রাজা তৃতীয় চার্লসের ঐতিহাসিক অভিষেকের অপেক্ষায় ব্রিটেন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ৭০ বছরে প্রথম কোনো রাজ্যাভিষেক শুরু হবে যুক্তরাজ্য সময় শনিবার সকাল থেকে। যা ঘিরে রাজা তৃতীয় চার্লস এবং রানিকে ঘোড়ার গাড়িতে করে নিয়ে ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে যাওয়ার জন্য শেষ মূহূর্তের প্রস্তুতি চলছে।
বৃষ্টির পূর্বাভাস সত্ত্বেও রাজার বাহন যে পথে যাবে সেখানে এরইমধ্যে ভিড় করতে শুরু করেছেন দর্শনার্থীরা।
প্রায় ১০০টি দেশের প্রধানের উপস্থিতি ঘিরে সেন্ট্রাল লন্ডনে থাকছে ব্যাপক নিরাপত্তা।একইসাথে রাজতন্ত্রের বিপক্ষে যারা তারা তাদের কথামতো প্রতিবাদও শুরু করেছে।
অভিষেক অনুষ্ঠান প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে চলবে। যা একেবারে সামনাসামনি বসে দেখবেন ২৩০০ বিশেষ অতিথি। যার মধ্যে আছেন প্রিন্স হ্যারি, ডিউক অফ সাসেক্স, যিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুক্রবার এক সাধারণ ফ্লাইটে এসে পৌঁছেছেন।
এর আগে প্রিন্স হ্যারি তার ভাই প্রিন্স উইলিয়াম, প্রিন্স অফ ওয়েলসের সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এমন কথা জানানোর পর এই প্রথমবার কোনো রাজকার্যে দেখা যাচ্ছে তাকে।
তবে প্রিন্স হ্যারির স্ত্রী মেগান যুক্তরাষ্ট্রেই আছেন, আর অভিষেক অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রিন্স হ্যারিও সেখানে ফেরত যাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
চার্লস যুক্তরাজ্য ও আরো ১৪টি রাষ্ট্রের রাজত্ব পান গত সেপ্টেম্বরে, যখন তার মা এলিজাবেথ সিংহাসনে বসার ৭০ বছর পর মারা যান।
অভিষেক অনুষ্ঠান আয়োজন ঘিরে কয়েকমাস ধরে ব্যাপক পরিকল্পনার পর এই ৪০তম অভিষেক ১০৬৬ সালের পর আবারো ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
অভিষেকের আগমুহূর্তে রাজাকে বেশ শান্তই মনে হয়েছে। কড়া নিরাপত্তাসহ ওয়েলসের প্রিন্স ও প্রিন্সেসকে নিয়ে মলে ঘুরে বেড়ান তিনি।
৬৯ বছর বয়সী বারবারা এবং তার বান্ধবী পলিনা একটা ‘করোনেশন স্ট্রিট’ লেখা ব্যানার নিয়ে দর্শকসারিতে অবস্থান নিয়েছেন।
‘আমরা আসলে ক্যাম্প করতে চাইনি, কিন্তু এত মানুষ এখানে, মনে হল যদি আগে থেকে ক্যাম্প না করি তাহলে আমরা সামনের দিকে যেতেই পারবো না,’ বলেন মিজ বারবারা।
উইল্টশায়ারের কেটি গর্ডন তার দুই মেয়েকে নিয়ে মুখে রঙ করছিলেন। তিনি মনে করছেন নতুন রাজা এবং রানি ‘দারুণ’ হতে যাচ্ছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যা হতেই শতশত তাবুর দেখা মিলতে থাকে অভিষেকের পথ ঘিরে। তারা সবাই হাজির হয়েছেন এই ঐতিহাসিক ঘটনার স্বাক্ষী হবার আশায়।
