তালিকাভুক্ত সেরা কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় মন্দা
নিজস্ব প্রতিবেদক : তালিকাভুক্ত সেরা কোম্পানিগুলোর ব্যবসায় বেশ মন্দা সময় পার করছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে অন্তত ১৪ টি তালিকাভুক্ত কোম্পানি লোকসান করেছে। কিন্তু এসব কোম্পানি আগের বছরের একই সময়ে বেশ বড় অংকের লাভ করেছিল।
বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতা এবং বৈশ্বিক অস্থিরতার কারনে এসব কোম্পানির আয় হ্রাস পেয়েছে। এতে তাদের ব্যবসা ব্যাপক ভাবে হ্রাস পেয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের প্রতিকূলতার কারণে বিক্রি হ্রাসের পাওয়ায় আয়ের উপর প্রভাব পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
যে সব কোম্পানির আয় হ্রাস পেয়েছে এদের মধ্যে সাতটি প্রকৌশল খাতের, তিনটি বিদ্যুৎ খাতের, দুটি ট্যানারির, একটি ওষুধ খাতের এবং বাকিগুলো ভ্রমণ খাতের।
ক্ষতিগ্রস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে এসিআই লিমিটেড, রানার অটোমোবাইলস, ইফাদ অটোস, জিপিএইচ ইস্পাত, বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম, গোল্ডেন সন, কাসেম ইন্ডাস্ট্রিজ, ইয়াকিন পলিমার, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি, এপেক্স ট্যানারি এবং লিগ্যাসি ফুটওয়্যার লিমিটেড।
এসিআই লিমিটেড, একটি স্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। ২০২৩ অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে ১১ কোটি টাকার বেশি লোকসানের কথা জানিয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ৪৩ কোটি টাকা লাভ করতে সক্ষম হয়েছে।
কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ের জন্য ১.৪৫ টাকা ঋণাত্মক ছিল যা এক বছর আগের একই সময়ের জন্য ৫.৬৭ টাকা ছিল।
প্রধানত মুদ্রা বিনিময়ের অস্থিরতা, জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি এবং উচ্চ আমদানি ব্যয়ের কারণে উৎপাদন খরচের বিস্ময়কর ভাবে বৃদ্ধি, স্ফীতিকৃত অর্থায়ন খরচের সাথে মিলিত হওয়ার কারণে, তার আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে সামগ্রিক ভাবে লাভ কম হয়েছে।
এদিকে, কোম্পানিটি গত অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ১.৪৫ টাকা শেয়ার প্রতি লোকসানের কথা জানিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি ফার্মাসিউটিক্যালস, ভোগ্যপণ্য এবং পশুর স্বাস্থ্যসেবা পণ্যের উৎদন এবং সার, বীজ এবং অন্যান্য কৃষি সামগ্রীর বাজারজাতকরণে নিযুক্ত রয়েছে।
এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেড, বা স্বপ্ন, সুপারমার্কেট ব্র্যান্ডের একটি চেইন এবং এসিআই লিমিটেডের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। স্বপ্ন হল বাংলাদেশের বৃহত্তম খুচরা চেইন।
রানার অটোমোবাইলস, একটি স্থানীয় যানবাহন নির্মাতা, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ের মধ্যে ৪৮ কোটি টাকা নিট লোকসান করেছে।
রানার চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) শানত দত্ত বলেন, পণ্যের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং জ্বালানি খরচের কারণে, অনেক ক্রেতা তাদের ক্রয় পরিকল্পনা বাতিল করে দেয়ায় প্রতিষ্ঠানের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
রানার থ্রি-হুইলার ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট রয়েছে, যা এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে চালু হয়েছে। বাজাজ-ব্র্যান্ডের থ্রি-হুইলারগুলি দামের সুবিধার সাথে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার কারণে এটিকে বিক্রয় বাড়াতে সাহায্য করেছে।
