জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি নেমেছে নয় মাসের
নিজস্ব প্রতিবেদক : জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি নয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমেছে। এই পতনের জন্য আমদানি হ্রাস এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে তারল্য সংকটকে দায়ী করেছেন ব্যাংকাররা৷
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি জানুয়ারিতে ১২.৬২%-এ নেমে এসেছে, যা গত বছরের ডিসেম্বরে ছিল ১২.৮৯%। তবে গত বছরের এপ্রিলের (১২.৪৮%) তুলনায় এটি বেড়েছে।
যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, “বেসরকারি খাতের ঋণের গ্রোথ কমার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো আমাদের গত কয়েক মাস ধরে আমদানির পরিমাণ কমে গেছে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, আমদানির জন্য লেটার অফ ক্রেডিট (এলসি) খোলার পরিমাণ ২০২৩ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে প্রায় ২৫% কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-জানুয়ারি মাসে এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ৩৯.৪৬ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ অর্থবছরের একই সময়ের থেকে ২৪.৭৯% বা ১৩ বিলিয়ন ডলার কম।
এই সময়ের মধ্যে পেট্রোলিয়াম ছাড়া মূলধনী যন্ত্রপাতি, ভোগ্যপণ্য, ইন্টারমিডিয়েট পণ্য এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে মূলধনী যন্ত্রপাতির জন্য এলসি খোলা হয় ১.৪১ বিলিয়ন ডলারের, যা গত বছরের একই সময়ের মধ্যে ৪.২৫ বিলিয়ন থেকে কম।
মির্জা ইলিয়াস বলেন, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি বছরের শুরুতে ধীরগতিতে বাড়লেও শেষের দিকে যেয়ে তা বৃদ্ধি পায়।
২০২২ সালের আগস্টে বেসরকারি খাতের ঋণ বেড়েছে ১৪.০৭%, যা চলতি অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত ১৪.১% এর লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি।
এরপর সেপ্টেম্বরে তা কমে ১৩.৯৩% এবং গত বছরের অক্টোবরে ১৩.৯১% এ নেমে আসে।
আমদানি হ্রাসের পাশাপাশি, দুটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও কিছু কারণ উল্লেখ করেছেন। তারা বলেন, কিছু শরীয়াহ-ভিত্তিক ব্যাংকের ঋণে অসামঞ্জস্যতা দেখা দেওয়া বিষয়ক প্রতিবেদনের কারণে ক্রেডিট প্রবাহকে কমে যায়।
ব্যাংকাররা বলেন, এসব মিডিয়া প্রতিবেদনের পর থেকে শরিয়াহ-ভিত্তিক ব্যাংকগুলো এখন বেসরকারি ঋণের উপর জোর দেওয়ার পরিবর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে তাদের সংবিধিবদ্ধ তারল্য অনুপাত (এসএলআর) এবং নগদ রিজার্ভ অনুপাত (সিআরআর) নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
তারল্য সংকটে জর্জরিত ব্যাংকগুলো এখন ৮% পর্যন্ত আমানত নিচ্ছে এবং ৯% হারে ঋণ দিচ্ছে। এতে চাপে রয়েছে তাদের লাভের মার্জিন।
এদিকে, জানুয়ারিতে ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য আগের মাসের তুলনায় ৮,১২৮ কোটি টাকা কমে ১,৩৭,৬০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুনে ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৩ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা।