লিন্ডের মুনাফায় ভাগ বসিয়েছে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি
শাহ আলম নূর : ব্যয়বহুল কাঁচামাল এবং উচ্চ পরিচালন ব্যয়ের কারণে চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে লিন্ডে বাংলাদেশের নিট মুনাফা ৪০ শতাংশ কমে ১৪ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
ডলার বরে দাম বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে রাজস্ব আহরন হ্রাস পাওয়াতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা আরও কঠিন হয়েছে।
রোববার প্রকাশিত অনিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুসারে, কোম্পানিটি আগের বছরের একই প্রান্তিকে ২৩ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছিল।
জুন প্রান্তিকে কোম্পানির বিক্রয় ব্যয় ৪.০ শতাংশ বেড়ে ৭১২ মিলিয়ন টাকায় এবং পরিচালন ব্যয় ৫০ শতাংশ বেড়ে ২২৫ মিলিয়ন টাকায় উন্নীত হয়েছে।
শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসা ও শিল্প গ্যাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটির অর্ধ বার্ষিকিতে মুনাফা ও চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন মাসে বছরে ৪৭ শতাংশের বেশি কমে ২৮ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।
কারন হিসেবে বলা হচ্ছে বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি এবং মার্কিন ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে কোম্পানিটির আয় কমেছে।
এই বছরের জুন থেকে ছয় মাসে কোম্পানির বিক্রয় আয় বছরে প্রায় ৬ শতাংশ কমে ২.৩৭ বিলিয়ন টাকায় নেমে এসেছে কারণ মহামারী হ্রাসের পর থেকে এর প্রধান পণ্য মেডিকেল অক্সিজেনের চাহিদা কমতে থাকে।
প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে ভাল ব্যবসা করেছিল। বিশেষত চিকিৎসায় শ্বাসকষ্ট মোকাবেলায় কোভিড রোগীদের সাহায্য করার জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজনিয়তা তখন বেড়েছিল।
তখন মেডিকেল অক্সিজেনের চাহিদা ২৫-৩০ টন থেকে বেড়ে ৭০-৭৫ টনে পৌঁছেছিল। ফলস্বরূপ চিকিৎসা সেবায় ২০২১ সালে ৫৪ শতাংশের বার্ষিক বৃদ্ধি রেকর্ড করেছে।
লিন্ডের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবসায় চিকিৎসা গ্যাস, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং চিকিৎসা সিলিন্ডার জড়িত।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মহামারী হ্রাস এবং কাঁচামালের দাম আকাশচুম্বী হওয়ার সাথে সাথে এই বিভাগ থেকে কোম্পানির আয় হ্রাস পেয়েছে।
এদিকে, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি এবং বিদ্যুত বিঘ্নিত হওয়ার কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে।
এদিকে বিক্রয় হ্রাস সত্ত্বেও, জানুয়ারি-জুন সময়ের মধ্যে কোম্পানির বিক্রয় ব্যয় বছরে প্রায় ৯ শতাংশ বেড়েছে ১.৫৭ বিলিয়ন টাকা।
লিন্ডে একই কারণে ২০২২ সালে ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন বার্ষিক মুনাফার কথা জানিয়েছেন।
কোম্পানিটি ২০২১ সালে বিনিয়োগকারেদের জন্য ৫৫০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল। ব্যবসা সঙ্কুচিত হওয়ায় ২০২২ সালের জন্য ৪২০ শতাংশে লভ্যাংশ প্রদান করেছে।
লিন্ডে বাংলাদেশ শিল্প ও চিকিৎসা গ্যাস, ওয়েল্ডিং সরঞ্জাম এবং পণ্যের পাশাপাশি অ্যানেস্থেসিয়া এবং আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম উত্পাদন এবং সরবরাহের সাথে জড়িত।
লিন্ডে বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ আয় আসে তার হার্ড গুডস ব্যবসা থেকে এবং বাকিটা আসে গ্যাস ও অন্যান্য সেগমেন্ট বিক্রি থেকে।
১৯৭৬ সালে তালিকাভুক্ত, লিন্ডে বাংলাদেশের শেয়ারের মূল্য গত বছরের অক্টোবর থেকে ১৩৯৭.৭০ টাকা ফ্লোর প্রাইসের মধ্যে পড়ে আছে।
লিন্ডে পিএলসি-এর একজন সদস্য বলেন, লিন্ডে অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে কাজ করে আসছে, এমনকি স্বাধীনতার আগেও, এবং তখন থেকেই তার ব্যবসা সম্প্রসারণ করে চলেছে।
বর্তমানে, লিন্ডে বাংলাদেশের দৈনিক ৮০ টন লিকুইড এয়ার সেপারেশন ইউনিট (এএসইউ) গ্যাস এবং বছরে ২৩,১০০ টন ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোড উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে।
এই সেক্টরে একটি অগ্রগামী বহুজাতিক কোম্পানিটির সারা দেশে ১৮ টি বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে এবং ৩৫০০০ এর বেশি গ্রাহক রয়েছে।