মাসের ব্যবধানে মোবাইলে লেনদেন কমেছে ৩৪ হাজার কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক : মানুষের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মোবাইল ব্যাংকিং। কারণ এই মাধ্যমে খুব সহজেই আর্থিক সেবা আদান-প্রদান করা যায়। হঠাৎ মোবাইলে আর্থিক সেবার (এমএফএস) লেনদেন নিম্নমুখী ধারায় চলে গেছে। এক মাসের ব্যবধানে বিকাশ, নগদ ও রকেটের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেনদেন প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা কমে গেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের মাসে সবসময় লেনদেন বাড়ে। এ কারণে ঈদ পরবর্তী মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেন কিছুটা কম হয় এটাই স্বাভাবিক। কারণ উৎসবকে কেন্দ্র করে দুই মাস মোবাইলের মাধ্যমে প্রচুর কেনাকাটা করেন গ্রাহক।
বাড়তি কোনো টাকা ছাড়াই ঘরে বসে খোলা যায় হিসাব। শহর কিংবা গ্রামে নিমেষেই পাঠানো যায় অর্থ। কেনাকাটা, বিল পরিশোধ, ঋণ গ্রহণসহ যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন নানা পরিষেবা। বিদেশ থেকে আসছে রেমিট্যান্স। হাতের মুঠোতে মিলছে সেবা। ফলে বিকাশ, রকেট, নগদের মতো এমএফএস ওপর মানুষের আগ্রহের পাশাপাশি বাড়ছে নির্ভরশীলতা। বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যাও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গেছে, বিকাশ, রকেট, নগদের মতো মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় চলতি বছরের জুলাই মাসে ৯৮ হাজার ৩০৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। যা তার আগের মাস জুনের চেয়ে ৩৩ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। জুনে কোরবানির ঈদের মাসে লেনদেন হয়েছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা। এই অঙ্ক এযাবতকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড লেনদেন। এর আগে একক মাসে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছিল চলতি বছরের এপ্রিলে প্রায় ১ লাখ ২৪ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের সঙ্গে দিনদিন বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা। বর্তমানে বিকাশ, রকেটের, ইউক্যাশ, মাই ক্যাশ, শিওর ক্যাশসহ নানা নামে ১৩টির মতো ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান এমএফএস সেবা দিচ্ছে। ২০২৩ সালের জুলাই মাস শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ কোটি ৯৫ লাখ ৬৯৮ হাজার জন। গ্রাহক বেশি হওয়ার কারণ অনেক গ্রাহক একাধিক সিম ব্যবহার করছে। লেনদেনের সুবিধার্থে একাধিক সিমের হিসাব খুলছে।
নিবন্ধিত এসব হিসাবের মধ্যে পুরুষ গ্রাহক ১২ কোটি ১২ লাখ ৪০ হাজার ৭২ ও নারী ৮ কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার ৭৯৫ জন। আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ১ হাজার ৪৪৫টি, যা জুন মাসে ছিল ১৫ লাখ ৮৫ হাজার ৭২২টি।
এখন গ্রাহক ঘরে বসেই ডিজিটাল কেওয়াইসি (গ্রাহক সম্পর্কিত তথ্য) ফরম পূরণ করে সহজেই এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে হিসাব খুলতে পারছেন। ফলে গ্রাহক হওয়ার যে ঝামেলা মুক্তভাবে হিসাব খুলতে পারছেন।
২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের যাত্রা শুরু হয়। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সিংহভাগই বিকাশের দখলে। এরপর ‘নগদ’-এর অবস্থান।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া এখন গাড়িচালক, নিরাপত্তাকর্মী ও গৃহপরিচারিকাদের বেতনও এখন দেয়া হচ্ছে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো সেবা মাধ্যম ব্যবহার করে।
পোশাকখাতসহ শ্রমজীবীরা এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন। যার ফলে দিনে দিনে নগদ টাকার লেনদেন কমে আসছে। এই প্রবণতা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
মোবাইলে আর্থিক সেবায় (এমএফএস) জুলাই মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে পাঠানো হয়েছে ৩০ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা আর উত্তোলন হয়েছে ২৭ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। এসময় ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে ২৭ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় এক হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। এছাড়া বিভিন্ন পরিষেবার ২ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয় এবং কেনাকাটায় ৪ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়।