আজ: রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৮ জুন ২০২৩, বৃহস্পতিবার |

kidarkar

ব্যাংক কোম্পানি সংশোধন আইন সংসদে উঠছে আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর অধিকতর সংশোধনকল্পে আনীত বিল আজ সংসদে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৮ জুন) অর্থ মন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল এটি উত্থাপন করবেন। পরে অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতেই বিলটি পাঠানো হবে। জাতীয় সংসদ সচিবালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এরআগে, মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অনুমোদন পায় আইনটি। নতুন এই সংশোধিত আইনে সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। দুর্বল ব্যাংকের অবসায়ন বা অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার বিষয়টি আইনে থাকছে। নতুন ব্যাংক কোম্পানি আইনের খসড়ায় ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা’র সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যিনি নিজের বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে, নামে-বেনামে বা অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তা পরিশোধ করবেন না, তাকেই বলা হবে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদে পারিবারিক কর্তৃত্ব কমানো হয়েছে। কোনও ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একটি পরিবারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ তিন জন পরিচালক হতে পারবেন। বিদ্যমান আইনে সর্বোচ্চ চার জন পরিচালক নিযুক্ত হতে পারছেন। আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী কার্যকর হলে পরিচালনা পর্ষদে পরিবারের কর্তৃত্ব হ্রাস পাবে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ খেলাপি হলে তিনি ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না। ঋণের অর্থ পরিশোধ করলেও তিনি পরবর্তী পাঁচ বছর আর পরিচালক হতে পারবেন না।

অনুমোদন পাওয়া আইনে ঋণ খেলাপিরা দেশের বাইরে যেতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন লাগবে। ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি হলে ৫০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা জরিমানা। জরিমানা দিতে ব্যর্থ হলে প্রতিদিন এক লাখ করে জরিমানা দিতে হবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন-২০২৩ এ অধিকার ছাড়া কোনও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ‘ব্যাংক’ শব্দ ব্যবহারের অপরাধে সর্বোচ্চ ৭ বছর বা ৫০ লাখ টাকা দণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা রাষ্ট্রীয় কোনও সম্মাননা ও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না এমন বিধানও অন্তর্ভুক্ত আছে। সব ধরনের প্রক্রিয়া শেষে আইনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুমোদনের পর তা এ বছরই সংসদে উপস্থাপিত হবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সংশোধনীর খসড়া আইনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য (ভেটিং) আইন মন্ত্রণালয়ে যাবে। আইনে বলা হয়েছে, ব্যাংক খাতে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি বিষয়ে নতুন ধারা যোগ হচ্ছে আইনে। ব্যাংক খাতে এত দিন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি বলতে আলাদা করে কাউকে চিহ্নিত করা হতো না। তাই এর ফলে ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা রাষ্ট্রীয় কোনও সম্মাননা বা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে দাওয়াত পাবেন না। তারা কোনও পেশাজীবী, ব্যবসায়িক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক সংগঠনের কোনও পদেও থাকতে পারবেন না।

সূত্রমতে, সংশোধিত আইনের খসড়ায় বলা হয়, কোনও ব্যাংকের পর্ষদে পরিচালক হিসাবে অন্য কোনও ব্যাংকের পরিচালক নিযুক্ত হতে পারবেন না। তবে এটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এছাড়া ব্যাংকের পরিচালক হওয়া ব্যক্তির স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনও প্রতিষ্ঠানের অপর ব্যক্তি একই ব্যাংকে পরিচালক হতে পারবে না। পরিচালনা পর্ষদে কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের একাধিক ব্যক্তিকে পরিচালক হিসাবে নিযুক্ত করা যাবে না।

সূত্রগুলো জানায়, গত ৩১ বছরে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন হয়েছে সাতবার। এর মধ্যে এক পরিবার থেকে চারজন এবং টানা ৯ বছর ব্যাংকের পরিচালক থাকার সুযোগ দিয়ে করা হয়েছিল সর্বশেষ সংশোধন। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠককালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছে। জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া শর্ত অনুযায়ী সরকার ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন ২০২৩ নতুন করে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি শনাক্তকরণ প্রসঙ্গে খসড়া আইনে বলা হয়েছে, প্রতিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশক্রমে একটি কমিটি গঠন করবে। ওই কমিটি ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ শনাক্ত এবং চূড়ান্ত করবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ গ্রহীতার তালিকা প্রতিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাবে। এ তালিকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশ করতে পারবে। আর চূড়ান্তভাবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর অভিযুক্ত ব্যক্তি ৩০ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আপিল করতে পারবেন। তবে এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। সেখানে আরও বলা হয়, ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা হিসাবে শনাক্ত হলে তার ওপর গাড়ি-বাড়ি, জমি রেজিস্ট্রেশন এবং বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এছাড়া যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মগুলো অধিদফতর থেকে কোম্পানির নিবন্ধন এবং ট্রেড লাইসেন্স নিতে পারবে না।

এছাড়া সামাজিক, পেশাজীবী, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক সংগঠনের কোনও পদে থাকতে পারবেন না। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর সর্বোচ্চ ৫ বছরের মধ্যে কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না।

ব্যাংক কোম্পানি আইনের নতুন খসড়ায় বলা হয়েছে, যদি কোনও ব্যাংক মনে করে যে তার বিদ্যমান আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে বা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে, তাহলে সেটির কর্তৃপক্ষ তা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাবে। আর্থিক অবস্থা খারাপ বলতে তারল্য, সম্পদের গুণগত মান ও মূলধন পরিস্থিতি খারাপ হওয়া এবং সুশাসন বজায় রেখে পরিচালনা সম্ভব না হওয়াকে বোঝানো হয়েছে।

দেশের কোনও ব্যাংকের অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে গেলেও সরকার এত দিন সেটিকে সহায়তা দিয়ে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছিল। সে অবস্থা আর থাকছে না। এবারে দুর্বল ব্যাংক সবল কোনও ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে, অথবা দুর্বল ব্যাংকের অবসায়ন হবে। এমন ধারাই যুক্ত হচ্ছে ব্যাংক কোম্পানি নতুন আইনে।

আইনের খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, কোনও ব্যাংকের পরিচালক ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলে ওই ব্যাংকের পরিচালক পদ হারাবেন। কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ বা অগ্রিম নিয়ে ঋণের কিস্তি ও সুদ পরিশোধে ব্যর্থ হলেও পরিচালকের পদ থাকবে না।

এছাড়া প্রতিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা পর্ষদের বাইরের সদস্যদের সমন্বয়ে একটি অডিট কমিটি এবং ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সমন্বয়ে একটি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করবে। আর ব্যাংকের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার স্বার্থে পরিচালনা পর্ষদ এবং পর্ষদ কমিটিগুলোর কর্মপরিধি বিষয়ে সময় সময় নির্দেশনা জারি করতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। খসড়া আইনে দুর্বল ব্যাংক মার্জার করার বিধান রাখা হয়েছে।

নতুন আইন পাস হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণখেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণ, গাড়ি-বাড়ি নিবন্ধন ও ট্রেড লাইসেন্স এবং যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের পরিদফতরে (আরজেএসসি) নিবন্ধনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের শর্ত দেবে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তালিকা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পাঁচ বছর পার না হওয়া পর্যন্ত কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালকও হতে পারবেন না।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.