গোয়েন্দা তথ্য বলছে, অর্থপাচার ‘প্রায় অপ্রতিরোধ্য’
নিজস্ব প্রতিবেদক : আমদানি-রপ্তানি পণ্যের প্রতিযোগিতামুলক দামের কোন তথ্যভান্ডার না থাকায় বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থপাচার প্রতিরোধ করা প্রায় অসম্ভব এবং দেশ থেকে ইতোমধ্যে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা কিংবা বিদেশে পাচার করা সম্পদের বিপরীতে কর আদায় করা খুবই কঠিন বলে মনে করছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটির গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থাপিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন আর্থিকখাতের গোয়েন্দা সংস্থাটি।
বিএফআইইউ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, কার্যকর আইনের অভাবে দুর্নীতি, সরকারি তহবিল তছরুপ, কর ফাঁকির মাধ্যমে অর্থপাচার হচ্ছে। এসব ঘটনা তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ায় দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে।
‘সামগ্রিকভাবে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হলে ছোট-খাটো দুর্নীতি কমে আসবে’ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওভার ইনভয়েস ও আন্ডার ইনভয়েসের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থপাচার হয়। রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন কর না থাকা এবং আমদানির ক্ষেত্রে শূন্য শুল্কহার থাকায় কাস্টমস কর্মকর্তারা রপ্তানি চালান যাচাইয়ে কম মনোযোগী হন। পাচারকারীরা এই সুবিধাটিই বেশি গ্রহণ করছে।
আমদানিকারকের কাছে যে দরে পণ্য বিক্রি করা হয়, রপ্তানিকারক যদি তাদের চেয়ে বেশি অর্থ পান তাহলে সেটা হয় ‘ওভার ইনভয়েসিং’। পণ্যের মূল্যের নামে পাঠানো অতিরিক্ত অর্থ পরে বিদেশে আমদানিকারকের পক্ষে কেউ গ্রহণ করে। অন্যদিকে, ‘আন্ডার ইনভয়েসিং’ ব্যবহার করা হয় পণ্য রপ্তানিতে। পণ্য রপ্তানির সময়ে যে পরিমাণ মূল্য কম দেখানো হয়, তা বিদেশে রপ্তানিকারকের পক্ষে বুঝে নেওয়া হয়। উভয় ক্ষেত্রেই বাণিজ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে অর্থপাচারের অংশ হিসেবে অতিরিক্ত লেনদেন সংগঠিত হয়।
অনেক সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী বিদেশে সন্তানের লেখাপড়ার আড়ালে অর্থপাচার করে বিদেশে বাড়ি-গাড়ি কিনছেন বলেও উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে।
বৈঠকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে উদ্যোগী হবার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এজন্য আইন সংশোধন, বিদেশে আইনি বা পেশাদার ফার্ম নিয়োগের ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
প্রবাসীদের বাংলাদেশে জমি বিক্রি করে সেই অর্থ বিদেশে পাচার করে নিয়ে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরে সভায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানান, ‘ইদানিং বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় বাংলাদেশিদের কাছ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি- এর অনুরোধের মাত্রা অনেক বেড়েছে। এই পাওয়ার অব অ্যাটর্নির অর্থই হচ্ছে বাংলাদেশে সম্পত্তিগুলো বিক্রি হচ্ছে এবং যেকোন উপায়ে সেই অর্থ ওইসব দেশে চলে যাচ্ছে।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সভায় বলেন, ‘যারা জমি বিক্রি করে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন, এটা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নিয়ে যাচ্ছেন।’
