যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫৭৮ কোটি টাকার এলএনজি আমদানি হচ্ছে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পেট্রোবাংলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মেসার্স এক্সেলারেট এনার্জি এলপি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এক কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা হচ্ছে। এক কার্গোতে এলএনজির পরিমাণ হচ্ছে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ। প্রতি এমএমবিটিইউ ১৩ দশমিক ৬ হাজার ৯০০ ডলার হিসেবে এক কার্গো এলএনজি আমদানিতে ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ ব্যয় হবে বাংলাদেশী মুদ্রায় ৫৭৮ কোটি ৬৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
সূত্র জানায়, দেশের বিদ্যমান ও ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা পূরণের জন্য কাতার ও ওমানের সঙ্গে দুটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজির মূল্য স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে বহুগুণে বেড়ে যাওয়ায় ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ ছিলো।
চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ ঘাটতির ফলে শিল্প খাতে উৎপাদন, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতে স্বাভাবিক গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। গ্যাসের ঘাটতির ফলে শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে গ্যাস সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে এবং গ্যাসের উর্ধ্বমূল্য বিবেচনায় প্রয়োজনে বর্ধিত মূল্যে হলেও গ্যাস সরবরাহের জন্য অনুরোধ করা হয়।
এ অবস্থায়, স্পট মার্কেট থেকে উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানির বর্ধিত ব্যয় নির্দিষ্ট শ্রেণির ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে আদায়ের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি এস, আর, ও অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ১৪ টাকা ঘনমিটার, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ও শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ৩০ টাকা ঘনমিটার এবং বাণিজ্যিক (হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য) ক্ষেত্রে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ৩০ দশমিক ৫০ টাকা ঘনমিটার নির্ধারণ করা হয়। যা ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। সে লক্ষ্যে দেশে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য স্পট মার্কেট থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সর্বমোট ১২ কার্গো এলএনজি সংগ্রহের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী (প্রধানমন্ত্রী) নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ, শিল্প ও সার কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য গত ফেব্রুয়ারি থেকে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনসরণ করে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) প্রস্তুত করে আইন ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং গ্রহণ করা হয় এবং সে পরিপ্রেক্ষিতে এমএসপিএ টি চূড়ান্ত করা হয়। পরবর্তীতে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির নীতিগত অনুমোদনের ভিত্তিতে পেট্রোবাংলা এমএসপিএ অনুস্বাক্ষরকারী ২১টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চূড়ান্তকৃত এমএসপিএ স্বাক্ষর করে।
সূত্র আরও জানায়, বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবারাহের জন্য ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে স্পট মার্কেট থেকে দুই কার্গো এলএনজি ক্রয় করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে গত ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এক কার্গো এলএনজি ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এপ্রিল মাসে স্পট মার্কেট থেকে আরও এক কার্গো এলএনজি ক্রয়ের জন্য এমএসপিএ অনুস্বাক্ষরকারী ২১টি প্রতিষ্ঠানের কাছে এলএনজি সরবরাহের দরপ্রস্তাব আহ্বান করে ইমেইলে চিঠি পাঠানো হয়।
জানা গেছে, গত ২০ মার্চ তারিখে দরপ্রস্তাব পাঠানোর শেষ দিনে ৬টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে এবং ৫টি দরপ্রস্তাব রেসপন্সিভ হয়। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এক্সেলারেট এনার্জি এলপি প্রতি ইউনিটের দাম ১৩ দশমিক ৬ হাজার ৯০০ ডলার উল্লেখ করে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। দরপ্রস্তাবে দ্বিতীয় স্থান অধিকারকারী সিঙ্গাপুর ভিত্তিক ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড প্রতি ইউনিটের দাম ১৩ দশমিক ৯ হাজার ৭০০ ডলার উল্লেখ করে। এ অবস্থায় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক্সেলারেট এনার্জি এলপি এক কার্গো সমপরিমাণ ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি সরবরাহ করবে। এতে ভ্যাট, ট্যাক্সসহ মোট ব্যয় হবে ৫৭৮ কোটি ৬৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।