আজ: শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪ইং, ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৯ মে ২০২৩, মঙ্গলবার |

kidarkar

পুঁজিবাজার মন্দায় বাড়ছে শেয়ারশূন্য বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা

শাহ আলম নূর : দীর্ঘ মন্দাবস্থার মাঝে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের শেয়ারবাজারে কিছুটা চাঞ্চল্য ফিরেছে। শেয়ারদর বাড়ছে বেশ কিছু কোম্পানির। সংখ্যায় কম হলেও কিছু শেয়ার ফ্লোর প্রাইস ছেড়ে উঠে আসছে। এর প্রভাবও দেখা যাচ্ছে মূল্যসূচকে, নিম্নমুখী ধারা কাটিয়ে সূচকও কিছুদিন ধরে সামান্য ঊর্ধ্বমুখী। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। তবে এর এর উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যায়।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি প্রতিষ্ঠান সিডিবিএলের প্রকাশিত তথ্রে দেখা যায় গত ২৭ মার্চ থেকে ৩ মে পর্যন্ত পাঁচ সপ্তাহে শেয়ার রয়েছে এমন বিও অ্যাকাউন্ট কমেছে ৬ হাজার ১৬৯টি। অন্য এক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, সক্রিয় বিও অ্যাকাউন্টের মধ্যে পুরোপুরি শেয়ারশূন্য হয়েছে ৬ হাজার ২৫টি বিও অ্যাকাউন্ট।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ২৩ মার্চের পর শেয়ারশূন্য বিও অ্যাকাউন্ট ছিল ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৬৯৫টি। গত ৩ মে শেষে এ সংখ্যা বেড়ে ৩ লাখ ৮১ হাজার ৭২০টিতে উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি ২৩ মার্চের পর শেয়ার রয়েছে এমন বিও অ্যাকাউন্ট ছিল ১৪ লাখ ১৬ হাজার ১৭৯টি। ৩ মে’র পর তা ১৪ লাখ ১০ হাজার ১০টিতে নেমেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ঘটনা সার্বিক শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার বহিঃপ্রকাশ। কিছু বিনিয়োগকারী সুযোগ পেলেই বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার চেষ্টায় আছেন। তবে কিছু ব্রোকারেজ হাউস কর্মকর্তারা এ মতকে সমর্থন করলেও অন্য অনেকে এ ধারাকে ‘সিজনাল কেইস’ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁরা জানান, প্রতিবছর জুনের আগে আইপিও শিকারিদের বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়।
সিডিবিএল প্রকাশিত অপর এক তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত ২৩ মার্চের পর গত পাঁচ সপ্তাহে ঊর্ধ্বমুখী ধারার পরও বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ৬৪৫টি। অবশ্য ২৭ ও ২৯ মার্চ, ২, ৪, ৫, ১৭, ২৪, ২৫ এবং ২৬ এপ্রিল তারিখে মোট বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় কমেছে।
চলতি বছরের ৪ এপ্রিল শেষে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৫৩৭টি, যা আগের দিনের তুলনায় ১১১টি কম। পরদিন ৫ এপ্রিল আরও ১৫৬টি বিও অ্যাকাউন্ট কমেছে। যদি ধরেও নেওয়া হয়, ওই দুই দিনে নতুন বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়নি, তাহলেও এ সময়ে ২৬৭টি বিও অ্যাকাউন্ট থেকে সব শেয়ার বিক্রি করে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একই চিত্র দেখা গেছে ২৪ থেকে ২৬ এপ্রিল। ওই তিন দিনে নিট ২২৯টি বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়েছিল।
শেয়ারবাজারে যখন শেয়ারদর ও লেনদেন বাড়ছে, তখন বিও অ্যাকাউন্ট শূন্য হওয়ার কারণ কী হতে পারে– এমন প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের শিক্ষক মো. আল আমীন বলেন, সার্বিক অনিশ্চিত পরিস্থিতির কারণে মানুষ বিনিয়োগ থেকে বিমুখ হতে পারেন। তাছাড়া যে বাজারে ভালো শেয়ার কেনাবেচা হয় না, ফ্লোর প্রাইসে পড়ে থাকে এবং উল্টো দিকে মন্দ শেয়ারের দাম বাড়ে, সে বাজার থেকে সুযোগ পেলে কিছু মানুষ বিনিয়োগ তুলে নেবেন এটাই স্বাভাবিক।
মিডল্যান্ড সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিকুর রহমান বলেন, প্রতিবছর জুনে ৫০০ টাকা বার্ষিক ফি দিয়ে বিও অ্যাকাউন্ট সচল রাখতে হয়। কেবল আইপিও শেয়ার কিনতে চান এমন বিও অ্যাকাউন্টধারীরা যখন দেখেন নিকট ভবিষ্যতে আইপিও নেই, তখন খরচ বাঁচাতে বিও বন্ধ করে দেন। বন্ধ করার আগে খুচরা বা আগের আইপিওতে পাওয়া শেয়ার বিক্রি করেন। ফলে এ সময়ে বিও অ্যাকাউন্ট কমা বা শেয়ারশূন্য হওয়া বড় কোনো ইস্যু নয়। ফলে এর সঙ্গে বাজার নিয়ে আস্থাহীনতার সংকট আছে বলেও মনে হয় না। তার পরও আস্থা হারিয়ে কেউ শেয়ারবাজার ছাড়তে পারেন, তবে সে সংখ্যা খুব বেশি হবে না।
বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তারা অবশ্য মনে করেন, আইপিও এবং জুনে বার্ষিক ফি ছাড়াও নানা অনিয়মের কারণে আস্থাহীনতাকে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তারও ভূমিকা থাকতে পারে। যেমন– শুধু ডলারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি এবং সংকটে অনেক কোম্পানি স্বাভাবিক কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করতে পারেনি। এতে ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যার প্রভাবে কোম্পানিগুলোর মুনাফা কমতে গেছে। এখনও দুই-তৃতীয়াংশ শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে পড়ে আছে। এ অবস্থায় সুযোগ বুঝে কিছু বিনিয়োগকারী যদি শেয়ার বিক্রি করে ‘সাইড লাইনে’ চলে যান, তা অবাক হওয়ার মতো কিছু হবে না।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.