বিক্ষোভের নামে কোরআন পোড়ানো নিষিদ্ধের কথা ভাবছে ডেনমার্ক-সুইডেন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: প্রতিবাদ বা বিক্ষোভের নামে পবিত্র কোরআন বা অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থ পোড়ানোর মতো কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার কথা বিবেচনা করছে ডেনমার্ক। মূলত নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক উদ্বেগের কারণে এই এমন পদক্ষেপের কথা ভাবছে দেশটি।
এছাড়া একই পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে সুইডেনও। সোমবার (৩১ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক উদ্বেগের কারণে পবিত্র কোরআন বা অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থ পোড়ানোর মতো প্রতিবাদ বা বিক্ষোভে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে ডেনমার্ক।
ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই ধরনের বিক্ষোভ চরমপন্থিদের উপকার করে এবং নিরাপত্তা হুমকির সৃষ্টি করে। আর তাই দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভসহ কিছু পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে হস্তক্ষেপ করার আইনি উপায় খতিয়ে দেখছে কোপেনহেগেন।
এছাড়া সুইডেনের প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, তাদের দেশেও একই ধরনের প্রক্রিয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
বিবিসি বলছে, বিক্ষোভের নামে কোরআন পোড়ানোর মতো একাধিক বিতর্কিত প্রতিবাদ কর্মসূচির অনুমতি দেওয়ার পর স্ক্যান্ডিনেভিয়ান উভয় দেশই সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছে। এমনকি এই ঘটনার জেরে বেশ কয়েকটি মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের সাথে ডেনমার্ক ও সুইডেনের কূটনৈতিক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
এই পরিস্থিতিতে বিক্ষোভের নামে পবিত্র কোরআন বা অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থ পোড়ানোর মতো কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার কথা চিন্তা করছে ডেনমার্ক। এক বিবৃতিতে ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা এমন কিছু বিক্ষোভে হস্তক্ষেপ করতে চায় যেখানে ‘অন্যান্য দেশ, সংস্কৃতি ও ধর্মের অবমাননা করা হচ্ছে এবং যেখানে নিরাপত্তা উদ্বেগসহ ডেনমার্কের জন্য উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।’
কিন্তু ডেনমার্ক সরকার বাকস্বাধীনতাকে সমুন্নত রেখেছে যে কোনও পরিবর্তন অবশ্যই ‘সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত মত প্রকাশের স্বাধীনতার কাঠামোর মধ্যে করা উচিত বলে জোর দিয়েছে। এছাড়া এমন পদ্ধতিতে পরিবর্তন করতে হবে যা এই সত্যকে পরিবর্তন না করে যে, ডেনমার্কে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে’।
বিবিসি বলছে, ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বিশেষভাবে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে যে, এই ধরনের বিতর্কিত প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ ডেনমার্কের আন্তর্জাতিক খ্যাতির ওপর প্রভাব ফেলেছে। এসময় বিক্ষোভের নামে ধর্মীয় গ্রন্থ পোড়ানোর ঘটনায় ইতোপূর্বে সরকারের নিন্দা জানানোর ঘটনাও এখানে পুনরাবৃত্তি করা হয়।
এমনকি এই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এই ধরনের বিক্ষোভগুলো এমন একটি স্তরে পৌঁছে গেছে, যেখানে বিশ্বের বহু দেশ বা অংশে ডেনমার্ককে এমন ‘একটি দেশ হিসাবে দেখা হচ্ছে যা অন্যান্য দেশের সংস্কৃতি, ধর্ম ও ঐতিহ্যের অবমাননা করে এবং অবমাননার কাজেও সহায়তা করে’।
এদিকে পৃথক এক বিবৃতিতে সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন বলেছেন, ডেনমার্কের মতো সুইডেনেও ইতোমধ্যেই একই প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এই বিষয়ে তিনি ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেনের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন বলেও নিশ্চিত করেছেন ক্রিস্টারসন।
সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই (পবিত্র কোরআন বা অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থ পোড়ানো বন্ধ করতে) আইনি পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে শুরু করেছি… আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা এবং সুইডেন ও বিশ্বজুড়ে সুইডিশদের নিরাপত্তা জোরদার করার ব্যবস্থা বিবেচনা করার জন্য এটি করা হচ্ছে।’
বিবিসি বলছে, উভয় বিবৃতি এমন এক সময়ে দেওয়া হলো যখন সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বিক্ষোভের নামে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর মতো বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। গত জুন মাসে সুইডেনে বসবাসকারী একজন ইরাকি খ্রিস্টান উদ্বাস্তু স্টকহোমের কেন্দ্রীয় মসজিদের বাইরে পবিত্র কোরআনের একটি কপি আগুনে পুড়িয়ে দেয়।
এরপর ওই ব্যক্তিকে গত সপ্তাহে দ্বিতীয়বারের মতো কোরআন পোড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়। এর ফলে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে সুইডিশ দূতাবাসে বিক্ষোভকারীরা হামলা করে ও আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর সুইডেন বাগদাদ থেকে তার দূতাবাসের কর্মীদের সরিয়ে নেয়।
এরই ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে ডেনমার্কের উগ্র ডানপন্থি দু’জন ইসলাম বিদ্বেষী ব্যক্তি কোপেনহেগেনে ইরাকের দূতাবাসের বাইরে পবিত্র কোরআন অবমাননা করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। এর পাশেই মাটিতে ইরাকের পতাকা পড়ে ছিল।
এর সপ্তাহখানেক আগে ‘ড্যানিশ প্যাট্রিয়টস’ নামে উগ্র এই ডানপন্থি গোষ্ঠীর সদস্যরা ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করে একই ধরনের কাজ করেছিল।