পুঁজিবাজার টেনে তুলতে বিএসইসির নতুন উদ্যোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারকে টেনে তুলতে বিভিন্ন ছাড় দিচ্ছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। তাতে কাজ না হওয়ায় বিএসইসি এবার ঘোষণা দিয়েছে— ভালো কোম্পানির দাম বেশি হলেও তাতে মার্জিন ঋণ দেয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে মূল্য-আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ৪০-এর বেশি হলেও সমস্যা হবে না। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) র এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের সই করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগের তিন বছর যদি কোনো কোম্পানি ‘এ’ ক্যাটাগরিতে থাকে এবং তার পরিশোধিত মূলধন যদি ৫০ কোটি টাকার বেশি হয়, তাহলে যেসব কোম্পানির মূল্য-আয় অনুপাত ৫০ সেসব শেয়ার মার্জিন ঋণ দেয়া যাবে। আগে কোনো কোম্পানির মূল্য-আয় অনুপাত ৪০-এর বেশি হলে সেখানে মার্জিন ঋণ দেয়া যেত না।
মূল্য-আয় অনুপাত বা পিই রেশিও হচ্ছে সেই রেশিও যেটা ব্যবহার করে বের করা হয় যে শেয়ারটির দাম বেশি না কম দামে বাজারে লেনদেন হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে শেয়ারপ্রতি মুনাফা দিয়ে শেয়ারের বাজার মূল্যকে ভাগ করা হয়।
বিনিয়োগকারীরা বলেন, পিই রেশিও ১৭-এর আশপাশে হলে সেই শেয়ারে বিনিয়োগ করা ভালো। তবে ভালো শেয়ারের ক্ষেত্রে মূল্য-আয় অনুপাত একটু বেশি হতে পারে। আর মার্জিন ঋণ হচ্ছে শেয়ার কেনার জন্য যে ঋণ ব্রোকারেজ হাউসগুলো বিনিয়োগকারীদের দিয়ে থাকে। এখন বেশি পিই রেশিও শেয়ারে বিনিয়োগ করা ঝুঁকিপূর্ণ। আর এসব শেয়ারে মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করা আরও ঝুঁকিপূর্ণ। মার্জিন ঋণের উচ্চ সুদের হারের কারণে বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব হওয়ার সম্ভাবনা আরও বাড়ে।
তা সত্ত্বেও চারটি কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানালেন বিএসইসির মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘বিএসইসি চেয়েছে বিনিয়োগকারীরা ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করুক। দ্বিতীয়ত, এর আগে ৪০ পিইর যেসব কোম্পানিতে মার্জিন ঋণ দেয়া হয়েছিল, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সেগুলোর মুনাফা কমে গেছে। এখন সেগুলোর পিই বেড়ে গেছে। এসব শেয়ারের বিনিয়োগকারীরা যেন ফোর্স সেলের আওতায় না পড়েন, সে জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
‘এ ছাড়া এর ফলে দেশের পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়বে। বাজার মধ্যস্থতাকারীরা এর জন্য অনেক দিন ধরে বলে আসছিলেন। সব মিলিয়ে আজ আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি’,— বলেন মুখপাত্র রেজাউল করিম।
তবে এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েও পুঁজিবাজারকে টেনে তোলা যাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা কাটছে না। পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘এভাবে বাজার ভালো করা যাবে না। যদি কোম্পানি ভালো করে তাহলে বাজার ভালো করবে। এভাবে জোর করে বাজার ধরে রাখার চেষ্টা করলে ঝুঁকি বাড়ে, আখেরে কোনো লাভ হয় না।’
বাজারের পতন ঠেকাতে এর মধ্যে ফ্লোর প্রাইস দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা বাজারের ক্ষতি করছে। এখন ঝুঁকি আরও বাড়ানো হলো।