আজ: বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১১ মার্চ ২০২৩, শনিবার |

kidarkar

সময় ও ব্যয় কমিয়ে কাস্টমসের দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্য সরকারের

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০২৬ সালে এলিডিসি থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের প্রধান শুল্ক স্টেশন- চট্টগ্রাম, ঢাকা ও বেনাপোল আধুনিকায়নে ১৬৮৬.৪৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার।

কাস্টমস আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটিতে ৮৭ শতাংশ অর্থ ঋণ হিসেবে দিবে বিশ্বব্যাংক।

প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আগামী ১২ মার্চের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির ( একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে পরিকল্পনা কমিশনে সূত্রে জানা গেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)- জানায়, শুল্কায়ন অবকাঠামো উন্নয়ন ও কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের সময় ও খরচ কমিয়ে আনতে প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছে। আধুনিক শুল্কায়ন পদ্ধতির মাধ্যমে রাজস্ব আয় বাড়াতেও প্রকল্পটি ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রকল্পটি থেকে প্রত্যাশিত বিভিন্ন সুফলের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো- আমদানি ও রপ্তানি চালানে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের সময় ২৫ শতাংশ কমা; আমদানি ও রপ্তানির ঘোষণা যাচাই বৃদ্ধি এবং গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত পয়েন্টে কর্মীর মাধ্যমে ফিজিক্যাল ইনস্পেকশনের ঘটনা বর্তমানের ১০ শতাংশ থেকে কমে ৫ শতাংশে নেমে আসা।

বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি পণ্যের কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সে প্রায় ১১.৫ দিন লাগে; রপ্তানির ক্ষেত্রে লাগে প্রায় পাঁচ দিন।

এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস (সিসিএইচ) এবং কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট প্রশিক্ষণ একাডেমি (সেভটা)-র জন্য পরিবেশবান্ধব বা সবুজ-সনদপ্রাপ্ত, টেকসই ও লিঙ্গ-অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবনও নির্মাণ করা হবে।

ফলে একটি স্বীকৃত ল্যাবরেটরি এবং অন্যান্য স্থাপনাসহ দরকারি অবকাঠামো পাবে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস।

প্রকল্পের আওতায় তিনটি শুল্ক স্টেশনের জন্য ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি, ডেক্সটপ কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, স্ক্যানার ইত্যাদি সামগ্রীও কেনা হবে।

একটি ই-কাস্টমস সুবিধাও চালু করা হবে। এতে বন্দরে সরাসরি উপস্থিত থাকার প্রয়োজনীয়তা কমবে ৬০ শতাংশ এবং কাস্টমস হাউজে না গিয়েই যেন আমদানি-রপ্তানি চালান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায় তা নিশ্চিত হবে।

দেশের কাস্টমস হাউজগুলো দীর্ঘদিন ধরে আধুনিকায়ন ও স্বয়ংক্রিয়করণের আহ্বান জানিয়ে আসা ব্যবসায়ীরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন (বিজিএমইএ)-র সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে কাস্টমস পদ্ধতি আধুনিকায়ন করতে হবে। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশে পৌঁছাতে চাই। কিন্তু, কাস্টমস অটোমেশন বা আধুনিকায়ন ছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ হবে না। ম্যানুয়েল কাস্টমস পদ্ধতির মাধ্যমে অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না’।

তিনি বলেন, কাস্টমসে আধুনিকায়ন হলে আমদানি-রপ্তানি বাড়বে। ‘এখন যদি তা ১০ বিলিয়ন ডলার হয়, আগামীতে তা ১৬ বিলিয়ন ডলার হবে। এভাবে অর্থনীতি এগিয়ে যাবে’।

নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিকেএমইএ-র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘আমরা আশা করি- এই কাজ সঠিকভাবে এবং নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে। এতে ব্যবসায়ীরা যেমন উপকৃত হবে, তেমনি শুল্ক ফাঁকি দেওয়া রোধ করা যাবে, ফলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে। ব্যবসায়ীদের বন্দরে যাতে কম সময় ব্যয় করতে হয়ে সেটাও নিশ্চিত হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর সাবেক সদস্য ফরিদ উদ্দিনের মতে, ‘প্রকল্পে আইকনিক বিল্ডিং নির্মাণসহ অনেক কিছু বলা আছে। কিন্তু, বেসরকারি খাত কাস্টমসে যেসব সমস্যায় পড়ে, তা এই প্রকল্পের মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ আছে কিনা – সেটা আগে দেখতে হবে’।

পণ্যের শ্রেণিকরণ সংশোধন করতে হবে, এর পাশাপাশি আমদানির শুল্কায়ন মূল্য নিয়ে যেসব জটিলতা তৈরি হচ্ছে তারও সমাধান থাকতে হবে।

‘কিছুদিন আগেও ব্যবসায়ীরা বলেছেন, তারা রেকর্ড ভিত্তিক শুল্কায়ন মূল্যের পরিবর্তে (আমদানি পণ্যের) বর্তমান মূল্য ভিত্তিক পর্যালোচনা চান। এরপর কাস্টমসে দেরি হওয়া ও টেস্টিং এর কারণেও ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়েন’- যোগ করেন তিনি।

ফরিদ উদ্দিন আরো বলেন, এসব সমস্যার আন্তর্জাতিক মানের কোনো সমাধান এই প্রকল্পে আছে কিনা সেটা দেখতে হবে। ‘ইউরোপে একটি বিল অব এন্টি সাবমিট করতে ৩০ সেকেন্ড সময় লাগে’। সে তুলনায় বাংলাদেশে দীর্ঘসময় লাগার দিকটি তুলে ধরেন তিনি।

প্রস্তাবিত উন্নয়ন প্রকল্প (ডিপিপি)- নথিতে বলা হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উত্তরণ হলে প্রতিযোগী সক্ষমতার বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ দেখা দেবে। বিশেষ করে, রপ্তানিকারকরা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বাজারগুলোয় আর শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবেন না।

প্রধান বাজারগুলোয় এই অগ্রাধিকার সুবিধা হারালে বাংলাদেশের বার্ষিক রপ্তানি সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ বা প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার কমতে পারে।

এটি বিশ্ববাজারে বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল ) দেশগুলোর অবস্থানকে মৌলিকভাবে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। যা মোকাবিলায় বাণিজ্যের জন্য একটি অনুকূল নীতি পরিবেশের অধীনে সমসাময়িক পরিবহন ও বাণিজ্য সুবিধার ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন।

প্রকল্পের সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা বলা হয়েছে- দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা হিসেবে আঞ্চলিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত সমস্যা, দুর্বল পরিবহন ব্যবস্থা, কাষ্টমস হাউজগুলোর সক্ষমতায় ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে।

প্রকল্প প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ। তাই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের বিষয়টি বিবেচনা করে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করাটা জরুরি।

আলোচিত কিছু সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য, নতুন প্রকল্পটিতে আধুনিক শুল্ক নীতি এবং বিশ্বব্যাপী সর্বোত্তম চর্চা অনুসরণ; একটি প্রস্তাবিত জাতীয় শুল্ক নীতি; সম্পূর্ণরূপে কার্যকর একটি কাস্টমস ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিশনারেট; একটি অনুমোদিত অর্থনৈতিক অপারেটর; পোস্ট ক্লিয়ারেন্স সমীক্ষা; পণ্য আগমনের আগে প্রক্রিয়াকরণ; বন্ডেড ওয়্যারহাউজ বিধিমালা; বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো কমিশনারেট গঠন; শুল্ক আধুনিকীকরণে কৌশলগত কর্ম পরিকল্পনা ২০২৩-২৬ প্রণয়ন; একটি ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম এবং শুল্ক উন্নয়ন কৌশলের মাধ্যমে কাস্টমসের সক্ষমতা জোরদার করার উদ্যোগও রয়েছে।

২০২৬ সাল নাগাদ প্রকল্পটি সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এনবিআরের। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজটি করেছে বিশ্বব্যাংক।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.