পাচারকারীরা সাধারণত সম্পদশালী ও প্রভাবশালী হয়ে থাকেন উল্লেখ করে বিএফআইইউ প্রতিবেদনে বলেছে, ‘ফলে তারা প্রচুর অর্থ খরচ করে বড় বড় আইনজ্ঞ নিয়োগ করেন বা কোন না কোন পথ অবলম্বন করে বিচারিক প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার প্রয়াস গ্রহণ করেন। এতে অনেক সময় তদন্ত কার্যক্রম বা বিচারিত প্রক্রিয়ায় হতাশা চলে আসে। তাছাড়া রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মামলার বিষয়বস্তুর বিষয়ে অনেক সময়েই অভিজ্ঞ থাকেন না’।
এনিয়ে জানতে চাইলে- দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, ‘বিএফআইইউ এর প্রতিবেদনে যদি এ ধরণের কথা উল্লেখ থাকে, তাহলে আমি বলবো, তারা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছেন। এভাবে বলার অর্থ হলো- মানি লন্ডারিং চলতেই থাকবে। তারা এসব পদে থাকার যোগ্য নন। তাদেরকে সরিয়ে যোগ্যদের নিয়োগ দেওয়া দরকার’।
বাণিজ্য-ভিত্তিক অর্থপাচার রোধে বাংলাদেশের সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে বিএফআইইউ এর এমন পর্যবেক্ষণের সাথে একমত নন অর্থবিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ।
তিনি বলেন, ডলার সংকট পরিস্থিতিতে যখন আমদানি অনেক বেড়ে গেলো, তখন বড় অংকের এলসিগুলো যাচাই করে ওভার ইনভয়েসিং এর আশঙ্কার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশকিছু এলসি বাতিল করেছে। ‘সক্ষমতা না থাকলে তখন কীভাবে পারছে?’ প্রশ্ন রাখেন তিনি।
সাবেক এই সচিব বলেন, পাচার করা সম্পদ ও তার ওপর কর আদায়ের ক্ষেত্রে দর কষাকষিতে বাংলাদেশের দুর্বলতা আছে। এটি অন্য ক্ষেত্রেও রয়েছে। ‘তাই নেগোসিয়েশন সক্ষমতা বাড়াতে হবে’।
‘চলতি অর্থবছর ঘোষিত ট্যাক্স অ্যামনেস্টি সুবিধা এখনও কোন কাজে লাগেনি। অর্থবছরের বাকি সময়ে কী হয়, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছি’- জানান তিনি।
বাংলাদেশের আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো যথেষ্ঠ দৃঢ় হওয়া সত্ত্বেও পাচার করা অর্থ বা সম্পদ চিহ্নিত করা হতে শুরু করে তা বাজেয়াপ্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনার সফলতার হার খুবই কম- উল্লেখ করে বিএফআইইউ বলেছে, ‘অর্থনৈতিক বা ভূ-রাজনৈতিক কারণে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এমনকি ভারত অন্য রাষ্ট্রের (পাচার করা অর্থের গন্তব্য দেশ) সাথে যে ধরণের দর কষাকষি করতে সক্ষম, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তার মাত্রা ভিন্ন। তাই অনেক ক্ষেত্রেই আশানুরূপ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পাওয়া যায় না’।
বাংলাদেশ থেকে সহজে অর্থপাচার হওয়ার ঘটনা তুলে ধরে বিএফআইইউ বলেছে, আমদানি করা পণ্য বা সেবার প্রকৃতি যতো জটিল হয়, তার যথাযথ মূল্য নির্ধারণ ব্যাংক ও শুল্ক কর্তৃপক্ষের জন্য ততোই কঠিন। বেশিরভাগ ব্যাংক ও শুল্কবন্দরে পণ্যের মূল্য যাচাই করার জন্য পর্যাপ্ত তথ্য না থাকাকে এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
উদাহরণ দিয়ে বিএফআইইউ বলেছে, অত্যধিক মূল্যের কোন জটিল বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি বা বিশেষায়িত মূলধনী যন্ত্রপাতি, যা বাংলাদেশে আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা রয়েছে – পণ্যটি আমদানি শুল্কমুক্ত হওয়ায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এর মূল্য নিয়ে চিন্তা করে না। আবার পণ্যটি জটিল হওয়ার কারণে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়া এর সঠিক মূল্য সম্পর্কিত তথ্য পাওয়ার সুযোগ নেই।