অভিষেক অনুষ্ঠানের মূল দায়িত্ব পালন করছেন ক্যান্টারবুরির আর্চবিশপ জাস্টিন ওয়েলবি। অতিথি তালিকায় মার্কিন ফাস্ট লেডি জিল বাইডেন থেকে শুরু করে আছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ ও উপস্থাপক জুটি অ্যান্ট এবং ডেক।
ওলেনা জেলেন্সকি, ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকির স্ত্রী শুক্রবার বাকিংহাম প্যালেসে অভিষেকপূর্ব অনুষ্ঠানে প্রিন্সের অফ ওয়েলস ক্যাথরিনের সাথে দেখা করেন।
এ সময় চার্লসকে ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডির সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ কথা বলতে দেখা যায়। একইসাথে তিনি ক্রাউন প্রিন্সেস অফ ডেনমার্ক ম্যারির সাথে হাত মেলান ও গালে চুমু খান।
বিতর্ক তৈরী হয়েছে যে যারা বাড়িতে থাকবে তাদেরও সেখান থেকে রাজার প্রতি আনুগত্য স্বীকারে শপথ নিতে হবে কি না।
চার্চ অফ ইংল্যান্ড এটি পরিষ্কার করে বলেছে যে ব্যাপারটি ঐচ্ছিক।
রাজা চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠানের প্রধান বার্তা তার প্রথম প্রার্থনাতেই থাকছে যখন তিনি অ্যাবেতে পৌঁছে উচ্চারণ করবেন ‘আমি সেবা পেতে নয় বরং দিতে এসেছি।’
অনুষ্ঠানের সবচেয়ে বিশেষ মুহূর্ত হলো যখন রাজার মাথায় সেন্ট এডওয়ার্ডস মুকুট পরানো হবে, সেই মুহূর্তে অ্যাবের ঘণ্টা বাজবে এবং পাশে থাকা হর্স গার্ড প্যারেড থেকে গান স্যালুট দেয়া হবে।
রাজার সাথে সাথে মুকুট পরানো হবে রানি ক্যামিলাকেও, এই জুটির দীর্ঘ ও কিছুটা জটিল সম্পর্কের পর অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি এখন ‘কুইন ক্যামিলা’ হিসেবে সম্বোধন পাবেন।
অনুষ্ঠানটি যতোটা সম্ভব বৈচিত্র্যপূর্ণ করা হচ্ছে এবং আগের যেকোনো অভিষেক অনুষ্ঠানের তুলনায় এবার সবচেয়ে বেশি ধর্মীয় বিশ্বাসের উপস্থিতি থাকছে। ইহুদী, মুসলিম, বৌদ্ধ এবং শিখ প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
বাইবেল থেকে পাঠ করবেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, যার ধর্ম হিন্দু। সঙ্গীত পরিবেশন করা হবে ওয়েলস, স্কটিশ ও আইরিশ ভাষায়।
হাজার বছর ধরে চলা এই অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রথমবার কোনো নারী বিশপ অংশ নেবেন।
আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে ব্রিটিশ সময় আনুমানিক দুপুর ১টায়, এরপর রাজা চার্লস ও রানি ক্যামিলা স্বর্ণ খচিত ঘোড়ার গাড়ির করে বাকিংহাম প্যালেসে ফেরত যাবেন। প্রায় ১ মাইল পথ (১.৬ কিমি) পাড়ি দেয়ার সময় থাকবে ৪ হাজার সৈন্য এবং ১৯টি ব্যান্ডদল।
তারা যখন প্রাসাদে পৌঁছাবেন তখন ঐতিহ্য মেনে ব্যালকনিতে রাজা ও রানির সাথে আর কেকে থাকবেন সেটা এখনো জানা যায়নি। তবে তারা যখন ব্যালকনিতে দাঁড়াবেন সেসময় আকাশে বিমানের একটা বিশেষ প্রদর্শনী থাকবে।
কিন্তু মেঘ ও বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় আবহাওয়া নিয়ে শঙ্কা থাকছে।
সূত্র : বিবিসি