এদিকে, বাংলাদেশে ভারতীয় অশোক লেল্যান্ডের একমাত্র পরিবেশক ইফাদ অটোস। উচ্চ রাজস্ব থাকা সত্ত্বেও ২০২৩ অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে ৮ কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
কোম্পানির একজন কর্মকর্তা বলেন, আগের অর্থবছরের তুলনায় বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষতি ১৩ গুণ বেড়েছে এবং এর মুনাফা হ্রাস পেয়েছে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার নজিরবিহীন অবমূল্যায়নই ছিল ওই লোকসানের কারণ।
শিল্প বিদ্যুৎ সরবরাহের অভাব এবং মার্কিন ডলারের প্রতিকূল মূল্যের কারণে, ইস্পাত প্রস্তুতকারক জিপিএইচ ইস্পাত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ৩১.১৩ কোটি টাকার লোকসান করেছে, যদিও এর নয় মাসের আয় ২৫ শতাংশ বেড়েছে।
এই ব্যাপক ক্ষতির বিপরীতে ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ের মধ্যে কোম্পানিটির নিট মুনাফা ছিল ১৫৬ কোটি টাকা।
যদিও ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ের মধ্যে ইস্পাত প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠািটি লোকশনের কথা জানিয়েছে। কোম্পানির অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে এই সময়ের মধ্যে কোম্পানির আয় ২৫ শতাংশ বেড়ে ৪৪১০ কোটি টাকা হয়েছে। অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে কোম্পানির আয় ছিল ৩,৫২৭ কোটি টাকা।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ মাসে পেনিনসুলা চিটাগংয়ের নিট লোকসান ৩.৩৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, প্রধানত উচ্চ বিক্রয় ব্যয়ের কারণে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে কোম্পানিটি মুনাফা করেছিল ৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
অ্যাপেক্স ট্যানারি লিমিটেড ১০০ শতাংশ রপ্তানিমুখী চামড়া প্রক্রিয়াকরণ এবং ফিনিশিং কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৩ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে ৮.২২ কোটি টাকা লোকসানের কথা জানিয়েছে।
কোম্পানিটি বলেছে যে বিক্রয় হ্রাস, রাসায়নিক খরচ বৃদ্ধি, সেইসাথে নির্দিষ্ট কারখানার ওভারহেড এবং বিক্রয় প্রচারমূলক ব্যয়ের কারণে তার মুনাফা হ্রাস পেয়েছে।
লিগ্যাসি ফুটওয়্যার আগের বছরের একই সময়ে ৭.৮৪ লাখ টাকার মুনাফার তুলনায় ২০২৩ অর্থ বছরের জুলাই-মার্চ সময়ের মধ্যে ১.১৭ কোটি টাকা লোকসান করেছে।
গোল্ডেন সন লিমিটেড, আরেকটি তালিকাভুক্ত কোম্পানি, অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ৯.৬ কোটি টাকা লোকসান করেছে, যা এক বছর আগের একই সময়ে ৭.৮ কোটি টাকা লাভের তুলনায়।
ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি গত বছরের একই সময়ের জন্য ০.৫৬ টাকার ইপিএসের বিপরীতে ২০২৩ অর্থ বছরের জুলাই-মার্চ সময়ের জন্য শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ৩.৪৪ টাকা নেতিবাচক প্রতিবেদন করেছে।
২০২২-২৩ সালের প্রথম নয় মাসে বাংলাদেশের পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি, এক বছর আগের একই সময়ের জন্য ৩.৯২ টাকার ইপিএসের বিপরীতে শেয়ার প্রতি আয় ৪.৬৬ টাকা নেতিবাচক প্রতিবেদন করেছে।
বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেড ২০২৩ অথ বছরের প্রথম নয় মাসে ১৮.১৬ কোটি টাকা লোকসান করেছে, যা ২০২২ সালের একই সময়ে ৫৪.৬৬ কোটি টাকা লাভ করেছে।
অন্যান্য লোকসানকারীদের মধ্যে, বাংলাদেশ থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেড ৫.১১ কোটি টাকা লোকসান করেছে।