আবার কম্পিউটার সফটওয়্যার হিসেবে- একটি সিডির প্রকৃত আমদানি মূল্য এক ডলারের কম বা এক লাখ ডলারের বেশিও হতে পারে। এক্ষেত্রে আমদানি করা সিডির মূল্য নিরূপণ করা শুল্ক কর্তৃপক্ষের জন্য প্রায় অসম্ভব। অনলাইনে সফটওয়্যার আমদানির মাধ্যমে – অর্থপাচারের ক্ষেত্রে শুল্ক কর্তৃপক্ষ আরও জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়।
গত ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলনে– বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে অর্থপাচার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, পণ্য আমদানিতে ‘ওভার ইনভয়েসিং’ মানে হল অতিরিক্ত অর্থ ব্যাংক চ্যানেলেই বিদেশে পাচার হচ্ছে। পণ্যের মূল্যের নামে পাঠানো অতিরিক্ত অর্থ পরে বিদেশে আমদানিকারকের পক্ষে কেউ গ্রহণ করছে। এমন অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই অর্থনীতিবিদদের কাছ থেকে আসছে।
‘আশ্চর্যজনকভাবে দেখলাম, ২০-২০০ শতাংশ পর্যন্ত ওভার ইনভয়েসিং (অতিরিক্ত মূল্য দেখানো) করে পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এ রকম ১০০ এলসি বন্ধ করেছি আমরা।’
বৈদেশিক বাণিজ্যে পণ্যের দাম কম বা বেশি দেখিয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ‘বাণিজ্য-ভিত্তিক অর্থপাচার’ বন্ধ করা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ওয়াশিংটন-ভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) এর তথ্যমতে, আমদানি ও রপ্তানি পণ্যমূল্যের মিসইনভয়েসিং এর মাধ্যমে কর ফাঁকি দিয়ে এবং বিভিন্ন দেশে অর্থপাচার করেছে এদেশের ব্যবসায়ীরা। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে এভাবে প্রতিবছর গড়ে ৮.২৭ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে বাংলাদেশ। এভাবে নয় বছরেই দেশ থেকে ৭৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে দু’টি বুনিয়াদি বিষয়ে বাংলাদেশের দূর্বলতার তথ্য তুলে ধরে বিএফআইইউ বলেছে, এক্ষেত্রে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো পাচার করা অর্থ বা সম্পদ সঠিকভাবে চিহ্নিত করা এবং তা বাজেয়াপ্ত করে দেশে ফেরত আনা।
পাচার হওয়া অর্থ বা পাচারকারী সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে – সুইলারল্যান্ড বাদে অন্য দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা হতে তথ্য পেতে সমস্যা হয় না উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে তদন্তকারী সংস্থা হতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। অন্যদিকে, আর্থিকখাতের গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে এগমন্ট গ্রুপ ইনফরমেশন এক্সচেঞ্জ পলিসি পরিপালনের ক্ষেত্রেও ব্যত্যয় ঘটে। ফলে বিদেশি অনুরূপ পক্ষ পরে তথ্য প্রদানে আগ্রহী হয় না।
পাচার করা অর্থ উদ্ধার প্রক্রিয়ার শেষ ধাপে বাজেয়াপ্ত করে তা দেশে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইনি কাঠামোতে ঘাটতি রয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে এতে।
পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার করা কঠিন হওয়ায়, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ ট্যাক্স রিকভারি (কর পুনরুদ্ধার) প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সফলতা পাওয়ায় বাংলাদেশও চলতি অর্থবছরের বাজেটে পাচারকারীদের জন্য ট্যাক্স অ্যামনেস্টি ঘোষণা করেছে। এ সুবিধা দিয়ে বড় ধরণের রাজস্ব পাওয়া যাবে বলে আশা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এই সুবিধা ঘোষণার সময় তিনি আশাপ্রকাশ করেন, যাদের বিদেশে অর্থ-সম্পদ রয়েছে, তারা এর আওতায় নির্ধারিত হারে কর দিয়ে তা দেশে ফেরত এনে বিনিয়োগ করবেন। কিন্তু, তাতেও পর্যন্ত হতাশার চিত্রই উঠে এসেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর তথ্য হলো, গত ডিসেম্বরে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার রিটার্ন দাখিলের শেষ সময় পর্যন্ত কোন অর্থপাচারকারী এ সুবিধা নেননি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও বিদেশে অর্থ ও সম্পদের কোন মালিককে চিহ্নিত করে ফাঁকি দেওয়া কর ও জরিমানা আদায় করতে পারেনি।
