খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে হলে আবার জেলে যেতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়ে আসছেন দলটির নেতাকর্মীরা। সে প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদেশে চিকিৎসা নিতে হলে খালেদা জিয়াকে আবারও জেলে যেতে হবে এবং আদালতের অনুমতি নিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকার শতরূপা বড়ুয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন এসব কথা।
সাক্ষাৎকারের শতরূপা বড়ুয়া প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতির খবর আমরা পাচ্ছি। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি আপনারা কি পুনর্বিবেচনা করবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জিজ্ঞেস করি, পৃথিবীর কোন দেশে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে পেরেছে? পৃথিবীর কোনো দেশ দেবে?
‘তাদেরকে যদি চাইতে হয় তাহলে আবার আদালতে যেতে হবে। আদালতের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। এখানে আদালতের কাজের ওপর আমাদের হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই,’ বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘তবে হ্যাঁ, যেটুকু করতে পেরেছি তার জন্য সেটা হচ্ছে যে, আমার যেটুকু সরকার হিসেবে ক্ষমতা আছে—তার সাজাটা স্থগিত করে তাকে বাড়িতে থাকার পারমিশন দেওয়া হয়েছে এবং তার চিকিৎসার ব্যবস্থা; সে নিজেই চিকিৎসা নিচ্ছে এখন। বাংলাদেশের সব থেকে দামি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আর যদি তাদের যেতে হয় বাইরে; এখন যে আমি বাসায় থাকার পারমিশনটা দিয়েছি এটা আমাকে উইড্রো করতে হবে। তাকে আবার জেলে যেতে হবে এবং কোর্টে যেতে হবে। কোর্টের কাছে আবেদন করতে হবে। কোর্ট যদি রায় দেয়, তখন সে যেতে পারবে। এটা হলো বাস্তবতা।’
শতরূপা বড়ুয়া প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশে অবাধ-সুষ্ঠু-নির্বাচন, মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে নিয়মিত তাগিদ দিয়ে আসছিল। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ভিসানীতি কার্যকরে প্রথম পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছে। ২০২১ সালে র্যাবের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল তা এখনো বহাল আছে। এ ইস্যুগুলো অ্যাড্রেস করাসহ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা নিয়ে আপনারা কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার এটাই প্রশ্ন যে হঠাৎ কথা নেই, বার্তা নেই তারা আমাদের ওপর ভিসা স্যাংশনস দিতে চাচ্ছে কী কারণে? মানবাধিকারের কথা যদি বলেন বা ভোটের অধিকারের কথা যদি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ, আমরাই তো এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করেছি। আমাদের কত মানুষ রক্ত দিয়েছে এই ভোটের অধিকার আদায় করার জন্য। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে হয়, সেজন্য যত রকম সংস্কার দরকার, সেটা আমরাই তো করেছি। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ছবিসহ ভোটারতালিকা, মানুষকে ভোটের অধিকার নিয়ে সচেতন করার কাজ-তো আমরাই করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার ভোট আমি দেবো-যাকে খুশি তাকে দেবো, এ স্লোগান তো আমারই দেওয়া। আমি এভাবে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছি। … সেক্ষেত্রে হঠাৎ এ ধরনের একটা স্যাংশনস দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না।
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তিনি বলেন, আমার কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, র্যাব হোক, পুলিশ হোক বা যেটাই হোক, কেউ যদি কোনো রকম অন্যায় করে আামদের দেশে কিন্তু তার বিচার হয়। এ বিচারে কেউ কিন্তু রেহাই পায় না। অনেক সময় কোনো কাজ তারা অতিরিক্ত করে, করলে সেটা আমাদের দেশের আইনেই কিন্তু বিচার হচ্ছে। যেখানে এরকম বিচার হচ্ছে, সেখানে এ স্যাংশন কী কারণে?
ওই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হবে এটা আমাদেরই দাবি ছিল। আন্দোলন করে আমরাই সেটা প্রতিষ্ঠিত করেছি। আজকে এখন তারা স্যাংশনস দিচ্ছে, আরও স্যাংশনস দেবে। দিতে পারে। এটা তাদের ইচ্ছা। আমাদের দেশের মানুষের যে অধিকার, সব মৌলিক অধিকারগুলো আমরা নিশ্চিত করেছি। মানুষের সব রকমের মৌলিক অধিকার আমরাই নিশ্চিত করেছি। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল, বাংলাদেশ কিন্তু বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের নানান রকম উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে এভাবে স্যাংশনস দিয়ে একটা মানুষকে ভয়ভীতি দেওয়া… ঠিক আছে। আমেরিকা যদি স্যাংশনস দেয়, আমেরিকায় আসতে পারবে না, আসবে না। না আসলে কী আসে যাবে … আমরা দেখি কী করে তারা। কেন তাদের এ স্যাংশনস, জানি না।