ঘূর্ণিঝড়ের আভাস, ফের ৪০ ডিগ্রি ছাড়াতে পারে তাপমাত্রা
নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি মাসের (মে) দ্বিতীয় সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। একই সঙ্গে এ মাসে ফের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়াতে পারে। মে-তে রংপুর ও সিলেট অঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হতে পারে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস দিতে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি এ পূর্বাভাস দিয়েছে। মঙ্গলবার (২ মে) আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকার ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রে ও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কমিটির নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন।
বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান জানান, এ মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। মে মাসে সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।
বঙ্গোপসাগরে নতুন করে কোনো ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে এর নাম হবে ‘মোচা’। নামটি ইয়েমেনের দেওয়া।
তিনি বলেন, ‘পূর্বাভাস মডেলগুলোর তথ্য অনুযায়ী আগামী ৯ মে লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। সেটি ১১ মে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তবে এটির গতিপথ কী হবে তা এখনই সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, এটি চট্টগ্রাম ও মিয়ানমারের উপকূল দিয়ে স্থলভাগ অতিক্রম করতে পারে।’
এ মাসে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য বেশি থাকতে পারে জানিয়ে আজিজুর রহমান বলেন, এ মাসে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে (খুলনা) একটি তীব্র তাপপ্রবাহ (তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি) এবং দেশের অন্যত্র ১ থেকে ২টি মৃদু (তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা মাঝারি (তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরণের তাপ প্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
গত মাসে (এপ্রিল) সারাদেশে তাপপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়েছিল। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়ে তাপপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করে। এতে জনজীবন চরম দুর্বিসহ হয়ে ওঠে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আরও জানান, এ মাসে দেশে ১ থেকে ৩ দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ মাঝারি বা তীব্র কালবৈশাখী ঝড় এবং ৩ থেকে ৫ দিন বজ্র ও শিলা বৃষ্টিসহ হালকা বা মাঝারি ধরনের কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে।
মে মাসে দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোতে স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান থাকতে পারে। তবে উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের প্রেক্ষিতে দেশের উত্তরাঞ্চল (রংপুর বিভাগ) ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে (সিলেট অঞ্চল) স্বল্প মেয়াদী আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলেও জানান বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল (পলাশ) বলেন, আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল হতে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে ৮ থেকে ৯ মের মধ্যে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়ে ১০ মের মধ্যে গভীর নিম্নচাপ ও ১১ মে পুর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করছে।
একই সঙ্গে আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল, ইউরোপিয়ান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করছে ১০ মে আন্দামান ও নিকবার দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টির।
ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ নিয়ে আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান আবহাওয়া পূর্বাভাস তুলে ধরে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি ১৪ মে মধ্যরাতের পরে থেকে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এলাকা দিয়ে সরাসরি স্থল ভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা নির্দেশ করছে। আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল গ্লোবাল ফোরকাস্ট সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে, স্থলভাগে আঘাত করার সময় ঘূর্ণিঝড়টির খুবই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসাবে স্থল ভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে। সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে ঘূর্ণিঝড়টির স্থল ভাগে আঘাতের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতি থাকতে পারে ১৪০ থেকে ১৭০ কিলোমিটার।
আবহাওয়া অধিদপ্তর মার্চ মাসের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে দীর্ঘ মেয়াদী পূর্বাভাস প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এপ্রিল মাসে দেশে সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৬ দমমিক ৪ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় তাপীয় লঘুচাপ অবস্থান করায় ৪ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত মৃদু থেকে মাঝারি, ১৩ থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত মাঝারি থেকে তীব্র এবং ২৪ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যায়।
গত মাসের ১৭ তারিখে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ঈশ্বরদীতে রেকর্ড করা হয়। এ মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। সারাদেশে গড় তাপমাত্রা ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল বলেও দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।