ট্যাক্স রিকভারি পদ্ধতিতে বিভিন্ন দেশের পাওয়া সফলতা ও বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বিএফআইইউ বলেছে, সুইস ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের কর এজেন্সি (আইআরএস) ২০০৯ থেকে এপর্যন্ত অফশোর ভলানটারি ডিসক্লোজার প্রোগ্রামের আওতায় – ৪৫,০০০ করদাতার কাছ থেকে ৬.৫ বিলিয়র ডলার কর, জরিমানা ও সুদ আদায় করেছে।
সুইস ব্যাংকে গোপন হিসাব রয়েছে এমন করদাতাদের কাছ থেকে ফ্রান্স ১.২ বিলিয়ন ইউরো ও ইতালি ৫৭০ মিলিয়ন ইউরো ফাঁকি দেওয়া কর ও জরিমানা আদায় করেছে। একই তথ্যের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্য ১৫০ মিলিয়ন পাউন্ড ও স্পেন ২১০ মিলিয়ন ইউরো আদায় করেছে।
সুইস ও লিখটেনস্টেইন ব্যাংকের গোপন হিসাবের তথ্য অন্য এক হুইসেলব্লোয়ারের কাছ থেকে কিনে জার্মানি ২০১০ সালে ১.৬ বিলিয়ন ইউরো কর পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, বৈধ আয় কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশে পাচার হলে পাচারকারীর কাছ থেকে কর আদায় করা হলেও – তার বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অপরাধে মামলা হতে পারে। তাই বিদ্যমান অবস্থায়, কর পুনরুদ্ধার পদ্ধতি কার্যকর হবে না উল্লেখ করে সরকারকে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুপারিশ করেছে বিএফআইইউ। এছাড়া, এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতে বলেছে সংস্থাটি।
পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নাহলে– বিকল্প পন্থা হিসেবে, ট্যাক্স রিকভারি করার উদ্যোগ গ্রহণ করা আইনসম্মত হবে কি-না, সে বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিতে এনবিআরকে বলেছে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটি।
এছাড়া, ট্যাক্স রিকভারি পদ্ধতি চালুর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া, এ পদ্ধতির উপযোগী করে আইন ও বিচারিক প্রক্রিয়া সাজানোর পাশাপাশি এনবিআরের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি।
বিদেশে পাচার করা অর্থ উদ্ধারে দায়ের করা মামলার বিচারিক প্রক্রিয়ায় বাধাগুলো অপসারণে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অ্যাটর্নি জেনারেলের নেতৃত্বে একটি আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত দিয়েছে গত ডিসেম্বরে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সভা।
এছাড়া, পাচারকৃত অর্থের গন্তব্য দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ডসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং-চায়না ও থাইল্যান্ড হতে পারস্পরিক আইনগত সহায়তা পাওয়ার জন্য কূটনৈতিক ব্যবস্থা জোরদার করা ও চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এছাড়া, যেসব দেশ কর স্বর্গ এবং ‘অফশোর জুরিসডিকশন রুট’ হিসেবে কাজ করে, তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক সীমিত উল্লেখ করে সমন্বয় কমিটি বলেছে, এসব দেশ ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ট্যাক্স ইনফরমেশন এক্সচেঞ্জ এগ্রিমেন্ট এবং মিউচ্যুয়াল এডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসিসটেন্স ইন কাস্টমস মেটারস স্বাক্ষরে এনবিআরকে নির্দেশনা দিয়েছে কমিটি।