বিএনপির সুর নরম, এক দফারও বেলা শেষ: কাদের
নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, চার-পাঁচদিন ধরে দেখছি বিএনপির একটু নরম সুর। আমার কাছে মনে হচ্ছে, এক দফারও মনে হয় বেলা শেষ। দম ফুরিয়ে এসেছে। চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে। শুকিয়ে গেছে চোখ-মুখ।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে ‘বাংলার মাতা, বাংলাদেশের নেতা’ শীর্ষক ছাত্রী সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে রাজনীতিটা কেমন হয়ে গেছে। আদর্শ কোথায়? গণতন্ত্র কেথায়? মূল্যবোধ কোথায়? মানবাধিকার কোথায়? মনে মনে ভাবি আর অবাক হই। গতকাল সিএনএনের একটা রিপোর্ট দেখছিলাম। সেখানে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন অভিযোগ যত বাড়ছে, ততই তার পক্ষে জনমত বাড়ছে।
মানবাধিকার নিয়ে মার্কিনিদের কার্যক্রমের সমালোচনা করে সেতুমন্ত্রী বলেন, যারা মানবাধিকারের প্রবক্তা, যারা আমাদের গণতন্ত্রের শিক্ষা দেয়, ছবক দেয়; আমাদের গণতন্ত্র নিয়ে যারা সমালোচনা করে- সেই দেশের এই অবস্থা দেখে ব্যক্তিগতভাবে অসহায়বোধ করলাম। এটা দেখে আমি অবাকই হয়েছি। বিশ্ব রাজনীতিতে আজ যারা গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের মাতবর তাদের নিজেদের দেশে গণতন্ত্র আর মানবাধিকার কেমন আছে! তাদের দেশে মানবাধিকারের পতাকা ভূলুণ্ঠিত কেন? যারা আমাকে ছবক দেয় তারা ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারে না কেন? নাইজারের চলমান সংকটের কোনো সমাধান নেই, আমেরিকা আর ইউএন (জাতিসংঘ) কি পারছে সুদানের দুই প্রেসিডেন্টের কলহ বন্ধ করতে? দুষ্টু ছেলে ইসরায়েলকে তো কেউ কিছু বলেন না!
তিনি বলেন, আজ মার্কিন কিছু সিনেটর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আর জাতিসংঘের মহাসচিবকে চিঠি লিখেছেন যেন বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হয়। কিন্তু তাদের দেশের এই ধরনের ছবি আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়।
বিএনপিকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের একটা দলের পাঁচজন মানুষকে কানাডা আশ্রয় দেয়নি। কারণ তাদের দল সন্ত্রাসী দল। তাদের এই দল বৈধভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করতে চায়। মির্জা ফখরুল কি আদালতের এ রায় দেখেননি? তিনি যখন লাফালাফি করেন, বড় বড় কথা বলেন, বেপরোয়া হয়ে মিথ্যাচার করেন, তখন তার দল সম্পর্কে পরপর পাঁচবার কানাডার আদালতের যে মন্তব্য- এই মন্তব্য কি তিনি উপলব্ধি করেন না? যদি করতেন তাহলে কি এমন হতো?
তিনি বলেন, এ বছর পৃথিবীর ২২ দেশে নির্বাচন হবে। বাংলাদেশ কী এমন অপরাধী দেশ যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা আর জাতিসংঘ ঘুরে ঘুরে সবাই শুধু বাংলাদেশে আসে। আমরা কি বিপদে আছি? ঘুরে ফিরে সবাই শুধু এখানে আসে। নাইজারের খবরই নেই। সোমালিয়া, সুদান বা কঙ্গোর খবরই নেই। এসব নিয়ে কার কী মাথাব্যথা।
ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এখন সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট হচ্ছে। নতুন প্রস্তাবনা এখনো আসেনি। কিন্তু এই সরকার জনগণের সরকার। বিবেকের সরকার। আমরা একটা কাজ করবো। এরপর এই সিদ্ধান্তটা সঠিক না বেঠিক সেটি আমি জনগণের কাছে শুনবো। সেখানে যদি কোনো কারেকশনের প্রয়োজন হয় সেটি আমি করে দেবো। এটাই জনগণের সরকার, এটাই শেখ হাসিনার সরকার। এ নিয়ে আবার তুচ্ছতাচ্ছিল্য শুরু করেছে! সাইবার অপরাধীদেরও মুক্ত করতে চান? ঢালাওভাবে এই আইনের অপপ্রয়োগ যেন না হয় সেজন্য নতুন করে রিকাস্ট হচ্ছে।
ভারতে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সফর নিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশ থেকে নিয়ম অনুযায়ী ওরা (ভারত) আসলে আমরা যাই। চীনের সঙ্গেও এটা হয়েছে। এবার ভারতেও গেছে আমাদের প্রতিনিধি দল। আমাদের পক্ষ থেকে এটা নিয়ম আছে যে, প্রতিনিধি তাদেরও আসবে, আমাদেরও যাবে। করোনার কারণে আমরা নিয়মটা দেরিতে পালন করছি। ভারতে প্রতিনিধি যাওয়ার পর বিএনপি নেতাদের চোখে মুখে সারারাত দুঃচিন্তায় ঘুম নেই। আওয়ামী লীগ ভারতে গিয়ে আবার কী করছে সেই চিন্তা করে তাদের ঘুম নেই।
তিনি বলেন, ভারত আমাদের বন্ধু। বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে, প্রভু নেই। কোনো বন্ধু আমাদের ক্ষমতায় বসাবে না, ক্ষমতায় বসাবে দেশের জনগণ। জনগণের সঙ্গে আমরা আছি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। এতে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের সহস্রাধিক নারী নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।