ডিএসই’র শোকজ
তথ্য গোপন করে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ার ইস্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক : শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পর এখন লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের বিরুদ্ধে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য গোপন করে সাধারণ শেয়ার ইস্যুর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। প্রতিটি ১০ টাকা করে ৩ কোটি সাধারণ শেয়ার ইস্যু করেছে চামড়া খাতের এ কোম্পানিটি। তিনজন উদ্যোক্তা ও পরিচালক এবং ১৪ জন শেয়ারহোল্ডারের কাছে এ শেয়ার ইস্যু করা হয়েছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে অনুমোদন নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এ শেয়ার ইস্যু করলেও তার মূল্য সংবেদনশীল তথ্য বা পিএসআই প্রকাশ করা হয়নি। এ কারণে কোম্পানিটির কাছে ব্যাখা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানো নোটিশ পাঠিয়েছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ।
এর আগে গত ১১ এপ্রিল ডিএসইর মাধ্যমে লিগ্যাসি ফুটওয়্যার জানায়, পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর জন্য কোম্পানিটি ৩ কোটি সাধারণ শেয়ার ১০ টাকা করে ইস্যু করবে। বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের কাছে এ শেয়ার ইস্যু করা হবে।
এ তথ্য উল্লেখ করে ডিএসইর কারণ দর্শানো নোটিশে জানতে চাওয়া হওয়ছে, কেন মাত্র তিনজন উদ্যোক্তা বা পরিচালকের কাছে শেয়ার ইস্যু করা হয়েছে এবং এ সংক্রান্ত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য কেন জানানো হয়নি?
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) ডিএসই থেকে এ কারণ দর্শানো নোটিশের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
লিগ্যাসি ফুটওয়্যার কার কাছে কত শেয়ার ইস্যু করেছে তার তথ্যও প্রকাশ করেছে ডিএসই। ডিএসইর তথ্যানুযায়ী, রিভারস্টনের কাছে ১৯ লাখ ২৪ হাজার, কাজী রাফি আহমেদের কাছে ৮ লাখ ৯৯ হাজার ৪৬২টি, এসএসআরএ ইকুইটিজের কাছে ১৭ লাখ ২৫ হাজার, এমকে ফুটওয়্যারের কাছে ১৭ লাখ ২৫ হাজার, কাজী আজিজ আহমেদের কাছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার, এনএএসসিএফএস ইকুইটিজের কাছে ৮১ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার ইস্যু করা হবে।
এছাড়া কাজী নাফিজ আহমেদের কাছে ৪ লাখ ২৯ হাজার ৫৩৮টি, আহমেদ ফারাবি চৌধুরীর কাছে ২০ লাখ, নিরদ বরুয়া’র কাছে ৮ লাখ ৮০ হাজার, এসএএম ইক্যুইটিজের কাছে ১৭ লাখ ২৫ হাজার, হায়াত ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কাছে ১৭ লাখ ৫০ হাজার, সি পার্ল বিচ রিসোর্টের কাছে ৫ লাখ ৪৫ হাজার, এম/এস হাবিব এন্টারপ্রাইজের কাছে ১৭ লাখ ৫০ হাজার, শিরিন্তা সাবিন চৌধুরীর কাছে ৯ লাখ ৫০ হাজার, টিএস ইক্যুইটির কাছে ২২ লাখ ৫০ হাজার, মো. আমিনুল হকের কাছে ৮ লাখ ৪০ হাজার এবং এম/এস লামিয়া এন্টারপ্রাইজের কাছে ১৯ লাখ ২৪ হাজার ইস্যু করা হবে। এ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭ সেপ্টেম্বর।
ডিএসইর এ কারণ দর্শানো নোটিশ এবং তথ্য গোপন করে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের সাধারণ শেয়ার ইস্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, কখন মূল্য সংবেদশীল তথ্য প্রকাশ করার দরকার ছিল এবং কোম্পানিটি কখন প্রকাশ করেছে তা আমরা খতিয়ে দেখবো। ডিএসইতে থেকে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হলে এবং কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিএসইর কারণ দর্শানো নোটিশের বিষয়ে জানতে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের কোম্পানি সচিব মো. আবদুল বাতেন ভূঁইয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে ডিএসই থেকে কারণ দর্শানো সংক্রান্ত নোটিশ প্রকাশ হওযার পর মঙ্গলবার লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ার দামে পতন হয়েছে। কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার দাম ৩ টাকা বা ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ কমেছে। অবশ্য এর আগে কয়েক দফা কোম্পানিটির শেয়ার দামে উত্থান-পতন হয়।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ১ মার্চ লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৩৯ টাকা। সেখান থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বেড়ে ১০ এপ্রিল প্রতিটি শেয়ারের দাম ৯৭ টাকা ৭০ পয়সায় ওঠে। এরপর কিছুটা মূল্য সংশোধন হয়ে ৬৫ টাকা ৯০ পয়সায় নেমে আসে। এ মূল্য সংশোধনের পর আবার হু হু করে বাড়তে থাকে কোম্পানিটির শেয়ার দাম। এতে দেখতে দেখতে প্রতিটি শেয়ারের দাম ১০০ টাকায় উঠে যায়।
এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষের কাছে কয়েক দফায় নোটিশ পাঠায় ডিএসই কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গত ২৩ মে ডিএসই থেকে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে সতর্কা বার্তা প্রকাশ করা হয়। ওই সতর্ক বার্তায় বলা হয়- লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটি কর্তৃপক্ষকে নোটিশ করা হয়। জবাবে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে- সম্প্রতি শেয়ারের যে দাম বেড়েছে এবং লেনদেন বেড়েছে তার পেছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।
ডিএসই থেকে যখন এ সতর্ক বার্তা প্রকাশ করা হয়, সে সময় লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৯০ টাকা ৩০ পয়স। এরপর দাম বাড়ার প্রবণতা আরও বেড়ে ৬ আগস্ট প্রতিটি শেয়ারের দাম ১৩৬ টাকা ৫০ পয়সায় ওঠে।
এরপর আবার কিছুটা মূল্য সংশোধন হয়। ১৬ আগস্ট প্রতিটি শেয়ারের দাম ১০১ টাকা ৫ পয়সায় নেমে আসে। এরপর আবার দাম বাড়তে দেখা যায়। ৫ সেপ্টেম্বর লেনদেন শেষে প্রতিটি শেয়ারের দাম ১২৬ টাকা ৮০ পয়সায় দাঁড়ায়।
শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি ২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২০২২ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। তার আগে ২০২০ সালে কোম্পানিটি কোনো লভ্যাংশ দেয়নি।
অন্যদিকে, ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথম নয় মাসের ব্যবসায় কোম্পানিটি লোকসান করেছে। ২০২২ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৯০ পয়সা।
১৩ কোটি ৮ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮০টি। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৪৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ শেয়ার আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ২০ দশমিক ৯৮ শতাংশ।