আজ: বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

০৩ জুলাই ২০২৩, সোমবার |

kidarkar

নিয়ন্ত্রণে এলো ফ্রান্সের দাঙ্গা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : টানা ৫ দিন ব্যাপক দাঙ্গার পর অবশেষে শান্ত হয়েছে ফ্রান্সে। রোববার রাতে দেশটির পৌরসভা ও সিটি/টাউন কর্পোরেশনের মেয়রা জনগণকে দাঙ্গাবিরোধী মিছিলের আহ্বান জানানোর পরপরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসা শুরু করে।

সোমবার এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, পুলিশের ওপর হামলা, নাশকতা, লুটপাট এবং সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধনে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে রোববার রাতেও ১৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আগের দিন শনিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ৭০০ জনকে।

এদিকে একই দিন প্যারিসের একটি সড়কে দাঙ্গাকারীদের অগ্নিসংযোগের জেরে জ্বলতে থাকা একসারি গাড়ির আগুন নেভাতে গিয়ে এক ফায়ারসার্ভিস কর্মী পুড়ে মারা যান। তারপর কিছুক্ষণের মধ্যেই যৌথ বিবৃতিতের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে দাঙ্গাবিরোধী মিছিলে নামার আহ্বান জানান মেয়ররা।

বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘ফ্রান্সজুড়ে বসবাসকারী শান্তিকামী জনগণ নিশ্চয়ই গত ৫ দিন ধরে কী ভয়াবহ সহিংসতা হচ্ছে দেশজুড়ে। দাঙ্গাকারীরা চুড়ান্ত সহিংসতাপূর্ণ মনোভাব নিয়ে প্রজাতন্তের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক নির্মমভাবে ধ্বংসের নেশায় মেতে উঠেছে।’

‘আমরা স্বীকার করছি, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা এখনও সমাজ থেকে বৈষম্য নির্মূল করতে পারিনি। কিন্তু এটাও সত্য— দাঙ্গাকারীদের হাতে আমরা দেশকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না।’

গত ২৭ জুন ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের উপশহর নানতেরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ১৭ বছর বয়সী তরুণ নাহেল এম.। জানা গেছে—সড়কের নির্ধারিত গতিসীমা লঙ্ঘণ করে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিল সে, এ সময় পুলিশ তাকে থামার নির্দেশ দিলেও তাতে সে কর্ণপাত করেনি। তারপর ট্রাফিক চৌকির এক পুলিশ সদস্যের গুলিতে নিহত হয় নাহেল।

প্যারিসের নানতের উপশহরটি মূলত আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া এবং মরক্কো থেকে আগত লোকজন অধ্যুষিত। নাহেল এম. এবং তার মা মৌনিয়াও আলজেরীয় বংশোদ্ভূত এবং মুসলিম। এই অভিবাসীদের বরাবরের অভিযোগ— দু’তিন প্রজন্ম ধরে ফ্রান্সে বসবাস করলেও তারা বৈষমের শিকার।

পুলিশের গুলিতে নাহেল নিহত হওয়ার পর সেদিন থেকেই বিক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছিল নানতেরে। তারপর বিকেলের দিকে এক ভিডিওবার্তায় নাহেলের মা মৌনিয়া তার ছেলেকে হত্যাকারী পুলিশ সদস্যের বিচার দাবি করেন। ফ্রান্সের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায় এবং রাজধানী প্যারিসসহ শহরে শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে ফ্রান্সজুড়ে ৪৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন করে সরকার; কিন্তু তা তেমন কাজে আসেনি, বরং এক পর্যায়ে সেই বিক্ষোভ রূপ নেয় দাঙ্গায়। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ দিনে দাঙ্গাকারীরা অন্তত ১০টি শপিং মল, ২০০ সুপারমার্কেট, ২৫০টি তামাকজাত পণ্যের দোকান, ২৫০টি ব্যাংক এবং শত শত সরকারি ভবনে হামলা-ভাঙচুর ও লুটাপাট চালিয়েছে।

এর মধ্যে শনিবার রাত দেড়টার দিকে রাজধানী প্যারিসের আরেক উপশহর লিলেস রোজেসের মেয়র ভিনসেন্ট জিনব্রানের বাসভবনে হামলা চালায় একদল দাঙ্গাকারী। তারা গেট ভেঙে মেয়রের বাড়িতে ঢুকে প্রথমে তার তার গাড়ি ভাঙচুর করে, তারপর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।

মেয়র এ সময় এক জরুরি বৈঠকে টাউন হলে ছিলেন এবং বাড়িতে ৫ এবং ৭ বছর বয়সী দুই সন্তানসহ ঘুমিয়েছিলেন তার স্ত্রী। দাঙ্গাকারীদের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্তানদের নিয়ে বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে তিনি পালিয়ে যান। এ সময় তিনি এবং তাদের এক সন্তান আহত হন।

রোববারের বিবৃতিতে ঘটনাটির উল্লেখ করে মেয়ররা বলেন, ‘ফ্রান্স আজ বিপন্ন। দেশের শান্তিকামী জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা দাঙ্গাবিরোধী শান্তিকামী মিছিল বের করুন।’

উল্লেখ্য, একই দিন দাঙ্গা বন্ধের আহ্বান জানান নাহেলের দাদিও। ফরাসি সংবাদমাধ্যমগুলোতে নাদিয়া নামে চিহ্নিত ওই নারী রোববার বিএফএম টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাঙ্গাকারীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘থামো, দাঙ্গা করো না। জানালা ভেঙো না। স্কুলে ও বাসে হামলা চালিও না। বাসের যাত্রীদের মধ্যে অনেক মায়েরা রয়েছেন। বাইরে যাঁরা হাঁটছেন, তাঁদের মধ্যে অনেক মা আছেন।’

সূত্র : বিবিসি

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.