চলতি হিসাব বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তেকে
মুনাফা কমেছে তালিকাভুক্ত সিরামিক কোম্পানিগুলোর
নিজস্ব প্রতিবেদক : অর্থনেতিক মন্দায় প্রভাব পড়েছে তালিকাভুক্ত সিরামিক কোম্পানিগুলোর উপর। চলতি হিসাব বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিক বব্যবসিয়কভাবে ভালো যায়নি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিরামিক খাতের কোম্পানিগুলোর।
এ সময় খাতসংশ্লিষ্ট অধিকাংশ কোম্পানির বিক্রি বাবদ আয় সামান্য বাড়লেও বিভিন্ন ধরনের ব্যয় বৃদ্ধির চাপে নিট মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। মূলত কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়া, গ্যাসস্বল্পতা ও ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নসহ বিভিন্ন কারণে আলোচ্য সময়ে তাদের ব্যবসা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়েছে। ফলে এ সময় কোম্পানিগুলোর কর-পরবর্তী নিট মুনাফা আগের হিসাব বছরের একই সময়ের তুলনায় কমতে দেখা গেছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিরামিক খাতের কোম্পানির সংখ্যা পাঁচটি। কোম্পানিগুলো হলো মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, শাইনপুকুর সিরামিকস লিমিটেড, আরএকে সিরামিকস (বাংলাদেশ) লিমিটেড, ফু-ওয়াং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এর মধ্যে তালিকাভুক্ত একমাত্র বহুজাতিক কোম্পানি আরএকে সিরামিকসের হিসাব বছর গণনা করা হয় জানুয়ারি-ডিসেম্বর সময়ে। কোম্পানিটি সর্বশেষ প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আর বাকি কোম্পানিগুলোর হিসাব বছর গণনা হয় জুলাই-জুন সময়ে। এর মধ্যে মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও শাইনপুকুর সিরামিকস তৃতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও ফু-ওয়াং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ এখনো প্রকাশ করেনি।
চলতি ২০২২-২৩ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে মুন্নু সিরামিকের বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে ১৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে এ আয় হয়েছিল ২৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির আয় কমেছে ২৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৬৫ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ১ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে ৫৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আর চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) কোম্পানিটির বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে ৫৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যেখানে এ আয় ছিল ৬৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির আয় কমেছে ১৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১ কোটি ২১ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে এর নিট মুনাফা কমেছে ৬৯ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।
চলতি বছরের সর্বশেষ তৃতীয় ও প্রথম তিন প্রান্তিকে তালিকাভুক্ত সিরামিক খাতে কেবল এই একটি কোম্পানিরই বিক্রি বাবদ আয় কমার পাশাপাশি নিট মুনাফাও কমেছে। এর কারণ হিসাবে মুন্নু সিরামিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সামষ্টিক অর্থনীতির দুর্বল অবস্থার কারণে আলোচ্য সময়ে সিরামিক পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। এজন্য কোম্পানিটির বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আর এ কারণে এর কর-পরবর্তী নিট মুনাফা তথা ইপিএসও কমে গেছে।
চলতি ২০২২-২৩ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে সিরামিক খাতের তালিকাভুক্ত আরেক স্থানীয় কোম্পানি শাইনপুকুর সিরামিকসের বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে ৫৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এর আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৮৮ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে ৬৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ। আর চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির বিক্রি বাবদ আয় হয়েছে ১৫২ কোটি ১০ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ১২৬ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট আয় বেড়েছে ২০ দশমিক ৭১ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা বেড়েছে ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ।
তালিকাভুক্ত সিরামিক খাতের একমাত্র বহুজাতিক কোম্পানি আরএকে সিরামিকস বাংলাদেশের চলতি ২০২৩ হিসাব বছরে প্রথম প্রান্তিকে বিক্রি হয়েছে ২০০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ২০০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে দশমিক ১৪ শতাংশ। প্রথম প্রান্তিকে এর কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা ছিল ২৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এ সময়ের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমেছে ৩৫ দশমিক ৬২ শতাংশ।
মুনাফা কমার কারণ হিসাবে আরএকে সিরামিকসের কর্মকর্তারা বলছেন, কোম্পানির ব্যবসায়িক কৌশলের কারণে আলোচ্য প্রান্তিকে বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত গ্যাসের অপ্রাপ্যতা, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অস্থিরতা ও বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটার কারণে কাঁচামাল ও জাহাজীকরণের ব্যয় বেড়েছে। এসব কারণে আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির মুনাফা মার্জিন কমে গেছে বলে জানিয়েছেন তারা।