আজ: রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২১ মার্চ ২০২৩, মঙ্গলবার |

kidarkar

যুক্তরাষ্ট্র চায় না রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হোক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে তিন দিনের সফরে বর্তমানে মস্কোতে আছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সোমবার (২০ মার্চ) রাশিয়া পৌঁছান শি।

এ দুই নেতার প্রধান আলোচ্য বিষয় হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। মস্কো যাওয়ার প্রায় এক মাস আগে যুদ্ধ বন্ধে ১২ দফার একটি শান্তি প্রস্তাব দেয় চীন। সেখানে জরুরিভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি আলোচনার কথা বলেছে বেইজিং।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সোমবারই চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ বৈঠকে পুতিন বলেছেন, চীন যে শান্তি প্রস্তাব দিয়েছে সেটি নিয়ে আলোচনা করবেন তারা।

তবে চীন এখনই যুদ্ধ বন্ধ করার যে কথা বলছে— সেটির বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

শি জিনপিং মস্কো যাওয়ার পরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তৎপর হয়েছে মার্কিনিরা।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন দাবি করেছেন চীন যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু এতে রুশ সেনাদের ইউক্রেন ছাড়ার বিষয়টির উল্লেখ নেই। তার মতে, যদি সেনা প্রত্যাহার ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ বিরতি হয় তাহলে— রাশিয়া এ সময়টা ব্যবহার করে নিজ সেনাদের আবারও সংগঠিত করার চেষ্টা করবে এবং পরবর্তীতে সময় বুঝে হামলা চালাবে।

এ ব্যাপারে ব্লিংকেন বলেছেন, (সেনা প্রত্যাহার ছাড়া) এখন যুদ্ধবিরতির বিষয়টি রাশিয়ার বিজয়কে সমর্থন জানানোর শামিল হবে। এটি স্বাধীন প্রতিবেশী দেশের ভূখণ্ড জোরপূর্বক দখল করার বিষয়টিকে স্বীকৃতি দেবে।

তিনি আরও বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এমন যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন জানায় যেটি শুধুমাত্র একটি টেকসই ও দীর্ঘকালীন শান্তি আনবে।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, চীনের শান্তি প্রস্তাবে বেসামরিকদের নিরাপত্তা এবং পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের যে কথা বলা হয়েছে, সেটিকে সমর্থন জানান তারা। তবে শান্তি প্রস্তাবের মূল বিষয় হতে হবে ‘ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা অক্ষুন্ন রাখা।’

তিনি বলেছেন, ‘যে পরিকল্পনায় এ মূল বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি সেটি যুদ্ধ সামরিক সময় বন্ধ রাখার একটি  কৌশল অথবা সময়ক্ষেপণ। যার মাধ্যমে অন্যায় সংঘটিত হওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’ তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, চীন সমর্থিত রাশিয়ার কোনো কৌশলের ফাঁদে যেন বিশ্ব পা না দেয়।

এছাড়া চীনেরও কঠোর সমালোচনা করেছে ব্লিংকেন। তিনি বলেছেন, চীন যে চেষ্টা চালাচ্ছে সেটি নির্দেশ করছে, ইউক্রেনে রুশ সেনারা যেসব অপরাধ সংঘটিত করেছেন সেগুলোর জন্য তাদের বিচারের মুখোমুখি করার  কোনো দায়বদ্ধতা নেই বেইজিংয়ের।

উল্টো তিনি দাবি করেছেন, চীন রাশিয়াকে কূটনৈতিকভাবে প্রশ্রয় দেওয়ার চেষ্টা করছে।

অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী কূটনীতিক ও জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক জন কিরবি বলেছেন, ‘হোয়াইট হাউজ খুব কাছ থেকে পুতিন-শি জিনপিংয়ের বৈঠক ও কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে।’ তিনিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘এ মুহূর্তে যুদ্ধবিরতি মানে হলো— রাশিয়ার অর্জনগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া, সেনাদের প্রশিক্ষণ ও রসদ পাঠানোর জন্য পুতিনকে সময় দেওয়া, যেন যখন যে সময় প্রয়োজন পুতিন আবারও তার হামলা শুরু করতে পারেন।’ সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে তিনি বলেছেন, চীন এখন যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব দিলে সেটি যুক্তরাষ্ট্র ‘প্রত্যাখ্যান’ করবে।

এছাড়া রাশিয়া ও চীনের মধ্যে বিয়ের সম্পর্ক আছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। কিন্তু তার দাবি, এ বিয়েটি ভালোবাসার ওপর ভিত্তি করে হয়নি। এর বদলে সুবিধা আদায়ের জন্য হয়েছে। জন কিরবি আরও দাবি করেছেন, রাশিয়া ও চীন একে-অপরকে বিশ্বাস করে না।

এছাড়া শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সম্ভাব্য ভার্চুয়াল বৈঠক নিয়েও কথা বলেছেন জন কিরবি। তিনি জানিয়েছেন, এ ধরনের বৈঠককে তারা স্বাগত জানাবেন।

শি জিনপিং মস্কো আসার একদিন আগে ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চল মারিউপোলে যান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। জন কিরবির দাবি মারিউপোলের যে স্থানে পুতিন গেছেন, সেটি যুদ্ধের সম্মুখভাগ থেকে অনেক দূরে। তিনি বলেছেন, ‘পুতিনকে পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে— তিনি দেখাতে চান এখনো সবকিছু (সেনা কমান্ড) তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চলগুলো তার সেনাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্ত এ নিয়ে সন্দেহ নেই যেখানে সত্যিকারের যুদ্ধ হচ্ছে সেখানে কতটা খারাপ অবস্থায় আছে তার সেনারা এবং পুতিন নিজেও এটি দেখতে পারেন।’

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.