জাপান-বাংলাদেশ অংশীদারিত্ব ত্বরান্বিত স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, জেবিসিসিআই, জেসিআইএডি এবং জেট্রো
নিজস্ব প্রতিবেদক: জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (জেবিসিসিআই্), জাপানিজ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এসোসিয়েশন ইন ঢাকা (জেসিআই্এডি, শো-কো-কাই) এবং জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো)-এর সহযোগিতায় সম্প্রতি “আওয়ার শেয়ারড এস্পিরেশনস: এক্সেলারেটিং দ্য জাপান-বাংলাদেশ স্ট্যাটেজিক পার্টনারশিপ” শীর্ষক একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড।
সভায় বেসরকারি খাত ও চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র স্টেকহোল্ডারবৃন্দ, উপদেষ্টাবৃন্দ এবং সরকারের প্রতিনিধিবৃন্দ একত্রিত হয়ে জাপান-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে একটি রোডম্যাপ গঠনে গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেন।
বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার কৌশলগত অংশীদারিত্ব গঠনের মাধ্যমে দুই দেশের সুদীর্ঘ বন্ধুত্ব আর দৃঢ় হচ্ছে এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও জ্বালানি বৃদ্ধিতে ইতবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সভায় অবকাঠামো, বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং টেকসই অর্থায়নের অগ্রগতি ও উন্নয়ন সহজতর করতে সকল বোর্ড সদস্যদের সহযোগিতার আহবান জানানো হয়। বাংলাদেশে বৈদেশিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগে আকর্ষণ করতে দেশের অন্যতম বৃহৎ বিদেশী বিনিয়োগকারী হিসেবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বিভিন্ন সুযোগ- সুবিধা প্রদান করে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ-এর সিইও নাসের এজাজ বিজয় বলেন, “সময়ের সাথে সাথে দুই দেশের জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা থেকে জাপান-বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব অনেক দূর প্রসারিত হয়েছে, যা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির এই যাত্রাকে আরও বিস্তৃত করেছে। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জাপানের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিশিদা ফুমিও-এর দিকনির্দেশনায় একটি বিস্তর ও কৌশলগত অংশীদারিত্বের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য তিনটি উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র হল; ডিজিটাল অর্থনীতি, কৃষি বাণিজ্য এবং টেকসই অর্থব্যবস্থা, যার সবকটিতে জাপান উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখতে পারে। আজকের এই সভায় জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ককে ত্বরান্বিত করে আমাদের অর্থনৈতিতে আরও পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে আমি আশাবাদী।”
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড জাপান-এর সিইও ইউসুকে আসাই বলেন, “বাংলাদেশের সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক শুরু হয় ১৯৭৭ সালে যখন আমি ছাত্র ছিলাম। ইংরেজিতে আমার প্রথম কথোপকথন ছিল বাংলাদেশের একজন দর্শনার্থীর সঙ্গে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড জাপানের সিইও হিসেবে আমি বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে আগ্রহী। দুই দেশের মধ্যকার সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনা সুদৃঢ় করে সকল বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এই কৌশলগত অংশীদারিত্ব বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ত্বরান্বিত করতে জাপানি কোম্পানিগুলো অবকাঠামোগত এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ সহায়তা অব্যাহত রাখবে।”
বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের অ্যাম্বাসেডর ইওামা কিমিনরি বলেন, “গত বছর, আমরা জাপান-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করেছি। উন্নতির এই ধারা আমাদের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ঐতিহ্যগত ক্ষেত্রগুলোর বাইরেও নতুন নতুন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সুদৃষ্টি দিয়েছেন। উভয় দেশের সরকার প্রধানরা আন্তঃ-সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য তিনটি প্রধান ক্ষেত্রে তাদের দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেছেন – স্থানীয় ও বৈদেশিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য সহযোগিতা বৃদ্ধি; পারস্পরিক সুবিধা ও আঞ্চলিক সমৃদ্ধির জন্য অর্থনৈতিক সহযোগিতা সুদৃঢ় করা; এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতার সম্প্রসারণ ও জাতিগত বিনিময় ব্যবস্থা চালু করা।”
জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (জেবিসিসিআই)-এর সভাপতি; জাপানিজ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এসোসিয়েশন ইন ঢাকা (জেসিআই্এডি, শো-কো-কাই)-এর সভাপতি; এবং মিতসুবিশি কর্পোরেশন বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ মিউং-হো লি বলেন, “২০২৬ সালের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের আগেই জাপান-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) কার্যকর হওয়া উচিৎ, যার জন্য দ্রæতই ইপিএ আলোচনা শুরু করা প্রয়োজন। শুধুমাত্র বাণিজ্য নয়, উভয় দেশের মধ্যে বিনিয়োগ বাড়াতেও ইপিএ যথেষ্ট সাহায্য করবে। জাপান বাংলাদেশে যত বেশি বিনিয়োগ করবে, স্থানীয় কর্মসংস্থান ও বাণিজ্যিক কর্মকাÐ তত বৃদ্ধি পাবে বলে আমি মনে করি। আর বাণিজ্যিক কার্যক্রম বৃদ্ধি পেলে কর্পোরেট ট্যাক্স, আয়কর, ভ্যাট ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে, যা ইপিএ-এর ফলে আমদানি শুল্ক সংগ্রহের ঘাটতি পূরণে সক্ষম হবে।”
জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো) বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ইউজি আন্ডো বলেন, “বিনিয়োগের ক্ষেত্র বৃদ্ধি করতে জেট্রো কর্তৃক বাংলাদেশসহ এশিয়া ও আসিয়ান দেশগুলোর জাপানি কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি সমীক্ষা চালানো হয়। সমীক্ষায় দেখা যায়, উন্নতির জন্য সর্বদাই সুযোগ থাকে, উদাহরণস্বরূপ; বৈশ্বিক সম্মেলনের ক্ষেত্রে লেটার অব ক্রেডিট-এর প্রক্রিয়া আরও সহজ করা যেতে পারে। বিনিয়োগের ক্ষেত্র উন্নত এখানে পরিবর্তন আনা গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের মতো ব্যাংকগুলো তাদের শক্তিশালী স্থানীয় উপস্থিতি ও বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমি মনে করি।”
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ড. এম. মাসরুর রিয়াজ বলেন, “গত আট বছরে জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন এসেছে, যেখানে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহায়তা প্রদান মূল ভূমিকা রেখেছে। কৌশলগত অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ-বি) উদ্যোগ, আঞ্চলিক সংযোগের সম্ভাবনা, এবং এশিয়া এনার্জি ট্রানজিশন উদ্যোগ দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দৃঢ় করতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাপানের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির অংশীদার হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।”
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং হেড অব কর্পোরেট, কমার্শিয়াল অ্যান্ড ইন্সটিটিউশনাল ব্যাংকিং (সিসিআইবি) ক্লায়েন্ট কভারেজ এনামুল হক বলেন “বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার সুসম্পর্ক উদযাপন এবং বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক গন্তব্যস্থল হিসেবে বাংলাদেশের সম্ভাবনা তুলে ধরতে আজ আমরা একত্রিত হয়েছি। জাপান-বাংলাদেশ কৌশলগত অংশীদারিত্বকে ত্বরান্বিত করতে এবং বৃহত্তর সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত।”
দীর্ঘ ১১৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকই দেশের একমাত্র বহুজাতিক ব্যাংক। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক জাতির কল্যাণে, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণে, এবং পরিবেশ রক্ষার মাধ্যমে দেশের বাণিজ্য ও উন্নয়ন যাত্রার দীর্ঘস্থায়ী গর্বিত অংশীদার। টেকসই ও সমতার আদর্শকে কেন্দ্রে রেখে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য ব্যাংকটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।