আজ: রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

২৩ জুলাই ২০২৩, রবিবার |

kidarkar

মাস্টার ফিড: এমডি সহ কোম্পানির কর্মকর্তাদের শেয়ার আত্মসাতের পায়তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক: মাস্টার ফিড এগ্রোটেক লিমিটেডের সাবেক পরিচালক রফিকুল আলমের নামের শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ রয়েছে, এক নারীকে মৃত রফিকুলের স্ত্রী বানিয়ে তার নামে থাকা কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করা হচ্ছে। অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছেন বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কবির হোসেনসহ কোম্পানিটির কিছু কর্মকর্তা।

গত বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের কাছে আসা এক অভিযোগপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। লিখিত এ অভিযোগপত্রটি জমা দিয়েছেন ফার্স্ট ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা(সিইও) কাউসার আল মামুন।

অভিযোগপত্রে কাউসার আল মামুন জানিয়েছেন, চক্রটি রফিকুল আলমের নামে বরাদ্দকৃত ৭০ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার (যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৯ কোটি টাকা) আত্মসাৎ করেছে। সাড়ে ৭০ লাখ শেয়ারের মধ্যে ২৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক তার স্ত্রীর। আর বাকি ৭৫ শতাংশের মালিক তারা রফিকুল আলমের বাবা।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, চক্রটি উম্মে হাবিবা নামের এক নারীকে রফিকুল আলমের স্ত্রী বানিয়ে তার মোট শেয়ারের ২৫ শতাংশ হাতিয়ে নিয়েছেন। সেসব শেয়ার থেকে ১৫ লাখের বেশি শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে ১ কোটিও বেশি টাকা তুলে নিয়েছেন তারা। এছাড়া আরেক জনকে বাবা বানিয়ে তার কাছে রফিকুল আলমের ৭০ শতাংশ শেয়ার ইতোমধ্যে হস্তান্তর করেছে। এই চক্রের পেছনে রয়েছে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কবির হোসেন এবং কোম্পানি সচিবসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।

কাউসার আল মামুনের অভিযোগটি আমলে নিয়েছে বিএসইসি। ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে ডিএসইর পক্ষ থেকে একটি পরিদর্শন টিম গঠন করতে নির্দেশনা দিয়েছে বিএসইসি।

বিষয়টি   বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি বলেন, আমার কাছে একটি অভিযোগ এসেছে। কমিশন থেকে ডিএসইকে পরিদর্শন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে মার্কেট অপারেশন বিভাগের প্রধান আব্দুল জলিল  বলেন, বিএসইসি থেকে এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি এখনো পাইনি। তবে কমিশন পাঠালে পেয়ে যাব।

বিএসইসিকে পাঠানো কাউসার আল মামুনের অভিযোগপত্রে যা ছিল-

উম্মে হাবিবা ইয়াসমিন আমার অফিসে বেনিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টধারী বিনিয়োগকারী। চলতি বছরের ৫ মার্চ মাস্টার ফিড এগ্রোটেকের বিও থেকে উম্মে হাবিবা ইয়াসমিনের বিও অ্যাকাউন্টে ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৫০০টি শেয়ার জমা হয়। এর প্রায় এক মাস পর ৪ মে থেকে ২৩ মে- এ সময়ের মধ্যে ১৫ লাখ ৩৫ হাজার ৭০৮টি শেয়ার বিক্রি করে। অর্থাৎ শেয়ার বিক্রি করে তিন দফায় ১ কোটি ১৮ লাখ তুলে নেন। বাকি শেয়ার বর্তমানে বিও হিসাবে সংরক্ষিত আছে। পরপর বড় বড় অ্যামাউন্টের টাকা উত্তোলন করায় বিষয়টি আমার নজরে আসায় CAMLCO হিসাবে আমি বিও অ্যাকাউন্টের সকল তথ্য যাচাই করতে শুরু করি।

দেখা যায়, উম্মে হাবিবার বিও অ্যাকাউন্টে তার স্বামীর নাম মোকাদ্দেস হোসাইন। এখন তিনি তার স্বামী দাবি করছেন রফিকুল আলমকে। কোম্পানির ঠিকানা অনুসারে রফিকুল আলমের বাসা উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরে। কিন্তু ওই বাড়িওয়ালা জানিয়েছেন- রফিকুল আলম নামে কেউ এখানে থাকে না, কখনো ছিল না। আর উম্মে হাবিবার বাসার ঠিকানা ১৭৯, কাওলা মসজিদ রোড, রোড নং-৩, খিলক্ষেত, দক্ষিণ খান।

