লোকসানের বোঝা কমেছে এমারেল্ড অয়েলের
নিজস্ব প্রতিবেদক : ধানের কুঁড়া থেকে ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এমারেল্ড অয়েল ডিভিডেন্ড না দেবার ঘোষনা দিয়েছে। গত ২০১৬ থেকে ২০১৯ (জুলাই-জুন) সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা পর নো ডিভিডেন্ড দেবার সিন্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটির পর্ষদ।
উল্লেখ্য ঋণ কেলেংকারির কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া এমারেল্ড অয়েলের নতুন মালিকানা কার্যক্রম শুরু করে গত বছরের জানুয়ারিতে। উৎপাদন শুরুর আগেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে এ বিযয়টি জানানো হয়। উৎপাদন শুরু কিছুদিন পর কোম্পানিটি পর্ষদ বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায়। এরপর থেকে কোম্পানিটির অবস্থা পরিবর্তন হতে থাকে।
ডিভিডেন্ডে না দেওয়ার প্রসঙ্গে কোম্পানির ব্যস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আফজাল হোসেন বলেন, দীর্ঘ বন্ধের পর এমারেল্ড অয়েল উৎপাদনে আসে গত বছরের শুরুতে। বন্ধের কারনে কোম্পানিটি সব কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হয়। এসময় বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড ঘোষনা দেওয়া হয়নি।
আরও বলেন, সব জটিলতা কাটিয়ে তিন অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছি। এতে তিন অর্থবছরের জন্য নো ডিভিডেন্ড ঘোষনা দিয়েছি। বাকী অর্থবছরগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘোষনা দেবার চেষ্টা করছি।
এমারেল্ড অয়েল কোম্পানির সূত্রে জানা যায়, কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্য ৫ কোটি ৯৭ লাখ ১৩ হাজার ৫০০টি। কোম্পানিটি ২০১৭ অর্থবছরে লোকসান পরিমান ছিল ২০৫ কোটি ৫ লাখ ৬১ হাজার ৫৯০ টাকা। শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছিল ৩৪ দশমিক ৩৪ টাকা। সেখান থেকে লোকসান কমে পরে ২০১৮ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছিল ১১ কোটি ৭৬ লাখ ৩৫ হাজার ৫৯৫ টাকায়। শেয়ার প্রতি লোকসান ১ দশমিক ৯৭ টাকা। সেখান থেকে আরো কমে ২০১৯ অর্থবছরে দাঁড়ায় ৬ কোটি ৮০ লাখ ৭৩ হাজার ৩৯০ টাকায়। শেয়ার প্রতি লোকসান ১ দশমিক ১৪ টাকা।
অপরদিকে, ঘোষনা দেওয়া ওই তিন অর্থবছরে সম্পদমূল্য নেগেটিভ হয়েছে। কোম্পানিটি ২০১৭ অর্থবছরে মোট সম্পদমূল্য হয়েছে নেগেটিভ ১০৪ কোটি ২৫ লাখ ৯৭ হাজার ৭১০ টাকা। আর শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছিল নেগেটিভ ১৭ দশমিক ৪৬ টাকা। পরের ২০১৮ অর্থবছরে মোট সম্পদমূল্য নেগেটিভ ১১৬ কোটি ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩০৫ টাকা। এনএভিপিএস নেগেটিভ ১৯ দশমিক ৪৩ টাকা। এরপরে ২০১৯ অর্থবছরে মোট সম্পদমূল্য নেগেটিভ ১২২ কোটি ৮৩ লাখ ৬ হাজার ৬৯৫ টাকা। এনএভিপিএস নেগেটিভ ২০ দশমিক ৫৭ টাকা।
বন্ধ প্রসঙ্গে কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ঋণ সহ বিভিন্ন অনিয়মে এমারেল্ড অয়েল উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ পাঁচ বছর বন্ধের পর পাহাড়সম লোকসান নিয়ে গঠন হয় নতুন (বর্তমান) কমিটি। এই পর্ষদের অক্লান্ত পরিশ্রমে লোকসান বোঝা কমেছে। পূর্বের বকেয়াগুলো পরিশোধ হচ্ছে। কিছু সমস্যা রয়েছে, তা সমাধানে পর্ষদ কাজ করছে।
আরও বলেন, ২০২৭ অর্থবছরের শেয়ার প্রতি ৩৪ টাকার লোকসান চলে এসেছে ২০১৯ অর্থবছরে ১ টাকার লোকসানে। এ বৃত্ত এখন আরও কমার দিকে। এভাবে চলতে থাকলে মুনাফায় চলে আসবে বলেও জানান তারা।
জামালপুরে অবস্থিত এমারেল্ড অয়েল ২০১৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। তালিকাভুক্তির দুই বছর পরই কোম্পানিটির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারি জড়িয়ে জেলে যান। পরে জামিন নিয়ে দেশের বাইরে চলে গেলে কোম্পানির কার্যক্রম ২০১৬ সাল থেকে বন্ধ হয়ে যায়। পরে কোম্পানিটিকে চালু করতে এমারেল্ড অয়েলের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে মিনোরি বাংলাদেশ নামে জাপানি একটি কোম্পানি এমারেল্ড অয়েলের শেয়ার কিনে মালিকানায় আসে।