আজ: বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ইং, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

সর্বশেষ আপডেট:

১৬ অক্টোবর ২০২৩, সোমবার |

kidarkar

সাত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর বার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের ব্যাংকবহির্ভূত ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭টি প্রতিষ্ঠান অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে মূলধন সংরক্ষণসহ খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে কঠোর বার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সমস্যা সমাধানে পরিকল্পনা দ্রুত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিতে বলা হয়েছে।

রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সাত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এই বার্তা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্বাহী পরিচালক, পরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকশেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নে দ্রুত পরিকল্পনা চাওয়া হয়েছে। যাতে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই মূলধন ঘাটতি ও খেলাপি ঋণ কমে আসে।

তিনি বলেন, সাতটি প্রতিষ্ঠানকে নিজ নিজ কোম্পানির মূলধন সংরক্ষণ পরিকল্পনা জমা দেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়। খুব শিগগিরই বাকি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই নির্দেশনার আওতায় নিয়ে আনা হবে। যদিও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মূলধন সংকট নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘একেকটি প্রতিষ্ঠানের সমস্যা এক এক রকমের। তাই সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা তাদের কাছ থেকে আসা উচিত। তবেই সঠিক সমাধান পাওয়া যাবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দৃশ্যমান উন্নতি দেখতে চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।’

এর আগে ২৭ আগস্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এমডিদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সভায় জানানো হয়, দেশের ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫টিতে খেলাপি ঋণ ৩২ শতাংশের বেশি।

এই পরিস্থিতিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়াকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের নির্দেশ দেয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ-জুন এই ৩ মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৯৬ কোটি টাকা বা প্রায় ৩ শতাংশ বেড়েছে। এখাতে জুন শেষে মোট খেলাপি ঋণের অঙ্ক বেড়ে দাঁড়ায় ১৯ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ২৭.৬৫ শতাংশ। মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপির অঙ্ক ছিল ১৭ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৫ শতাংশ।

খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, আর্থিক খাতের বহুল আলোচিত ব্যক্তি প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যে অনিয়ম করেছেন, এখন তার জের টানছে পুরো খাত। পিকে হালদারের মালিকানা আছে বা ছিল, এমন কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি।

পাশাপাশি এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও খেলাপি ঋণ বাড়ছে, যে কারণে সার্বিকভাবে এখাতে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে।

যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ ৮০ শতাংশের বেশি, সেগুলো হলো-পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড ও ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

এর মধ্যে প্রথম চারটি প্রতিষ্ঠানে মালিকানা আছে পিকে হালদারের। আবার এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ টাকা তিনি নামে-বেনামে তুলে নিয়েছেন, যা এখন খেলাপি হয়ে পড়েছে।

বিশ্লেষকরা জানান, বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। তাই ব্যাংকের খেলাপি বেড়ে গেলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও খেলাপি বাড়ে। দেখা দেয় বিভিন্ন সংকট।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.