বিও অ্যাকাউন্টের দেওয়া মোবাইল নম্বরটিতে ফোন করলে আমার সন্দেহ আরও বাড়তে শুরু করে। এই ফোনটিও হাবিবা ইয়াসমিনের না। তার বোন ইভা আকতারের। আর আশ্চর্য হই যখন উম্মে হাবিবার বিও অ্যাকাউন্টের পাওয়ার অফ অ্যাটোর্নি আবুল বাশার। আর নমিনি পিয়ার উদ্দিন তাদেরকে চেনেন না। অথচ বিও অ্যাকাউন্টের নমিনির সঙ্গে সম্পর্ক উল্লেখ করেছেন চাচাতো ভাই।

পরে জানতে পারি- আবুল বাশার হচ্ছেন মাস্টার ফিডের কোম্পানি সচিব আর পিয়ার উদ্দিন হচ্ছেন কোম্পানি কর্মকর্তা। আমার সন্দেহ যখন আরও বাড়ে তখন উম্মে হাবিবাকে বলি- আপনি পাসপোর্ট এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে করে নিয়ে আসবেন। ডিএসইতে যেসব কাগজপত্র জমা দিয়েছেন তা দেবেন কিন্তু কিছু আনেনি, নিয়ে আসেনি।

তার প্রায় ২ মাস পর গত ১৬ জুলাই হঠাৎ করে মাস্টার ফিডের এমডি কবির হোসেন একজন নারীসহ ৪-৫ জন লোকসহ অফিসে আসেন। তিনি বলেন- ইনি উম্মে হাবিবা, উনাকে এনআইডির সঙ্গে ভেরিফাই করেন। তবে অন্য কোনো বিষয় জিজ্ঞেস করতে পারবেন না। আমি তার দাখিলকৃত বিও অ্যাকাউন্ট ডকুমেন্টসের উপরে প্রশ্ন করতেই তারা সবাই আমার উপর ক্ষেপে যায় এবং মারমুখী আচরণ করে এবং আমাকে হুমকি-ধামকি দিয়ে অফিস থেকে চলে যায়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ১৮ জুলাই মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি (যার নাম্বার ১০৯৭, তাং ১৮/০৭/২০২৩)।

লিখিত অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, কবির হোসেন ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের ব্যবহার এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ গুলিস্থানের হকারদেরকেও হার মানিয়েছে।

এ বিষয়ে কাউসার আল মামুন বলেন, আমার ২৯ বছরের পেশাগত জীবনে বহু কোম্পানির এমডি চেয়ারম্যান ডিরেক্টরদের সঙ্গে কথা হয়েছে। কিন্তু এমন নিম্নমানের ব্যবহারের এমডি কখনো দেখি নাই। এটা আমাদের পুঁজিবাজারের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়।

এ বিষয়ে মাস্টার ফিড এগ্রোটেক লিমিটেডের কবির হোসেন  বলেন, রফিকুল আলমের ডাক নাম তপু। তিনি উত্তরার বাসাতেই মারা গেছেন। সবাই তাকে তপু নামেই চেনেন। এজন্য হয়ত বাড়িওয়ালা চিনেন নাই। উনি যে মারা গেছেন তার সব কাগজপত্র কোম্পানিতে রয়েছে। তার কপি ডিএসই ও বিএইসিকে দিয়েছি।

রফিকুল আলম উম্মে হাবিবার দ্বিতীয় স্বামী বলেও জানান তিনি।

কবির বলেন, কোম্পানির পক্ষ থেকে মামুনের এমন হয়রানির কথা জানিয়ে আমি বিএসইসি ও ডিএসইর কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছি। আজকে লিখিত অভিযোগ করব। তার অভিযোগের জন্য আমাদের কোম্পানির সুনাম নষ্ট হয়েছে। আর পরিচালকের স্ত্রীর মর্যাদা হানি হয়েছে।

এ বিষয়ে উম্মে হাবিবা বলেন, রফিকুল আলম আমার স্বামী। আমার সঙ্গে উত্তরার বাসায় থাকতেন। ৪২ বছর বয়সে তিনি মারা যান। এখন আমি কাওলার বাসায় থাকি। আমাকে অযথা হয়রানি করা হচ্ছে।

কাউসার আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে- মাস্টার ফিডের একটি চক্র রফিকুল আলমকে মৃত দেখিয়ে তার শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নিচ্ছে। কারণ, রফিকুল আলম যে বাসায় ছিলেন উত্তরার সেই বাসার মালিক জানান এই নামের কেউ কখনো এখানে ছিলো না।

তিনি আরও বলেন, উম্মে হাবিবার পাসপোর্ট আর জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানার আলাদা। বিও হিসাবে পেশা লিখেছেন গৃহিণী আর জাতীয় পরিচয়পত্রে লিখেছেন ছাত্রী। পাসপোর্টে তার স্বামীর নাম একজন এখন দাবি করছেন আরেকজন। কোথাও মিলছে না। আমি সত্য উদঘাটনের চেষ্টা করায় আমাকে বিএসইসি ও ডিএসইর লোকজনকে দিয়েও হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে।

আমি সত্যি ঘটনা জানতে চেয়ে কমিশনের কাছে আবেদন করেছি, কমিশন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.