প্রথম রোজায়ও যানজট দুর্ভোগে রাজধানীবাসী
নিজস্ব প্রতিবেদক : রমজান মাস শুরু হওয়ার পর টানা তিন দিন ছিল ছুটি। যার কারণে গত তিন দিনে রাজধানীতে ছোট-বড় কোনো যানজট সৃষ্টি হয়নি। ছুটি শেষে রমজানের প্রথম কর্মদিবসে আজ যানজটে নাকাল ঢাকাবাসী। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে গাড়ির জট লেগে রয়েছে।
রোজা রেখে যানজটে গাড়িতে বসে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে অফিসগামী মানুষকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে শহরে যানজটের পরিমাণও বাড়ছে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় গাড়ি আটকে রয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানীর বিমানবন্দর, কুড়িল, বনানী, বাড্ডা, মহাখালী, হাতিরঝিল, রামপুরা, কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ী ও কালশী এলাকায় যানজট রয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে রাস্তায় গাড়ির চাপও বাড়ছে বলে জানা গেছে।
তবে এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা চলছে বিমানবন্দর থেকে মহাখালী পর্যন্ত সড়কে। সকাল থেকেই বিমানবন্দর সড়ক থেকে মহাখালী পর্যন্ত তীব্র যানজট। গাড়ি এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে। দীর্ঘসময় গাড়িতে বসে থেকে হাল ছেড়ে হেঁটে রওনা দিয়েছেন অফিসগামীরা।
রাজধানীজুড়ে যানজটের বিষয়ে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ বলছে, তিন দিন ছুটি থাকার পর রমজানের প্রথম কর্মদিবসে একসঙ্গে সবাই কর্মস্থলে যাচ্ছেন। ফলে রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়েছে। তাছাড়া রমজানে অফিস টাইম পরিবর্তনের কারণেও রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়েছে। ফলে রাজধানীজুড়ে এমন যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার (২৭ মার্চ) সকাল থেকে রাজধানীজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
সকালে রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত সড়কে সরেজমিনে দেখা যায়, বিমানবন্দর থেকে শেওড়া ওভার ব্রিজ পর্যন্ত যানচলাচল স্থবির হয়ে রয়েছে। শেওড়া থেকে বনানী পর্যন্ত সড়কে ধীরগতিতে যানচলাচল করছে। আবার বনানী থেকে ধীরগতিতে যানচলাচলের কারণে মহাখালী পার হয়ে জাহাঙ্গীর গেট এলাকা পর্যন্ত সৃষ্টি হয়েছে যানজট।
বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট যাওয়ার জন্য সকাল ৮ টায় বাসে উঠেন কাজী সালেহ। তিনি বলেন, কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বনানীর দিকে গাড়ি কোনোভাবেই এগোচ্ছিল না। ঘণ্টার বেশি সময় গাড়ি শেওড়ায় আটকে ছিল। সর্বশেষ ধীরগতিতে মহাখালী এলেও আবার আটকে যায়। পরে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে রওনা হই ফার্মগেটের দিকে। রোজা রেখে এভাবে যানজটের মধ্যে চলাচলের কারণে অনেক ভোগান্তি হচ্ছে আমাদের।
বনানী ও বিমানবন্দর সড়কের যানজট নিয়ে ডিএমপির ট্রাফিক গুলশান বিভাগের গুলশান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আজ রাস্তায় গাড়ির চাপ তুলনামূলক একটু বেশি। তিন দিন বন্ধ থাকার পর আজ রাজধানীতে সব অফিস খুলেছে। এদিকে, রমজানের কারণে অফিস টাইম একটু পরিবর্তন হয়েছে। সবমিলিয়ে একসঙ্গে সকাল থেকে গাড়ির চাপ বেড়েছে। তাই এই যানজট। এছাড়া এখনো সব স্কুল বন্ধ হয়নি। অনেক স্কুল এখনো খোলা। একসঙ্গে সকাল ৮টা থেকে রাস্তায় মানুষ ও গাড়ি বের হওয়ায় চাপ বেড়ে গেছে।
এদিকে, কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাড্ডা পার হয়ে রামপুরা পর্যন্ত সড়কেও রয়েছে যানজট ও গাড়ির চাপ। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এ অবস্থার কোনো উন্নতি ছিল না।
রাজধানীর ভাটারা থেকে বনশ্রী এলাকায় অফিসে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলেন মো. ফরিদুর রহমান। তিনি বলেন, নতুন বাজারে এসে দেখি রাস্তা একদম বন্ধ। এ পরিস্থিতি দেখে বাসে না উঠে হেঁটে রওনা হয়ে উত্তর বাড্ডা পর্যন্ত আসি। পরে উত্তর বাড্ডা থেকে একটি রিকশা নিয়ে বনশ্রী পর্যন্ত আসি।
প্রগতি সরণি এলাকার যানজট নিয়ে ডিএমপির ট্রাফিক গুলশান বিভাগের বাড্ডা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) ইমরান হোসেন বলেন, রাজধানীর অন্য সব এলাকার মতো প্রগত সরণি এলাকায়ও সকাল থেকে প্রচুর গাড়ির চাপ। তবে আশা করছি দুপুরের দিকে চাপ কিছুটা কমে যাবে। তবে ইফতারের আগে আবার গাড়ির চাপ কিছুটা বাড়বে।
এদিকে, সকাল থেকে চলমান যানজটের প্রভাব পড়ছে হাতিরঝিল এলাকায়ও। সাধারণত রাজধানীর অন্য সব এলাকায় যানজট থাকলেও এই এলাকা যানজটমুক্ত থাকে। তবে আজ হাতিরঝিলেও যানজট। এই যানজট সোনারগাঁও হোটেল সিগন্যাল পর্যন্ত পৌঁছেছে।
এ বিষয়ে হাতিরঝিল দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রী মকসুদুর রহমান বলেন, আজ যানজট থেকে হাতিরঝিলও রক্ষা পায়নি। সাধারণত হাতিরঝিলে যানজট থাকে না। তবে তিন দিনের ছুটির প্রভাবে আজ হাতিরঝিলেও যানজট।
এদিকে, সোনারগাঁও হোটেল মোড়ে যানজটের বিষয়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পরিদর্শক আনোয়ার কবির বলেন, হাতিরঝিল, বাংলামটর ও সোনারগাঁ হোটেল মোড়সহ আশপাশের সব রাস্তায় গাড়ির চাপ খুব বেশি। যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে বেলার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির চাপ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি গাড়ি রাস্তায় চলমান রাখার।