চলতি বছর লেনদেন বাড়বে— বলেন রেজাউল করিম।