পূর্ণ মেয়াদি গ্রাহকদের টাকা দিচ্ছে না প্রগ্রেসিভ লাই ইনসিওরেন্স
নিজস্ব প্রতিবেদক: মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরেও নওগাঁয় গ্রাহকদের টাকা ফেরত না দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে বীমা কোম্পানি ‘প্রগ্রেসিভ লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’ এর বিরুদ্ধে। শহরের হোটেলপট্টি এলাকায় অবস্থিত ওই প্রতিষ্ঠানে দিনের পর দিন ধর্ণা দিয়েও পাওনা টাকা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে বীমাকারী বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষদের। জমাকৃত টাকা নিয়ে যেকোনো মুহূর্তে প্রতিষ্ঠানটি উধাও হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গ্রাহকরা। এ অবস্থায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
ভুক্তভোগী সূত্রে যায়, নওগাঁ শহরের হোটেলপট্টি এলাকার আমিন মার্কেটের তৃতীয় তলায় ২০১৪ সালে নিজেদের বীমা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচয় দিয়ে যাত্রা শুরু করে ‘প্রগ্রেসিভ লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’। যেখানে ভবিষ্যৎ জীবনের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বীমা করেন শত শত গ্রাহক। যারা বীমা করেছিলেন তাদের অনেকেরই মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে। কারও আবার মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পথে। এদিকে মেয়াদপূর্ণ হওয়া গ্রাহকরা তাদের পাওনা টাকা চাইতে গেলেই বাধছে বিপত্তি। প্রায় দেড় বছর যাবৎ প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গ্রাহকদের সঙ্গে মেতেছেন বহু টালবাহানায়। অফিসে গেলে টাকা না দিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছেন তারা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বীমাকারী প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকরা।
প্রায় দেড় বছর যাবত প্রতিষ্ঠানটিতে পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন জেলার রানীনগর উপজেলার হরিশপুর গ্রামের কৃষক সাজেদুল ইসলাম। ভুক্তভোগী সাজেদুল ইসলাম বলেন, ভবিষ্যৎ জীবন সুরক্ষিত রাখার স্বার্থে এই কোম্পানিতে বীমা করেছিলাম। ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর বীমার মেয়াদ শেষ হলে অসংখ্যবার তাদের অফিসে পাওনা টাকা চাইতে গেছি। যতবারই গেছি তারা পরে আসতে বলে। এখন মাঝেমধ্যে ওই অফিস তালাবদ্ধ রাখা হচ্ছে। বছরে ১০ হাজার ৩৭৩ টাকা হিসেবে ১২ বছর মেয়াদি বীমা করেছি। যেখানে আমার প্রায় এক লাখ ২৪ হাজার টাকার মতো জমা হয়েছে। এখন সেই টাকা আদৌ ফেরত পাবো কি না? সেই দুঃশ্চিন্তায় সময় পার করছি। তারা পালিয়ে গেলে আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে।
আরেক ভুক্তভোগী নওগাঁ শহরের চকদৌলত মল্লার বাসিন্দা শাহাজান বাদশাহ বলেন, মা সাজেদা বেগমের নামে বছরে ৪ হাজার ৪৫০ টাকা হিসেবে ১২ বছরের বীমা করা আছে। মেয়াদ পূরণ হয়েছে ২০২৩ সালের মে মাসে। প্রায় ৫৫ হাজার টাকা জমা হয়েছে। জমাকৃত টাকা পাওয়ার জন্য ব্যাংকে হিসাব খুলতে বলা হয়েছিল। একটি ব্যাংকে হিসাব খুলে হিসাব নম্বরটি বীমা অফিসে দেওয়া হয়। আজ নয়, কাল বলে মাসের পর মাস ঘুরতে হচ্ছে। অফিস থেকে বলা হচ্ছে টাকা নাই এখন দেওয়া যাবে না। আরও কিছুদিন পরে আসেন। তাদের গতিবিধি দেখে মনে হচ্ছে যেকোনো মুহূর্তে এরা অফিসে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যাবে। বীমা প্রতিষ্ঠানের নামে এসব প্রতারকদের আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
প্রগ্রেসিভ লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের হিসাবরক্ষক রাহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, করোনা ভাইরাসের আগে গ্রাহকদের টাকা দিতে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে করোনা পরবর্তী সময়ে আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ঘুরো দাঁড়ানো চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। এরপর থেকেই কিছু সমস্যা হচ্ছে। সমস্যা উত্তোরণে আমাদের কিছুটা সুযোগ দিতে হবে।
মনিরুল ইসলাম শামীম নামে স্থানীয় এক সমাজকর্মী বলেন, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এর অফিসের বাইরে টানিয়ে রাখা ব্যানারে প্রগ্রেসিভ লাইভ ইনসিওরেন্স কোং লিঃ লেখা আছে। অর্থাৎ দুটোর নামের সঙ্গে মিল নেই। আবার এখানে ইন্সুরেন্স ব্যানানেও ভুল রয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায় এটি কতটা মানহীন কোম্পানি। সেখানে টাকা রেখে আজ বিপদের মুখে শত শত মানুষ। প্রশাসনের উচিত এসব মানহীন প্রতারক কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।
প্রগ্রেসিভ লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানি লিমিটেড নওগাঁ সার্ভিসিং সেলের সহকারী পরিচালক (এএমডি) রহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, এ অফিসের অধীনে প্রায় পাঁচ শতাধিক গ্রাহক রয়েছে। বর্তমানে কোম্পানি কোনো ফান্ড (অর্থ) দিচ্ছে না। ফান্ড পেলে দ্রুত গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করা হবে। তবে অফিস পালিয়ে যাওয়ার কোনো ভয় নেই। করোনাভাইরাসের পর থেকে অর্থনেতিকভাবে কিছুটা সংকটে আছি। তাই ভালো সেবা দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। যেসব গ্রাহকদের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে তাদের বিষয়ে অফিসকে অবগত করা আছে। ফান্ড না পাওয়া পর্যন্ত টাকাগুলো পরিশোধ করা সম্ভব নয়।
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস.এম রবিন শীষ গণমাধ্যমকে বলেন, বীমার মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ না করে হয়রানি করার সুযোগ নেই। ওই বীমা কোম্পানির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখবো। প্রতারণার প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থ্যা নেওয়া হবে।