আজ: রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৬ মে ২০২৩, মঙ্গলবার |

kidarkar

মুনাফায় বেশি ইসলামী ব্যাংক, লভ্যাংশ বিতরণের শীর্ষে উত্তরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : মুনাফায় বেশি ইসলামী ব্যাংক তবে লভ্যাংশ বিতরণের শীর্ষে উত্তরা ব্যাংক। দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৫টি ব্যাংকের মধ্যে ২০২২ সালের লভ্যাংশ বিতরণে শীর্ষে ছিল উত্তরা ব্যাংক। আর শেয়ারপ্রতি আয়ের (ইপিএস) দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে ডাচ্–বাংলা ব্যাংক। এ দুটি ব্যাংক ২০২১ সালেও লভ্যাংশ বিতরণ ও আয়ের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল। তবে ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের ইপিএস আগের বছরের তুলনায় গত বছর কমেছে।

সম্প্রতি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো তাদের ২০২২ সালের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য প্রকাশ ও বছর শেষের লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। তা পর্যালোচনা করে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় লভ্যাংশ বিতরণে উত্তরা ব্যাংকের ও মুনাফা অর্জনে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এগিয়ে থাকার চিত্র পাওয়া গেছে।

ব্যাংকগুলো তাদের আর্থিক বছর শেষ হওয়ার পর লভ্যাংশ ও ইপিএসের তথ্য প্রকাশ করে থাকে। ব্যাংকের সারা বছরের সব ধরনের খরচ ও কর বাদ দেওয়ার পর যে মুনাফা হয়, সেটাই হচ্ছে ইপিএস। বছরের মোট মুনাফাকে ব্যাংকের শেয়ার সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস হিসাব করা হয়। অর্থাৎ ইপিএস হচ্ছে বছর শেষে ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের জন্য নগদ ও বোনাস মিলিয়ে ২৮ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে উত্তরা ব্যাংক। ২০২১ সালেও ব্যাংকটি বিনিয়োগকারীদের সমপরিমাণ লভ্যাংশ দিয়েছিল। আর ২০২০ সালে ব্যাংকটি নগদ ও বোনাস মিলিয়ে ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকটি ২০১৫ সাল থেকে গত সাত বছরে বিনিয়োগকারীদের ২০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেয়নি।

লভ্যাংশ ঘোষণার দিক থেকে গত বছর দ্বিতীয় স্থান যমুনা ব্যাংকের। যৌথভাবে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ডাচ্–বাংলা ও ইস্টার্ণ ব্যাংক। ট্রাস্ট ও প্রিমিয়ার ব্যাংক যৌথভাবে চতুর্থ হয়েছে। পঞ্চম অবস্থান প্রাইম ব্যাংকের। এর মধ্যে যমুনা ব্যাংক নগদ ও বোনাস মিলিয়ে ২৬ শতাংশ, ডাচ্–বাংলা ও ইস্টার্ণ ব্যাংক ২৫ শতাংশ করে, ট্রাস্ট ও প্রিমিয়ার ব্যাংক ২০ শতাংশ করে এবং প্রাইম ব্যাংক সাড়ে ১৭ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এ সাত ব্যাংকের মধ্যে শুধু যমুনা ব্যাংকের লভ্যাংশ আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে। ডাচ্–বাংলা, ট্রাস্ট ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের লভ্যাংশ কমেছে। উত্তরা, ইস্টার্ণ ও প্রাইম ব্যাংকের লভ্যাংশ বাড়েওনি, আবার কমেওনি।

দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৫টি ব্যাংকের মধ্যে গত বছর ১৮টির লভ্যাংশ আগের বছরের তুলনায় অপরিবর্তিত ছিল। লভ্যাংশের পরিমাণ কমেছে ১৩টি ব্যাংকের, বেড়েছে ১টির। আর দুটি ব্যাংক কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। এ ছাড়া একটি ব্যাংক গত বছর তালিকাভুক্ত হয়ে প্রথমবারের মতো লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। বেশির ভাগের লভ্যাংশ অপরিবর্তিত থাকলেও শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। বর্তমানে শেয়ারবাজারে সবচেয়ে কম মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিওর শেয়ার হচ্ছে ব্যাংক খাত। এ খাতের সামগ্রিক পিই রেশিও ১২ শতাংশের কাছাকাছি।

কেন ব্যাংক খাতের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কম, তা জানতে চাইলে পেশাদার বিনিয়োগ বিশ্লেষকদের বৈশ্বিক সংগঠন সিএফএ বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বর্তমানে বেশির ভাগ ব্যাংকের শেয়ারই সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। এ কারণে এসব শেয়ারে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। এ ছাড়া ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি বরাবরই বিনিয়োগকারীদের আস্থার ঘাটতি রয়েছে। কারণ, কিছু ব্যাংকের আর্থিক বিবরণীর ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা কম।

২০২২ সালের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর মধ্যে টাকার অঙ্কে সর্বোচ্চ মুনাফা করেছে ইসলামী ব্যাংক। শীর্ষ পাঁচে পরের চারটি অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ব্র্যাক, ডাচ্–বাংলা, পূবালী ও ইস্টার্ণ ব্যাংক।

জানতে চাইলে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘গত বছর ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফায় বৃদ্ধিতে বড় চালিকাশক্তি ছিল স্থিতিপত্র বা ব্যালান্সশিটের বড় প্রবৃদ্ধি। ওই বছরে পুরো ব্যাংক খাতে যেখানে গড় ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ শতাংশ, সেখানে ব্র্যাক ব্যাংকের ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৮ শতাংশ। একইভাবে ব্যাংক খাতে গড় আমানত প্রবৃদ্ধি যেখানে ছিল ৭ শতাংশ, সেখানে আমাদের আমানতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৪ শতাংশ। ঋণের গুণগত মান বৃদ্ধির ফলে মোট কুঋণ খরচ কমেছে। তাই ব্যাংকিং খাতের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা ভালো করেছি। এর বাইরে গত বছর মুনাফায় ফিরেছে আমাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশ। সেটিও সার্বিকভাবে মুনাফা বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে।’

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.